সুদানের জন্য সাড়ে একত্রিশ কোটি ডলারের নতুন সহায়তার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের

ফাইল - অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত নারীরা গাদারেফের একটি শিবিরে সহায়তা সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। ( ১২ মে, ২০২৪)

শুক্রবার সুদানে অতিরিক্ত মানবিক সহায়তার জন্য সাড়ে একত্রিশ কোটি ডলারেরও বেশি প্রদানের ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির অভ্যন্তরে প্রতিদ্বন্দ্বী জেনারেলদের মধ্যে ১৪ মাস ধরে চলা যুদ্ধের কারণে প্রায় আড়াই কোটি লোক মানবিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে।

ইউএসএআইডির প্রশাসক সামান্থা পাওয়ার তহবিল ঘোষণার সময় এক কনফারেন্স কলে সাংবাদিকদের বলেন, “এটি বিশ্বের একক বৃহত্তম মানবিক সংকট”।

জাতিসংঘও সতর্ক করে দিয়ে বলেছে এই মুহুর্তে, ৫০ লাখ সুদানি জনগণ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। সামান্থা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সুদানের পরিস্থিতি ২০১১ সালের সোমালিয়ার চেয়ে খারাপ হতে পারে। খরার কারণে সোমালিয়ায় দুর্ভিক্ষে সেসময় প্রায় ২,৫০,০০০ লোক মারা যায়, যাদের অর্ধেকই শিশু।

তাছাড়া ১৯৮০ দশকের শুরুতে ইথিওপিয়ার মারাত্মক দুর্ভিক্ষের চেয়ে আরও ভয়াবহ দূর্ভিক্ষের দিকে যাচ্ছে দেশটি বলেও সতর্ক করেন তিনি।

ইথিওপিয়ার সেই ঐতিহাসিক দূর্ভিক্ষের দুই বছরের মধ্যে প্রায় ১০ লাখ ইথিওপীয় মারা যায়। আরও লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়, অনেকেই দেশ চেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়।

ফাইল- যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন দপ্তরের প্রশাসক সামান্থা পাওয়ার ওডেসায় একটি সংবাদ সম্মেলনে ভাষণ দিচ্ছেন। ইউক্রেন, ১৮ জুলাই, ২০২৩।

যুদ্ধরত সুদানের সশস্ত্র বাহিনী (এসএএফ) এবং আধাসামরিক বাহিনীর র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) সক্রিয়ভাবে ত্রাণ সরবরাহে বাধা প্রদান করছে বলেও জানিয়েছেন পাওয়ার।

পাওয়ার বলেন, “ খাদ্যাভাব নয়, বাধা প্রদর্শনের কারণে সুদানে এই ঐতিহাসিক ও মৃত্যুমুখি খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে। অবিলম্বে এই অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে”।

জাতিসংঘ বলছে, আড়াই কোটি সুদানির মানবিক সহায়তা ও সুরক্ষা প্রয়োজন। প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ তীব্র ক্ষুধার মুখোমুখি এখন এবং এই মাসে শুরু হতে যাওয়া শুষ্ক মৌসুমে সংখ্যাটি আরও বাড়ার আশংকা রয়েছে।

চাদের কাছ থেকে আন্তঃসীমান্ত প্রবেশাধিকার এবং সংঘাতপূর্ণ ফ্রন্ট লাইন জুড়ে প্রবেশাধিকারের জন্য জাতিসংঘ কয়েক মাস ধরেই অনুরোধ করে আসছে। উত্তর দারফুরের রাজধানী শহর এল ফাশেরের পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। জাতিসংঘ ত্রাণবাহী যানবাহনের চলাচলের অনুমতিসহ প্রশাসনিক প্রতিবন্ধকতা অপসারণের আহ্বান জানিয়েছে। প্রবেশাধিকার প্রতিবন্ধকতার কারণে দারফুর ও খার্তুমের কিছু অংশে মানবিক ত্রাণ পাঠানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

উত্তর দারফুরের রাজধানী, এল ফাশেরের পরিস্থিতি খুব খারাপ। আরএসএফ শহরটি ঘিরে ফেলেছে, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করেছে।

ফাইল- সুদানের উত্তর দারফুর রাজ্যের রাজধানী এল ফাশেরের একটি গবাদি পশুর বাজারে ধ্বংসযজ্ঞ। সেপ্টেম্বর ১, ২০২৩।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ বৃহস্পতিবার আরএসএফের অবরোধ বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে। তাছাড়া এল ফাশেরে আশ্রয় নেয়া আট লাখেরও বেশি বেসামরিক নাগরিকের জন্য সেখানে লড়াই বন্ধ করে ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার জন্য একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে।

শুক্রবার বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি জানিয়েছে, ত্রাণবাহী একটি গাড়িবহর চলতি সপ্তাহে চাদ থেকে দারফুরে প্রবেশ করেছে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষের জন্য সহায়তা নিয়ে। গত দুই মাসে মধ্যে চাদ থেকে টাইন সীমান্ত ক্রসিং দিয়ে সুদানে এই নিয়ে তৃতীয় কনভয় প্রবেশ করেছে।

২০০০ এর দশকের গোড়ার দিকে আরব জানজাউইদ যোদ্ধারা, যারা আজকের আরএসএফ, দারফুরে আফ্রিকান জাগাওয়া, মাসালিত, ফুর এবং অন্যান্য অ-আরব জাতিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গণহত্যা চালায়। সাংবাদিকদের সাথে ফোনালাপে,এই সংঘাতের কোনো সামরিক সমাধান নেই বলে মন্তব্য করেছেন, জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত লিন্ডা টমাস-গ্রিনফিল। তাছাড়া, যে সকল দেশ প্রতিদ্বন্দ্বী জেনারেলদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ দিয়ে সমর্থন করছে তাদের সমালোচনাও করেন তিনি।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও এল ফাশের এবং সুদানজুড়ে লড়াইয়ের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, বেসামরিক মানুষের এই দুর্ভোগ কমাতে জরুরি ভিত্তিতে যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন।