সেন্টমার্টিন পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের ‘নীরব ভূমিকার’ সমালোচনা করলেন মির্জা ফখরুল

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

সেন্টমার্টিন দ্বীপকে ঘিরে চলমান সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে সরকারের নীরব ভূমিকার সমালোচনা করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সরকারের ভূমিকাকে তিনি নতজানু পররাষ্ট্রনীতির বহিঃপ্রকাশ বলে উল্লেখ করেন।
শনিবার (১৫ জুন) রাজধানী ঢাকার, জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় এই অভিমত প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, “এ ধরনের গুরুতর বিষয়ে সরকার এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেয়নি।”

“পত্র-পত্রিকায় সেন্টমার্টিন দ্বীপের সংকট নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এটা দুঃখজনক যে আমরা নিজেদের দ্বীপে যেতে পারছি না। এই সরকারের কী ব্যর্থতা যে, ওই দ্বীপে গেলে অন্য দেশ থেকে আমাদের গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে;” আরো বলেন মির্জা ফখরুল।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি যার জন্য বিবৃতি দিতে হবে বা এ বিষয়ে কিছু বলতে হাবে। “এই শাসকগোষ্ঠী এতোটাই আজ্ঞাবহ যে, মিয়ানমারের মতো দেশ সম্পর্কে তারা কিছু বলতে পারে না। এই মনোভাব কতটা আজ্ঞাবহ হতে পারে?” প্রশ্ন করেন মির্জা ফখরুল।

বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন, সীমান্তে যখন বাংলাদেশিরা মারা যাচ্ছে এবং দেশের মানুষ যখন অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তখন তারা কোনো প্রতিবাদ করেনি।

“সেন্টমার্টিন দ্বীপে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। সেখানে বিপদে পড়েছেন শত শত মানুষ। কিন্তু সরকার এ নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তিত নয়;” বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমীর।

ওবায়দুল কাদের:‘আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মিয়ানমারের গোলা সেন্টমার্টিনে পড়ার বিষয়টি নিয়ে, মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। শনিবার (১৫ জুন) বিকেলে,আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ে এ কথা বলেন তিনি।

“চেষ্টা চলছে এবং বাংলাদেশ সংঘাত এড়িয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। তবে আক্রান্ত হলে জবাব দেয়া হবে;” আরো বলেন ওবায়দুল কাদের।

তিনি আরো বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারের কিছু অভ্যন্তরীণ সংকট রয়েছে। এদের ৫৪টি জাতিগোষ্ঠী রয়েছে। তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। তাদের অভ্যন্তরীণ সংকটের কারনে যদি বাংলাদেশ ভুক্তভোগী হয়, তবে তা হবে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।

“সেখানে ক্ষমতায় রয়েছে সামরিক সরকার। আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করছি এবং যুদ্ধ এড়িয়ে তা অব্যাহত রাখবো। তবে আমাদের ওপর হামলা হলে জবাব দেবো। আমাদের অবমূল্যায়ন করার কোনো কারণ নেই। আমরা প্রস্তুত আছি;” যোগ করেন ওবায়দুল কাদের।

রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশকে গ্রাস করেছে বলে উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক কারণে উদারভাবে সীমান্ত খুলে দিয়েছেন। এজন্য তাকে 'মাদার অফ হিউম্যানিটি' বলা হয়। এখন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং সংস্থাগুলো এর জন্য আমাদের প্রশংসা ও শ্রদ্ধা করে।”

রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তার পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে বলে জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, “চলমান অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। ১০-১২ লাখ রোহিঙ্গার অতিরিক্ত বোঝা চাপ তৈরি করছে। বিশ্বের বড় বড় দেশ; যারা এই সংকট নিয়ে কথা বলে, তাদের লিপ সার্ভিসের (মৌখিকভাবে প্রশংসা) আমাদের দরকার নেই। রোহিঙ্গাদের বোঝা আমাদের কাঁধ থেকে তুলে নিতে হবে। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী যেখানেই যান, সেখানেই রোহিঙ্গা ইস্যু তুলে ধরেন।”

সেন্ট মার্টিন দ্বীপে খাদ্যপণ্যবাহী জাহাজ

বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার টেকনাফ অংশে মিয়ানমারের সীমান্তে গোলাগুলি অস্থিরতা কারণে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের সঙ্গে বিগত কয়েক দিন ধরে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এতে করে, সেখান বসবাসরত প্রায় ১০ হাজার নিরাপত্তাহীনতাসহ মানুষ খাদ্য সংকটে পড়েছে। সংকটে থাকা দ্বীপের বাসিন্দাদের জন্য খাদ্য সামগ্রী নিয়ে একটি জাহাজ কক্সবাজার থেকে পাঠানো হয়েছে।

শুক্রবার (১৪ মে) কক্সবাজার থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের উদ্দেশ্য রওয়না এমবি বার আউলিয়া নামে জাহাজটি। এতে সরকারি অনুদানের ৭৫ জন চাল, বিজিবি-কোস্ট গার্ডসহ বিভিন্ন বাহিনীর রেশনের পণ্য সামগ্রী এবং ব্যবসায়ীদের পণ্য রয়েছে।

এমবি বার আউলিয়ার পরিচালনার দায়িত্বে থাকা বাহাদুর হোসাইন ভয়েস অফ আমেরিকাকে জানান, "(বাংলাদেশ সময়) রাত ১১ টা ২০মিনিটে নিরাপদে জাহাজটি সেন্টমার্টিন দ্বীপের ঘাটে পৌঁছায়।" এরপর জাহাজ থেকে মালামাল নামানো শুরু হয়।