লেবানন সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি, গাজায় ইসরায়েলের হামলা

মোহাম্মদ আল-হাবিল তার চাচা আবদুল মুতি আল-হাবিলের সাথে নিহত হওয়ার পর তার বাবা আত্মীয়দের সাথে কাঁদছেন। দেইর আল বালাহ, গাজা। জুন ১৪,২০২৪।

যুদ্ধবিরতি প্রচেষ্টা অগ্রগতি অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। এদিকে লেবাননের সাথে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তে উত্তেজনাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যেই শুক্রবার গাজায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।

প্রত্যক্ষদর্শীরা গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফা শহরে এবং মধ্যাঞ্চলে বিমান হামলার কথা জানিয়েছেন।

বার্তা সংস্থা এএফপির ছবিতে দেখা যায়, মধ্যাঞ্চলীয় শহর দেইর আল-বালাহ'র আল-আকসা শহীদ হাসপাতালে ১১ বছর বয়সী এক কিশোরের মৃতদেহের পাশে ভীড় করেন স্থানীয় মানুষ। সেখানে এএফপি’র দেয়া ছবিতে দেখা যায়, তাজা রক্ত মাখা মেঝেতে শুয়ে আছে কালো রঙের পোশাক পরা শিশুটি আর তার মুখের উপরের অর্ধেক অংশ সাদা ব্যান্ডেজ দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা মধ্য গাজায় অভিযান অব্যাহত রেখেছে। তাদের যুদ্ধবিমানগুলি জেইতুন এলাকায় হামাসের একটি সেলে আঘাত হেনেছে বলেও জানায় তারা।

গাজার দক্ষিণ অঞ্চল মিশরের সাথে সীমান্তে রাফার প্রত্যক্ষদর্শীরা হেলিকপ্টারে গুলির খবর জানিয়েছেন। অন্যদিকে, হামাসের সশস্ত্র শাখা জানিয়েছে, তাদের জঙ্গিরা তাল আল-সুলতান এলাকার কাছে ইসরায়েলি সেনাদের লক্ষ্য করে মর্টারের গুলি চালিয়েছে।

ইসরায়েলি সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এএফপির হিসাব অনুযায়ী, ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর এই যুদ্ধ শুরু হলে সেখানে ১,১৯৪ জন নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। তাছাড়া হামাসের হাতে মোট আটক জিম্মি ২৫১ জনের মধ্যে ১১৬ জন এখনও গাজায় রয়ে গেছে। কিছু সংখ্যক মুক্তি পেলেও মোট ৪১ জন মারা যাবার খবর দিয়েছে সেনাবাহিনী।

অপরদিকে, হামাস শাসিত অঞ্চলটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেবে , ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় গাজায় অন্তত ৩৭ হাজার ২৬৬ জন নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। গত ২৪ ঘন্টায় আরও ৩৪ জনের মৃত্যুর খবরও জানিয়েছে তারা।

হামাস শাসিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে ইসরায়েলের পাল্টা আক্রমণে গাজায় কমপক্ষে ৩৭,২৬৬ জন নিহত হয়েছেন যাদের অধিকাংশই অসামরিক নাগরিক । মন্ত্রনালয় শুক্রবার জানায় এই নিহতদের মধ্যে সেই ৩৪ জন ও রয়েছেন যারা গত ২৪ ঘন্টায় প্রাণ হারান।

সীমান্তে উত্তেজনা

এদিকে, ইসরায়েলি সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ইরান সমর্থিত ও হামাসের মিত্র লেবাননভিত্তিক হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের রকেট, ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিক্ষেপের ফলে মধ্যপ্রাচ্যে বৃহত্তর সংঘাতের আশঙ্কা আবারও জোরদার হয়েছে।

ইসরায়েলের হাতে হিজবুল্লাহর এক কমান্ডারের হত্যার প্রতিশোধ নিতে তারা এই হামলা চালাচ্ছে বলে জানায় দলটি।

ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে সাইরেন বাজিয়ে সতর্ক সংকেত দেয়া হলেও সেখানকার পুলিশ, কিরিয়াত শমোনা এলাকায় গোলাবারুদের মাধ্যমে আঘাত হানার খবর দেয়। তবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

দেশটির সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, এর জবাবে ইসরায়েলি বাহিনী গোলাবর্ষণ করে এবং সীমান্তের ওপারে 'হিজবুল্লাহর সন্ত্রাসী অবকাঠামোতে' বিমান হামলা চালানোর ঘোষণা দিয়েছে।

ইসরায়েলের বিমান হামলায় লেবাননের দক্ষিনাঞ্চলে দুই নারী নিহত হবার খবর জানিয়েছেন সেখানকার গ্রাম কর্মকর্তা হাসান শুর।

বৃহস্পতিবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, উত্তেজনা প্রশমনে তার দেশ ও যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল ও লেবাননের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাদাভাবে কাজ করবে।

তবে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্ট এই উদ্যোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি ফ্রান্সের "ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শত্রুতামূলক নীতির" নিন্দা জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, গত মাসে ইসরায়েলি সংস্থাগুলিকে অস্ত্র বাণিজ্য প্রদর্শনীতে নিষিদ্ধ করেছিল ফ্রান্স। তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন মুখপাত্র এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছেন, গ্যালান্টের মন্তব্য সরকারের অবস্থানকে প্রতিফলিত করে না।

রবিবার থেকে সারা বিশ্বব্যাপী মুসলমানরা যখন ঈদুল আজহা উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন গাজাবাসী প্রয়োজনীয় পণ্যের ঘাটতিতে দিন যাপন করছে। গাজার বেশিরভাগ মানুষের মতো যুদ্ধের কারণে বাস্তুচ্যুত মোহাম্মদ শাবাত দেইর আল-বালাহতে তার তাঁবুর বাইরে বলেন, "ঈদ বলে কিছু নেই আমাদের।”