সেন্টমার্টিনে মিয়ানমারের গোলা: ‘আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা অব্যাহত রাখবে বাংলাদেশ’, জানালেন ওবায়দুল কাদের

বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিন দ্বীপ

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মিয়ানমারের গোলা সেন্টমার্টিনে পড়ার বিষয়টি নিয়ে, মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। শনিবার (১৫ জুন) বিকেলে,আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ে এ কথা বলেন তিনি।

“চেষ্টা চলছে এবং বাংলাদেশ সংঘাত এড়িয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। তবে আক্রান্ত হলে জবাব দেয়া হবে;” আরো বলেন ওবায়দুল কাদের।

তিনি আরো বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারের কিছু অভ্যন্তরীণ সংকট রয়েছে। এদের ৫৪টি জাতিগোষ্ঠী রয়েছে। তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। তাদের অভ্যন্তরীণ সংকটের কারনে যদি বাংলাদেশ ভুক্তভোগী হয়, তবে তা হবে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।

“সেখানে ক্ষমতায় রয়েছে সামরিক সরকার। আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করছি এবং যুদ্ধ এড়িয়ে তা অব্যাহত রাখবো। তবে আমাদের ওপর হামলা হলে জবাব দেবো। আমাদের অবমূল্যায়ন করার কোনো কারণ নেই। আমরা প্রস্তুত আছি;” যোগ করেন ওবায়দুল কাদের।

রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশকে গ্রাস করেছে বলে উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক কারণে উদারভাবে সীমান্ত খুলে দিয়েছেন। এজন্য তাকে 'মাদার অফ হিউম্যানিটি' বলা হয়। এখন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং সংস্থাগুলো এর জন্য আমাদের প্রশংসা ও শ্রদ্ধা করে।”

রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তার পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে বলে জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, “চলমান অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। ১০-১২ লাখ রোহিঙ্গার অতিরিক্ত বোঝা চাপ তৈরি করছে। বিশ্বের বড় বড় দেশ; যারা এই সংকট নিয়ে কথা বলে, তাদের লিপ সার্ভিসের (মৌখিকভাবে প্রশংসা) আমাদের দরকার নেই। রোহিঙ্গাদের বোঝা আমাদের কাঁধ থেকে তুলে নিতে হবে। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী যেখানেই যান, সেখানেই রোহিঙ্গা ইস্যু তুলে ধরেন।”

সেন্ট মার্টিন দ্বীপে খাদ্যপণ্যবাহী জাহাজ

বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার টেকনাফ অংশে মিয়ানমারের সীমান্তে গোলাগুলি অস্থিরতা কারণে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের সঙ্গে বিগত কয়েক দিন ধরে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এতে করে, সেখান বসবাসরত প্রায় ১০ হাজার নিরাপত্তাহীনতাসহ মানুষ খাদ্য সংকটে পড়েছে। সংকটে থাকা দ্বীপের বাসিন্দাদের জন্য খাদ্য সামগ্রী নিয়ে একটি জাহাজ কক্সবাজার থেকে পাঠানো হয়েছে।

শুক্রবার (১৪ মে) কক্সবাজার থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের উদ্দেশ্য রওয়না এমবি বার আউলিয়া নামে জাহাজটি। এতে সরকারি অনুদানের ৭৫ জন চাল, বিজিবি-কোস্ট গার্ডসহ বিভিন্ন বাহিনীর রেশনের পণ্য সামগ্রী এবং ব্যবসায়ীদের পণ্য রয়েছে।

এমবি বার আউলিয়ার পরিচালনার দায়িত্বে থাকা বাহাদুর হোসাইন ভয়েস অফ আমেরিকাকে জানান, "(বাংলাদেশ সময়) রাত ১১ টা ২০মিনিটে নিরাপদে জাহাজটি সেন্টমার্টিন দ্বীপের ঘাটে পৌঁছায়।" এরপর জাহাজ থেকে মালামাল নামানো শুরু হয়।।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “দ্বীপে স্থায়ীভাবে প্রায় ১০ হাজার মানুষ বসবাস করে। গত কিছুদিন ধরে মিয়ারমার সীমান্তে গোলাগুলির কারণে তারা খুব বিপদে আছেন। মিয়ারমার থেকে অনেক গুলি বাংলাদেশেও এসেছে। যার কারণে সাগরে মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে। জেলেদের কোন আয়ও নেই।”

তিনি আরও বলেন, “গত ৬ থেকে অনেকটা দ্বীপের সঙ্গে নৌ যোগাযোগ বন্ধ থাকায় সেখানে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। সেখানকার বাসিন্দারা গত কয়েকদিন শুধু তরকারি বিহীন ভাত খেয়ে আছে। আজ সেখানে খাদ্যপণ্য নিয়ে একটি জাহাজ যাবে। জাহাজে ব্যবসায়ীদের পণ্যের পাশাপাশি সরকারি অনুদানের ৭৫ জন চাল, বিভিন্ন বাহিনীর রেশন রয়েছে।”

“বর্তমানে মিয়ারমার সীমান্তে গোলাগুলি বন্ধ রয়েছে”- বলেও জানানিয়ে মুজিবুর রহমান বলেন, “এখন পরিস্থিতি ভালো আছে। কিছুটা শান্তি বিরাজ করছে। তাই আজকে জাহাজ পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।”

“বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে”- বলে উল্লেখ তিনি বলেন,“ গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে মিয়ানমার সীমান্তে অস্থিরতা চলছে। সেখানকার বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ চলছে। থেমে-থেমে দীর্ঘদিন চলছে অস্থিরতা। এই সময়ে মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে কয়েকজন বাংলাদেশী নাগরিক নিহত হয়েছে। তাই এখন পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও যে কোনও সময় আবার অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে।”

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহীন ইমরান ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন,“ব্যবসায়ীরা তাদের মামলাল নিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া জেলেদের সরকারি অনুদানের কিছু চাল আছে। এখন জাহাজ ফেরার সময় সেখান থেকে কেউ আসতে চাইলে আসবে। তবে, সরকারির উদ্যোগে সেখান থেকে কাউকে আনা হচ্ছে না। কাউকে আনার মতো পরিস্থিতিও সৃষ্টি হয়নি।”

সেন্ট মার্টিন দ্বীপের সঙ্গে কতদিন নৌ যোগাযোগ বন্ধ ছিলো জানতে চাইলে শাহীন ইমরান বলেন, “এটা বলা কঠিন। তবে, ঝুকি নিয়ে গতকালও মানুষ যাতায়াত করেছে সমুদ্র পথে।”

মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘর্ষ

এ বছরের ২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ চলছে।

জাতিগত সংখ্যালঘু রাখাইন আন্দোলনের প্রশিক্ষিত ও সুসজ্জিত সামরিক শাখা আরাকান আর্মি। তারা মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে স্বায়ত্তশাসন চায়।

আরাকান আর্মি সশস্ত্র জাতিগত গোষ্ঠীর একটি জোটের সদস্য। তারা সম্প্রতি মিয়ানমারের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে একটি কৌশলগত অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করেছে। মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি এবং তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির সঙ্গে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স নামে একত্রে কাজ করে আরাকান আর্মি। এই জোট ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর চীন সীমান্তবর্তী উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যে একটি সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকে এই অভিযান মিয়ানমারের সামরিক শাসকদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ জোটের বরাত দিয়ে, অ্যাসোসিয়েট প্রেস (এপি) জানিয়েছে, তারা ২৫০টির বেশি সামরিক চৌকি, পাঁচটি সরকারি সীমান্ত ক্রসিং এবং চীন সীমান্তের কাছে একটি বড় শহরসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহর দখল করে নিয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট মিয়ানমারের সেনাবাহিনী উত্তর রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হিংসাত্মক অভিযান শুরু করে। যা ছিলো আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে গুরুতর অপরাধ। তখন সেনাবাহিনী গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়। সেনাবাহিনীর নৃশংস অভিযানের ফলে, সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের অন্তত ৭ লাখ ৪০ হাজার সদস্য সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।