রাশিয়া কেন আফ্রিকায় প্রভাব বিস্তার করতে আগ্রহী?

ফাইল- ফ্রান্সের সামরিক বাহিনী দেওয়া এই তারিখবিহীন ছবিতে দেখা যাচ্ছে, মালির উত্তরাঞ্চলে রুশ ভাড়াটেরা একটি হেলিকপ্টারে উঠছে।

চলতি সপ্তাহে আফ্রিকার সাব-সাহারার সহেল অঞ্চলের একাধিক দেশে ঝটিকা সফরে গিয়ে রাশিয়ার শীর্ষ কূটনীতিকরা সাহায্য ও সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কারণ এই মহাদেশের রাজনৈতিকভাবে অস্থির অথচ খনিজ-সমৃদ্ধ অংশে নিজেদের প্রভাব-প্রতিপত্তি বৃদ্ধি করতে চাইছে মস্কো।

এই অঞ্চলে আফ্রিকার একাধিক দেশের সরকার নিরাপত্তাগত অংশীদার হিসেবে চিরাচরিত মিত্র ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দিয়ে রাশিয়াকে নির্বাচন করছে। এই সংখ্যাটা ক্রমশ বাড়ছে। সেরগেই লাভরভ গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকবার আফ্রিকা সফরে গিয়েছেন। চলতি সপ্তাহে তিনি গিনি, রিপাবলিক অফ কঙ্গো, বুরকিনা ফাসো ও চাদে যান।

বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থা ওয়াগনার এবং তার সম্ভাব্য উত্তরসূরি আফ্রিকা কোর-কে ব্যবহার করে মস্কো আগ্রাসীভাবে আফ্রিকান দেশগুলির সঙ্গে তাদের সামরিক সহযোগিতা প্রসারিত করেছে। রুশ ভাড়াটেরা আফ্রিকান নেতাদের রক্ষা থেকে শুরু করে রাষ্ট্রগুলিকে চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করছে।

পোলিশ ইন্সটিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স এই মাসে এক সমীক্ষায় বলেছে, ‘আফ্রিকা কোর ’ তৈরির মাধ্যমে রাশিয়া আফ্রিকাতে তাদের সামরিক উপস্থিতি বাড়াতে জোরালো উদ্যোগ নিয়েছে।

ইউক্রেনে আক্রমণ সংক্রান্ত বিষয়ে আফ্রিকার ৫৪টি দেশের অধিকাংশের কাছ থেকে রাজনৈতিক সমর্থন বা অন্তত নিরপেক্ষতা চাইছে মস্কো। আফ্রিকার দেশগুলি জাতিসংঘে সবচেয়ে বড় ভোটদানকারী গোষ্ঠী এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযানের সমালোচনা করে উত্থাপিত সাধারণ পরিষদের প্রস্তাবে সমর্থনের ক্ষেত্রে অন্যান্য গোষ্ঠীর চেয়ে তারা অনেক বেশি দ্বিধাবিভক্ত।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা বিদ্যায়তনিক প্রতিষ্ঠান আফ্রিকা সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ মার্চ মাসে এক প্রতিবেদনে লিখেছিল যে, রাশিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ও সম্পৃক্ত একাধিক সংগঠন আফ্রিকার বহু দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ককে খর্ব ও অবমূল্যায়ন করতে অপতথ্য ছড়াচ্ছে। এই সংস্থা বলেছে, মস্কো “২২টির বেশি দেশকে লক্ষ্যবস্তু করে ৮০টি নথিবদ্ধ প্রচারণাকে স্পনসর করে চলেছে।”

আফ্রিকার দেশগুলি নিয়ে রাশিয়ার আগ্রহের কারণ কী? আফ্রিকা খনিজ সম্পদ, তেল ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। পাশাপাশি এখানে রাজনৈতিক ও আইনি চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এই মহাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ তাদের অর্থনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ক্রমশই মূল বিষয় হয়ে উঠছে।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রেস সার্ভিস প্রকাশিত এই ছবিতে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই লাভরভ গিনির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরিসান্ডা কোয়াতির সঙ্গে করমর্দন করছেন।

রাশিয়া সেই সব দেশগুলিতে প্রভাব বিস্তার করেছে যেখানে শাসনব্যবস্থা সীমায়িত ও নড়বড়ে। মস্কো তাদের নিয়ন্ত্রিত সংস্থাগুলির মাধ্যমে সেখানে খনিজ-চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্ট এক সমীক্ষায় দেখিয়েছে, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে স্বর্ণ ও হীরা, কঙ্গোতে কোবাল্ট, সুদানে স্বর্ণ ও তেল, মাদাগাস্কারে ক্রোমাইট, জিম্বাবুয়েতে প্লাটিনাম ও হীরা এবং নামিবিয়ায় ইউরেনিয়াম খনির দখল নিয়েছে রাশিয়া।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা ডেমোক্রেসি টুয়েন্টি ওয়ান গত ডিসেম্বরে এক বিশ্লেষণে জানিয়েছে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনে আক্রমণের পর থেকে আফ্রিকায় শুধু স্বর্ণের বাণিজ্য থেকে ওয়াগনর ও রাশিয়া প্রায় ২৫০ কোটি ডলার আয় করে থাকতে পারে।