প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ।
বুধবার (৫ জুন) বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
এ রায়ের ফলে সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বহাল থাকল বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী মো. মুনসুরুল হক চৌধুরী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী শফিকুল ইসলাম।
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ (এসকে) সাইফুজ্জামান জামান।
আইনজীবী মো. মুনসুরুল হক চৌধুরী বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয় বিবেচনা করে যেহেতু সংবিধান প্রণয়ণের আগেই মুক্তিযোদ্ধা কোটা চালু করা হয়, এটা চলমান ছিল। এটা চলমান থাকাবস্থায় সরকার একটা পরিপত্রের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের ৩০ শতাংশ কোটা ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর বাতিল করে দেয়। এর আগে মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা সংরক্ষণের ব্যাপারে আপিল বিভাগ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত আছে, এই কোটা বাস্তবায়নযোগ্য। কিন্তু তারপরও ২০১৮ সালে নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের ক্ষেত্রে এই কোটা বাতিল করা হয়। এটা অবৈধ ঘোষণা করেছে। ফলে এখন থেকে ১৩ থেকে নবম গ্রেডে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ দিতে কোনো বাধা রইল না।
জানা যায়, সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা দীর্ঘদিনের। ১৯৭২ সালের ৫ নভেম্বর এক নির্বাহী আদেশে সরকারি, আধাসরকারি, প্রতিরক্ষা এবং জাতীয়করণ করা প্রতিষ্ঠানে জেলা ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা এবং ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়। পরে বিভিন্ন সময় এ কোটা পদ্ধতির সংস্কার, পরিমার্জন ও পরিবর্তন করে সরকার।
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে ২০১৮ সালের ২ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে প্রধান করে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করে সরকার।
এরপর ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে সরাসরি নিয়োগে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি তুলে দিয়ে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
ওই পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষারসহ সাতজন হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। এ রিটের শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্ট সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জারি করা পরিপত্র কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন। এ রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি করে হাইকোর্ট রুল মঞ্জুর করে রায় দেন।