বাংলাদেশের ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ ধাপে, ২৬ জেলায় ৬০টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে বুধবার (৫ জুন)। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলবে।
নির্বাচন মিশন জানিয়েছে, ৬০টি উপজেলা পরিষদের ১৮০টি পদের বিপরীতে মোট ৭২১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে ২৫১ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী, ২৬৫ জন ভাইস চেয়ারম্যান এবং ২০৫ জন মহিলা (সংরক্ষিত) ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
মঙ্গলবার (৪ জুন) নির্বাচন কমিশনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ৬০ টি উপজেলার ৫ হাজার ১৪৪ টি ভোটকেন্দ্রে নিবন্ধিত ভোটারের সংখ্যা ১ কোটি ৪৩ লাখ ৫৭ হাজার ৮২০ জন। এর মধ্যে, ছয়টি উপজেলায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এবং বাকি উপজেলায় প্রচলিত ব্যালট পেপার ব্যবহার করা হবে।
১৭৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন
উপজেলা নির্বাচনের চতুর্থ ধাপের ভোট গ্রহণকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সারা দেশে ১৭৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বিজিবি সদরদপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলামের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামী ৫ জুন অনুষ্ঠিতব্য উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ ধাপে, স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য ৩ জুন থেকে ৭ জুন পর্যন্ত নির্বাচনি এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে বিজিবি মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে।
উল্লেখ্য, তৃতীয় ধাপে উপজেলা নির্বাচনের সময় ৩০০ প্লাটুন বিজিবি, দ্বিতীয় ধাপে ৪৫৭ প্লাটুন বিজিবি এবং প্রথম ধাপে মোট ৪১৮ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়।
উপজেলা নির্বাচন
বাংলাদেশে চার ধাপে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২১ মার্চ (বৃহস্পতিবার) প্রথম ধাপের ১৫২টি উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণ হয় ৮ মে।
দ্বিতীয় ধাপের ১৬১টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হয় ২১ মে। তৃতীয় ধাপে ১১২টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো ২৯ মে। ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে ক্ষয়ক্ষতির কারণে, ১৯টিতে ভোট গ্রহণ স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
চতুর্থ ধাপের উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৫ জুন। চতুর্থ ধাপে ৫৪টি উপজেলায় ভোট হওয়ার কথা ছিলো। এখন ২৬ জেলায় ৬০টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন কারণে স্থগিত হওয়া কিছু উপজেলা।
তৃতীয় ধাপে ভোটার উপস্থিতি
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল জানিয়েছেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে ভোটার উপস্থিতি ছিলো প্রায় ৩৫ শতাংশ। ২৯ মে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, “ভোটার উপস্থিতি ৩৫ শতাংশের কম-বেশি হতে পারে।” সুষ্ঠু, অবাধ ও সুশৃঙ্খলভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন সিইসি।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ভালো ভূমিকা পালন করেছে এবং ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তারা যথেষ্ট ভালো ভূমিকা রেখেছেন। সীমিত পরিসরে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে বলে জানান সিইসি।বলেন, ভোটে কারচুপির চেষ্টার জন্য ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
“সর্বোপরি ভালো ভোট হয়েছে:” বলেন হাবিবুল আউয়াল।
দ্বিতীয় ধাপে ভোটের হার
বাংলাদেশের ষষ্ট উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে, ৩০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। গত ২১ মে বিকালে, নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
ওই দিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ১৫৬ টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ চলে।ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি কম দেখা গেছে। এছাড়া, বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি বিক্ষিপ্ত সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।
ইসি সচিব জাহাংগীর আলম গণমাধ্যমকে জানান, দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনের প্রথম চার ঘণ্টায় ভোট পড়েছে ১৭ শতাংশ।
নির্বাচন কমিশনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দ্বিতীয় ধাপে ভোট গ্রহণ হয়েছে ১৫৬টি উপজেলায়। এসব উপজেলায়, ভোটকেন্দ্র ছিলো ১৩ হাজার ১৬টি।
ভোটার ছিলেন, পুরুষ ১ কোটি ৭৯ লাখ ৫ হাজার ৪৬৪ জন; নারী ১ কোটি ৭২ লাখ ৯৯ হাজার ৪৭ জন; আর, তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) ভোটার ছিলেন ২৩৭ জন।
১৫৬ টি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানসহ মোট ৪৬৮টি পদের বিপরীতে; ৬০৩ জন চেয়ারম্যানসহ ১ হাজার ৮২৪ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।
৯টি জেলার ২৪টি উপজেলায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হয়; বাকি উপজেলায় প্রচলিত ব্যালট পেপার ব্যবহার করা হয়েছে ভোট গহণের জন্য।
প্রথম ধাপে ভোটার উপস্থিতি
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। গত ৮ মে বিকেলে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
হাবিবুল আউয়াল বলেন, “ বৃষ্টি ও ফসল কাটা নিয়ে ব্যস্ততার কারণে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যেতে অনীহা প্রকাশ করছে।” কয়েকটি অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানান হাবিবুল আউয়াল।
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দেশের ৫৯ জেলার ১৩৯টি উপজেলায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১৩৯টি উপজেলা পরিষদে প্রতিটি উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোট ৪১৭টি পদের বিপরীতে প্রায় ৫৭০ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ মোট ১ হাজার ৬৩০ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে ২ কোটি ৮০ লাখের বেশি ভোটার ছিলেন।
ভোটার উপস্থিতির হার নিয়ে ইসি 'মাথা ঘামায় না'
বাংলাদেশের অন্যতম নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, জাতীয় বা স্থানীয় সরকার নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য কত শতাংশ ভোট লাগবে, সে বিষয়ে কোনো বিধি, প্রবিধান বা বাধ্যবাধকতা নেই। গত ২০ মে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
“নির্বাচন কমিশন এটা নিয়ে মাথা ঘামায় না। ইসি যে কোনো হারেরই ভোটে সন্তুষ্ট হবে;” তিনি যোগ করেন।উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ায় যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে, সে প্রসঙ্গে এ কথা বলেন কমিশনার আলমগীর।
নির্বাচন কমিশনার আলমগীর আরো বলেন, ফসল কাটা, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া এবং প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর অনুপস্থিতির কারণকে অপ্রত্যাশিত ভোটার উপস্থিতি হয়েছে।
“এটা নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা বা অনাস্থার বিষয় নয়;” তিনি আরো বলেন। পছন্দের প্রার্থী না পাওয়া এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ভোটার উপস্থিতি কমেছে বলেও জানান তিনি।
“তবে কত শতাংশ ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক হবে, সে বিষয়ে ইসির কোনো বাধ্যবাধকতা নেই;” উল্লেখ করেন নির্বাচন কমিশনার আলমগীর।
তিনি বলেন, “সুষ্ঠু নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশন বদ্ধপরিকর। বিশ্বব্যাপী নির্বাচন নিয়ে মানুষের আগ্রহ কম দেখা যাচ্ছে এবং এটি আমাদের দেশের জন্য অনন্য কোনো সমস্যা নয়।”
কমিশনার আলমগীর বলেন, জনগণকে ভোট কেন্দ্রে না যেতে উদ্বুদ্ধ করতে, লিফলেট বিতরণ করছে বিএনপি। এটা তাদের রাজনৈতিক অধিকার এবং তারা তা করতেই পারে। তবে, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে ইসি।
অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত বিএনপির
বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে উপজেলাসহ অন্য কোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) হাইকমান্ড।
১৬ এপ্রিল (মঙ্গলবার) দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষর করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
এতে বলা হয়, সোমবার (১৫ এপ্রিল) রাতে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বৈঠকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শেখ হাসিনার সরকার ও তাঁর আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন, বেসামরিক ও পুলিশ প্রশাসন একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে পারে না।
অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ নেই বলে উল্লেখ করে দলটি।