নরেন্দ্র মোদীঃ বিভক্ত ভারত ইতিহাসের দ্বারপ্রান্তে

নরেন্দ্র মোদীঃ হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাজনীতির প্রচারক। ফাইল ফটো।

নরেন্দ্র মোদী ২০১৪ সালে প্রথম ক্ষমতায় আসার পর গত দশ বছরে ভারতের রাজনৈতিক পটভূমি পাল্টে দিয়েছেন। তাঁর ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা দলকে ছাড়িয়ে গেছে। সংসদীয় নির্বাচনের চেহারা বদলে ক্রমশ প্রেসিডেন্সিয়াল ধাঁচের নির্বাচনে পরিণত হয়েছে।

এর ফলে, বিজেপি ক্ষমতায় থাকার জন্য ক্রমশ মোদী ব্র্যান্ডের উপর নির্ভর করছে। এমনকি রাজ্য বিধান সভা নির্বাচনেও স্থানীয় নেতারা পেছনের সাড়িতে চলে যাচ্ছেন।

“মোদী শুধু প্রধান প্রচারকারী ছিলেন না, এই নির্বাচনে তিনি ছিলেন একমাত্র প্রচারকারী,” বলছেন ইয়ামিনি আইয়ার, একজন জননীতি বিষয়ক গবেষক।

মোদীর সমর্থকরা তাঁকে দেখেন একজন স্বনির্ভর, শক্তিশালী নেতা হিসেবে, যিনি বিশ্বে ভারতের অবস্থান উন্নত করেছেন। তারা মোদীর ব্যবসা-বান্ধব নীতিকে দেশের অর্থনীতি বিশ্বের পঞ্চম-বৃহত্তম হওয়ার কারণ হিসেবে দেখেন।

কিন্তু একই সাথে, তাঁর এক দশকের শাসন ভারতকে গভীর ভাবে বিভক্ত করেছে। তাঁর সমালোচকরা বলছেন, মোদীর হিন্দু-ভিত্তিক রাজনীতি দেশে অসহিষ্ণুতা ও ঘৃণা ছড়িয়েছে এবং সংখ্যালঘুদের উপর, বিশেষ করে মুসলিমদের উপর নির্লজ্জ আক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতের মোট জনসংখ্যার ১৪ শতাংশ মুসলিম।

বিরোধী জোট 'ইন্ডিয়া' নেতা আখিলেশ ইয়াদাভ (বাঁয়ে) এবং রাহুল গান্ধীঃ জোটের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ফটোঃ ২৮ মে, ২০২৪।

মোদীর অধীনে ভারতের অর্থনীতিতে বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এক দিকে স্টক মার্কেট রেকর্ড সৃষ্টি করছে এবং কোটিপতির সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে; অন্যদিকে তরুণদের মধ্যে বেকারত্ব ব্যাপকহারে বাড়ছে। ভারতের অল্প সংখ্যক মানুষ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি থেকে লাভবান হচ্ছেন।

মোদীর সমালোচকরা বলছেন, তাঁর সরকারের অধীনে দেশের গণতন্ত্র নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক বিরোধীদের দমিয়ে রাখার জন্য সরকার ক্রমশ শক্তি ব্যবহার করছে, স্বাধীন মিডিয়ার জায়গা সীমিত করে দিচ্ছে এবং ভিন্নমত দমন করছে। সরকার সমালোচকদের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, দেশ গণতন্ত্র বিকশিত হচ্ছে।

এপ্রিলের মাঝা-মাঝি সময়ে যখন ভোট গ্রহণ শুরু হয়, তখন বিজেপি তাদের প্রচারণায় “মোদীর গ্যারান্টির” উপর জোর দেয়, এবং অর্থনীতি, দারিদ্র বিমোচন ও সমাজসেবায় তাঁর দলের সাফল্যের কথা প্রচার করে। মোদী একের পর এক জনসভায় বার বার বলেন যে দেশের হাল তাঁর হাতে থাকলে, “ভারত ২০৪৭ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত হবে।”

মুসলিমদের নিশানা

তবে প্রচারণা এক পর্যায়ে ক্রমশ হুমকিস্বরূপ হয়ে উঠে, এবং মোদীর মেরুকরণকারী বক্তৃতাবাজী সংখ্যালঘু মুসলিমদের নিশানা করে। এই কৌশল তাঁর মূল হিন্দু ভোটারদের মাঝে নতুন প্রাণ সঞ্চার করে বলে মনে করা হয়।

তাঁর বিরোধীপক্ষ, কংগ্রেস-নেতৃত্বাধীন ‘ইন্ডিয়া’ জোট, মোদীর হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সমালোচনা করেছে। তারা অর্থনীতি নিয়ে অসন্তোষ থেকে লাভবান হবার আশা করছে, এবং বেকারত্ব, মূল্যস্ফীতি আর বৈষম্য ঘিরে তাদের প্রচারণা চালিয়েছে।

কিন্তু এক ডজনেরও বেশি বিরোধী দলের এই জোটের কাজ আদর্শগত পার্থক্যর জন্য ব্যাহত হয়েছে এবং বেশ কিছু নেতা দলত্যাগও করেছেন। এর ফলে, জোটের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

বিরোধীদের জোট আরও দাবী করছে যে, তাদেরকে অন্যায় ভাবে নিশানা করা হয়েছে। তাঁরা বলছেন, তাদের নেতাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলো তল্লাশি, গ্রেফতার এবং দুর্নীতি সংক্রান্ত তদন্ত চালিয়েছে, যেগুলো তাঁরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে মনে করেন। সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

আরেকটি বিজয় দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের অন্যতম হিসেবে নরেন্দ্র মোদীর অবস্থান পাকাপোক্ত করবে। এর আগের নির্বাচনে ২০১৯ সালে বিজেপি ৫৪৩ সংসদীয় আসনের মধ্যে ৩০৩টী জয় করেছিল।