ভারতে নির্বাচনঃ ভোট গণনার শুরুতে অপ্রত্যাশিত ট্রেন্ড, স্টক মার্কেট সূচক নিম্নমুখী

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তারা ইভিএম মেশিন খুলে ভোট গণনা করছেন। ফটোঃ ৪ জুন, ২০২৪।

মঙ্গলবার (৪ জুন) ভারতের সাধারণ নির্বাচনের ভোট গণনা শুরু হবার দু’ঘণ্টা পর বিজেপি-নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট বেশি আসনে এগিয়ে আছে বলে স্থানীয় গণ মাধ্যম জানাচ্ছে। তবে কংগ্রেস-নেতৃত্বাধীন ‘ইন্ডিয়া’ জোট প্রত্যাশার তুলনায় ভাল করছে বলে গণনার শুরুর দিকের ট্রেন্ড দেখাচ্ছে।

মঙ্গলবার স্থানীয় সময় ৯টায় মুম্বাই স্টক মার্কেট খোলার পর অপত্যাশিতভাবে দরপতন হয়েছে। দ্য হিন্দু পত্রিকার বিজনেস লাইন জানাচ্ছে, লেনদেন শুরু হবার পর সেন্সেক্স এবং নিফটি সূচক তিন শতাংশ কমে যায়, যদিও ভোট গণনা শুরু হবার সাথে সূচক ঊর্ধ্বমুখী হবে বলে ধারনা করা হয়েছিল।

শনিবারে এক্সিট পোল বিজেপির জন্য বড় বিজয়ের সম্ভাবনার কথা বলেছিল। কিন্তু ভোট গণনার শুরুর দিকের ট্রেন্ড দেখে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন বিজেপির বিজয় সহজ বা বিশাল হবে না। গণনার দু’ঘণ্টা পর বিজেপি একক ভাবে ২৪২ আসনে এগিয়ে ছিল, যা ২০১৯ সালের তুলনায় ৬১ আসন কম। অন্য দিকে, কংগ্রেস ১০৫ আসনে এগিয়ে আছে, যা ২০১৯ সালের তুলনায় ৫৩ বেশি।

তবে কোন আসনেই ফলাফল ঘোষণা করা হয় নাই, এবং গণনার সাথে ট্রেন্ড-এর চিত্র পরিবর্তন হতে পারে। জোট হিসেবে এনডিএ-র লিড ২৯০ থেকে ৩০৫ এর মধ্যে ওঠানামা করছে, আর ‘ইন্ডিয়া’ জোটের লিড ২০০ থেকে ২২০ আসনের মধ্যে রয়েছে।

ভোট গণনার শুরুর দিকে অপ্রত্যাশিত ভাল ট্রেন্ড দেখে দিল্লিতে কংগ্রেস পার্টি অফিসে উল্লাস করছেন একজন সমর্থক। ফটোঃ ৪ জুন, ২০২৪।

বিশ্বের সব চেয়ে বড় নির্বাচন বলে পরিচিত এই প্রক্রিয়ায় প্রায় ১০০ কোটি মানুষ ভোটার ছিলেন, যার মধ্যে ৬৪ কোটি ২০ লক্ষ মানুষ ভোট দিয়েছেন বলে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে।

ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ, ৫৪৩-আসন বিশিষ্ট লোকসভার জন্য ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। যে দল বা জোট ২৭২ বা তার বেশি আসন পাবে, তারা দেশের পরবর্তী সরকার গঠন করবে।

প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে মূলত দুটি জোটের মধ্যেঃ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি-নেতৃত্বাধীন এনডিএ এবং বিরোধী কংগ্রেসের মিত্রদের নিয়ে গঠিত ‘ইন্ডিয়া’ জোট।

এনডিএ জয়লাভ করলে মোদী টানা তৃতীয়বারের মত প্রধানমন্ত্রী হবেন, তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু ‘ইন্ডিয়া’ জোট জয়ী হলে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন, তা এখনো নিশ্চিত না। বিরোধী জোট নির্বাচনী প্রচারণার সময় কোন নেতাকে তাদের ‘প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী’ হিসেবে উপস্থাপন করে নি।

এই নির্বাচনকে অনেকে মোদীর নেতৃত্বের গণভোট হিসেবে গণ্য করছেন। যদি ৭৩-বছর বয়স্ক বিজেপি নেতা জয়ী হন, তাহলে তিনি হবেন জাওাহারলাল নেহরুর পর ভারতের ইতিহাসে দ্বিতীয় রাজনিতিক যিনি টানা তৃতীয় বারের মত ক্ষমতায় আসলেন।

এক্সিট পোল বিতর্ক

সাত দফার নির্বাচন শনিবার শেষ হওয়ার পরে যে এক্সিট পোল বা বুথ ফেরত জনমত সমীক্ষা সংবাদমাধ্যম এবং সমীক্ষা সংস্থাগুলো করেছে, তাতে এনডিএ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পাবে বলে দেখা গেছে। তারা জানিয়েছে, এনডিএ হয় আগের বারের মতো ৩৫৩ (৬৫ শতাংশ) আসন পাবে বা তার থেকে আরও ১০ শতাংশ বেশি পেয়ে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে।

কিন্তু প্রায় প্রতিটি বিরোধী দল এই সমীক্ষার বিরোধিতা করে বলেছে, এর কোনো ভিত্তি নেই এবং অতীতে অনেকবারই বুথ ফেরত জরিপ বা এক্সিট পোল ভুল প্রমাণিত হয়েছে।

পাঁচ বছর আগে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ৩৭.৭ শতাংশ ভোট পেয়ে ৩০৩ আসনে জয়লাভ করে। তার বিপরীতে কংগ্রেস ১৯.৬৬ পেয়ে মাত্র ৫২ আসন পায়। অন্য দলগুলোর অনেকেই নির্দিষ্ট অঞ্চলে সীমাবদ্ধ, যেমন পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস (২২ আসন), তামিলনাডুতে ডিএমকে (২৩ আসন), অন্ধ্র প্রদেশে ইউভাজানা স্রামিকা র‍্যথু কংগ্রেস পার্টি (২৩ আসন), মহারাষ্ট্রে শিভ সেনা (১৮ আসন)।