পাকিস্তানে এক খ্রিস্টান ব্যক্তি ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গণপ্রহারে মারা গেছেন

ফাইল ফটোঃ করাচিতে পাকিস্তানের ক্রিস্টিয়ান সম্প্রদায়ের সদস্যরা ক্রিস্টিয়ানদের উপর হামলার প্রতিবাদ করছে, ১৭ অগাস্ট, ২০২৩।

মুসলিম সংখ্যাগুরু দেশ পাকিস্তানের পুলিশ ও নিহতের আত্মীয়রা সোমবার জানিয়েছেন, এক সপ্তাহ আগে বিতর্কিত ধর্ম অবমাননার অভিযোগে যে খ্রিস্টান ব্যক্তি গণ-হামলায় গুরুতরভাবে আহত হয়েছিলেন, তিনি মারা গেছেন।

নিহত ৭০ বছর বয়স্ক ব্যক্তির নাম নাজির মাসিহ। মাথায় মারাত্মক চোট নিয়ে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের কাছে সামরিক বাহিনী পরিচালিত একটি হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন।

সারগোদা শহরে ২৫ মে মাসিহ’র বাড়ির বাইরে সমবেত ক্ষুব্ধ জনতার হাত থেকে তাকে ও তার পরিবারের সদস্যদের উদ্ধার করা হয়েছিল এবং মাসিহকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

জনতা মাসিহের বাড়ি তছনছ করে দেয় এবং তার জুতোর দোকান পুড়িয়ে দেয়। তারা দাবি করে, তিনি ইসলামের পবিত্র গ্রন্থ কুরআনের অবমাননা করেছেন। এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে তার পরিবার প্রত্যাখ্যান করেছে।

সামাজিক মাধ্যমে সারগোদার একাধিক ভিডিওতে দেখা গেছে, খ্রিস্টানরা মাসিহ’র কফিন রাস্তা দিয়ে বহন করে নিয়ে যাচ্ছে এবং চিৎকার করে বলছে “সমস্ত প্রশংসা জিশুর” ও “জিশু মহান।” ওই কফিন কালো কাপড়ে ঢাকা ছিল এবং তার উপরে ছিল একটি ছোট ক্রুশ।

খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নেতারা সর্বসাম্প্রতিক এই গণপ্রহারের ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন এবং পাকিস্তানের সরকারের কাছে আবেদন করেছেন যাতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাকে সুনিশ্চিত করা হয় এবং বিতর্কিত ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ধর্মের নামে জনতাকে সহিংসতায় প্ররোচনা দিয়েছে যারা তাদের শাস্তি দেওয়া হয়।

পাকিস্তানের জারানওয়ালায় ক্রিস্টিয়ানদের উপর হামলার পর লাহোরে গির্জায় প্রার্থনা। ফাইল ফটোঃ ২১ অগাস্ট, ২০২৩।

চার্চ অফ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট বিশপ আসাদ মার্শাল সোমবার এক্স (সাবেক ট্যুইটার) হ্যান্ডেলে এক বিবৃতি পোস্ট করে বলেছেন, “আরও একবার, ঘৃণা আমাদের এমন এক জায়গায় নিয়ে এসেছে যেখান আমাদের প্রশ্ন করতেই হবে।”

ব্লাসফেমি আইন

পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী আইনের আওতায় গণ-হামলার সঙ্গে জড়িত কয়েক ডজন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মাসিহের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার যে অভিযোগ উঠেছে সেই বিষয়ে তারা তদন্তও শুরু করেছে।

ধর্ম অবমাননা বা ব্লাসফেমি পাকিস্তানে ভীষণ স্পর্শকাতর বিষয় এবং সামান্য অভিযোগেই কয়েক ডজন সন্দেহভাজনকে গণপ্রহারে হত্যা করা হয়েছে—এমনকি কিছু ঘটনা পুলিশি হেফাজতেই ঘটেছে।

সে দেশের ধর্মদ্রোহিতা বা ব্লাসফেমি আইন অনুযায়ী কুরআন বা ইসলাম ধর্মের অবমাননার ফলে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। যদিও এ পর্যন্ত কাউকেই এমন মামলায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়নি।

সমালোচকরা বহুদিন ধরে ধর্মদ্রোহিতা আইনের সংস্কার সাধনের আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, ব্যক্তিগত ঝামেলার নিষ্পত্তি করতে এই আইনের অপব্যহার করা হয় প্রায়শই।

পাকিস্তানে শত শত সন্দেহভাজন (এদের অধিকাংশই মুসলিম) জেল খাটছে কারণ বাহ্যিক চাপের ফলে বিচারপতিরা তাদের বিচারপ্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে যেতে পারছেন না।

পাকিস্তানে মানবাধিকারের অনুশীলন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্প্রতি তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, “যদিও ধর্ম অবমাননার কারণে কারাবন্দিদের অধিকাংশই মুসলিম, তবে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা অসমভাবে আক্রান্ত ও প্রভাবিত হয়েছে।”