চাঁদের দূরবর্তী ও দুর্গম অংশ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তনের ঐতিহাসিক যাত্রা শুরু করতে চলেছে চীনের চ্যাংই-৬ চন্দ্রযান। বিজ্ঞানীদের আশা, সৌরজগতের সূচনাকালের বিবর্তন সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর পেতে সাহায্য করবে এই নমুনা।
চীনের পুরাণমতে চাঁদের দেবীর নামানুসারে এই চন্দ্রযানের নাম রাখা হয়েছিল। চীনের দক্ষিণাঞ্চলে হাইনান দ্বীপ-রাজ্য থেকে চ্যাংই-৬ উৎক্ষেপণ করা হয়।
সম্পূর্ণ রোবটচালিত এই চন্দ্রযান রবিবার চাঁদের অনাবিষ্কৃত বিশাল অববাহিকা ‘সাউথ-পোল আইটকেন বেসিনে’ অবতরণ করে। চাঁদের ‘উল্টো পিঠে’ থাকা এই অববাহিকা পৃথিবী থেকে কোনও দিনই দেখা যায় না।
চীনের আগের চ্যাং’ই মিশন ২০২০ সালের ডিসেম্বরে চাঁদের পরিচিত অঞ্চল থেকে নমুনা সংগ্রহ করে এনেছিল, যার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ৪৪ বছর পর চাঁদ থেকে বস্তু সংগ্রহের বৈশ্বিক উদ্যোগ পুনরায় শুরু হয়।
সাবেক সোভিয়েত ইউনিনের উৎক্ষেপ করা মনুষ্যবিহীন লুনা ২৪ ১৯৭৬ সালে চাঁদের অপেক্ষাকৃত পরিচিত অঞ্চল মেয়ার ক্রিসিয়াম বা “সি অফ ক্রাইসেস” থেকে ১৭০.১ গ্রাম নমুনা সংগ্রহ করে আনে।
ছয়টি অ্যাপোলো মিশন (সবগুলোতেই মানুষ ছিল) ১৯৬৯ ও ১৯৭২ সালের মধ্যে ২২০০টি নমুনা সংগ্রহ করেছিল যার ওজন ছিল ৩৮২ কিলোগ্রাম।
ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা লুনার সায়েন্স দফতরের প্রধান জেমস কার্পেন্টার বলেন, চাঁদের নিকটবর্তী অংশ থেকে অ্যাপোলো মিশনের সংগৃহীত নমুনাগুলো থেকে আন্দাজ করা গিয়েছিল যে, সৌরজগত, পৃথিবী ও চাঁদে তীব্র মাত্রার বিস্ফোরণের ফলে চাঁদের দূরবর্তী প্রান্তে সাউথ-পোল আইটকেন বেসিন বা অববাহিকার সৃষ্টি হয়েছিল।
তিনি বলেন, “গোটা সৌরজগতের ইতিহাসে এটা সত্যিই একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, তবে এটা আদৌ ঘটেছিল কিনা তা নিয়ে কিছু বিতর্ক রয়েছে।”
চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের পর দুই কিলোগ্রাম চান্দ্র উপাদান ড্রিল, খনন ও সিল করতে চ্যাংই-৬ এর হাতে ১৪ ঘন্টা সময় ছিল। চাঁদের দূরবর্তী অংশ থেকে এই ধরনের নমুনা পৃথিবীতে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে প্রথম চন্দ্রযান হয়ে ওঠাই এর লক্ষ্য।
চ্যাংই-৬-এর সংগৃহীত নমুনাগুলো স্থানান্তরিত করা হবে এবং ল্যান্ডারের শীর্ষদেশে থাকা একটি রকেট বুস্টারে সিল করে রাখা হবে। এটি মহাকাশে আবার উড়ে যাবে এবং চাঁদের কক্ষপথে অন্য মহাকাশযানে যুক্ত হয়ে নমুনাগুলোকে স্থানান্তরিত করবে।
চীনের ইনার মঙ্গোলিয়ায় ২৫ জুন এই যান অবতরণ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চন্দ্রযানের গোটা পরিক্রমা ও যাত্রাজুড়ে ইতালি, ফ্রান্স, পাকিস্তানের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার মনুষ্যবাহী যান মহাকাশ ও চাঁদ সম্পর্কিত প্রশ্নগুলোর তথ্য সংগ্রহ করবে। এর মাধ্যমে চীনের মহাকাশ কর্মসূচির ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক গুরুত্ব প্রকাশ পাবে। আগামী দশকে চন্দ্রপৃষ্ঠে ঘাঁটি তৈরি করার জন্য চীন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমেছে।