‘ইউনিসেফ বাংলাদেশে শিশুবান্ধব বাজেট দেখতে চায়’, ওয়াইসি রিপ্রেজেন্টেটিভ স্ট্যানলি গ্যুয়েভা

জাতীয় সংসদে ইউনিসেফ ও পার্লামেন্টারি ককাস অন চাইল্ড রাইটস আয়োজিত ‘জাতীয় বাজেটে শিশুদের স্বার্থ রক্ষা: প্রাক-বাজেট ব্রিফিং’ শীর্ষক অনুষ্ঠান।

শিশুদের জন্য সুচিন্তিত বিনিয়োগের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন বাংলাদেশে ইউনিসেফের ওয়াইসি রিপ্রেজেন্টেটিভ স্ট্যানলি গ্যুয়েভা। বাংলাদেশে একটি শিশু বান্ধব বাজেটের প্রত্যাশা করেন তিনি।

“শিশুদের জন্য বিনিয়োগ করা শুধুমাত্র একটি নৈতিক বাধ্যবাধকতা নয়, বরং এটি একটি স্মার্ট অর্থনৈতিক কৌশল, যার মাধ্যমে অনেক ভালো প্রতিদান পাওয়া যায়;” আরো বলেন স্ট্যানলি গ্যুয়েভা।

সোমবার (৩ জুন) জাতীয় সংসদে ইউনিসেফ ও পার্লামেন্টারি ককাস অন চাইল্ড রাইটস আয়োজিত ‘জাতীয় বাজেটে শিশুদের স্বার্থ রক্ষা: প্রাক-বাজেট ব্রিফিং’ শীর্ষক অনুষ্ঠান স্ট্যানলি গ্যুয়েভাএ কথা বলেন।

“বাংলাদেশের উন্নয়নমূলক অগ্রযাত্রা বজায় রাখতে, শিশুদের জন্য বাজেটে দেয়া বরাদ্দের সম্পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করা অপরিহার্য;” তিনি যোগ করেন।

অনুষ্ঠানে, অর্থ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি এবং স্বাস্থ্য ও কল্যাণ বিষয়ক বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরামের সদস্যর এবং ইউনিসেফের বিভিন্ন উদ্যোগের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে ইউনিসেফ ও ‘বাংলাদেশ জেনারেশন পার্লামেন্ট (জেনপি)’র উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত শিশুরা শিশুকল্যাণের মূল খাতসমূহে বরাদ্দ বাড়ানো এবং তার কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিতকরণের জরুরি প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।

ইউনিসেফ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের একটি বিস্তৃত বিশ্লেষণ সংসদ সদস্যদের সামনে উপস্থাপন করে। বিশ্লেষনে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষাসহ গুরুত্বপূর্ণ খাতে বরাদ্দ ও বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রে উদ্বেগজনক প্রবণতা তুলে ধরা হয়।

আসন্ন বাজেটে এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা এবং এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সুপারিশমালা তুলে ধরেন তারা।

বাংলাদেশের আটটি বিভাগের প্রতিনিধিত্বকারী শিশুরা এই আয়োজনে অংশ নেয়। অনুষ্ঠানে তারা তাদের সমবয়সীদের উদ্বেগ ও আকাঙ্ক্ষার কথা তুলে ধরে।

কুড়িগ্রামের ১১ বছর বয়সী শিশু সাংবাদিক ওয়াইজ আবতী বলে, “আমরা যদি বাজেট আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে পারি, তাহলে সেটি আমাদের মতামত, দৈনন্দিন জীবনে আমরা যে বাধাগুলোর সম্মুখীন হই, সেগুলো এবং তার সঙ্গে আমাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য বিষয়গুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত চাহিদাগুলো প্রকাশ করতে সাহায্য করবে।”

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী বলেন, “প্রাক-বাজেট বিশ্লেষণে শিশুদের সম্পৃক্ত করার মানে হলো, তাাদের সক্রিয় নাগরিক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এবং জাতির ভবিষ্যৎ গঠনে তাদের মতামত যাতে শোনা হয়, তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ।”

“এই উদ্যোগে ইউনিসেফের সহায়তা, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক শাসন পদ্ধতি কায়েম করার ক্ষেত্রে আমাদের প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরে;” তিনি আরো বলেন।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে, আগের বছরের তুলনায় মোট বাজেটের আকার ১২ দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর জন্য বরাদ্দ আনুপাতিক হারে হ্রাস পেয়েছে। এই প্রবণতা শিশুদের কল্যাণ ও দেশের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে হুমকিস্বরুপ বলে উল্লেখ করা হয় অনুষ্ঠানে।

জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার এবং পার্লামেন্টারি ককাস অন চাইল্ড রাইটসের চেয়ারপারসন শামসুল হক টুকু বলেন, “বাজেটে বরাদ্দ দেয়া এবং এর বাস্তবায়নে যাতে দেশের প্রতিটি শিশুর কল্যাণ ও অধিকার নিশ্চিত করার প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন থাকে, তা নিশ্চিত করা নীতিনির্ধারক হিসেবে আমাদের কর্তব্য।”

স্বাস্থ্য খাত সম্পর্কে মত

বাংলাদেশ মাতৃমৃত্যু ও পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যু হ্রাসে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। তবে সবার জন্য সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা, ওষুধ ও সরঞ্জাম বাড়ানো এবং টিকাদান কার্যক্রমে অর্থায়ন বাড়ানোর প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিয়ে আসন্ন জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে জিডিপির ২ শতাংশ বিনিয়োগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

শিক্ষা খাত সম্পর্কে মত

বাংলাদেশ লিঙ্গ সমতা নিশ্চিতকরণসহ প্রায় শতভাগ শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করতে পেরেছে। শিক্ষা খাতে জিডিপির ৩ শতাংশ বিনিয়োগ নিশ্চিত করা এবং প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধি, পাঠ্যক্রম সংস্কার, শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও বিদ্যালয়গুলোকে তাপ প্রতিরোধী করার বিষয়ে মনোযোগী হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সামাজিক সুরক্ষা খাত সম্পর্কে মত

‘মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচি’ শিশুদের জীবনের শুরুর বছরগুলোতে তাদের পুষ্টি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। বাংলাদেশ সামাজিক সুরক্ষা খাতে যৌক্তিকভাবে সম্পদ বিনিয়োগ করলেও, যাদের বিশেষ প্রয়োজন, তাদের কাছে সেবা ঠিকমতো পৌঁছাতে পারছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।

‘ইউ-রিপোর্ট’ জরিপ

এ ছাড়া, ইউনিসেফ তরুণদের মতামতকে তুলে ধরার জন্য ২৮ হাজারের বেশি তরুণের মতামত নিয়ে একটি ‘ইউ-রিপোর্ট’ জরিপ পরিচালনা করেছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৮৪ শতাংশ মনে করে শিশুদের জীবনকে সরাসরি প্রভাবিত করতে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে আরো বেশি ব্যয় করা সরকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।