গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য বাইডেনের চাপের মধ্যে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১১জন ফিলিস্তিনি নিহত

দুই ফিলিস্তিনি বোন, সামার এবং সাহার খান ইউনিসের একটি বাসার ধ্বংসাবশেষে তাদের মা আমিরা আল-ব্রিমকে খুঁজছেন। ফটোঃ ৩ জুনে, ২০২৪।

সাংবাদিক ও ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সোমবার বলেন, ইসরায়েলের হামলায় গাজায় কমপক্ষে ১১ জন নিহত হয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ দিচ্ছে। যুদ্ধবিরতিতে প্রাথমিকভাবে যুদ্ধ বন্ধ করা এবং হামাসের হাতে আটক কিছু জিম্মিকে মুক্তি দেয়ার বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

সোমবার ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানায়, তাদের বাহিনী গাজা ভূখণ্ডে ৫০টির বেশি লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালিয়েছে এবং গাজার মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের রাফাহ শহরে স্থল সেনারা অভিযান চালিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সাথে শান্তি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং বলেছেন, এই পরিকল্পনা “ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তা স্বার্থকে এগিয়ে নেবে।”

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, ব্লিংকেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গালান্ট এবং ক্যাবিনেট মন্ত্রী বেনি গান্টজের সাথে পৃথকভাবে ফোনালাপ করেছেন এবং বলেছেন, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব “সকল জিম্মির মুক্তি নিশ্চিত করবে এবং গাজাজুড়ে মানবিক সহায়তা জোরদার করবে।”

প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ফাইল ফটোঃ ১৫ জুলাই, ২০২৩।

নেতানিয়াহুর ভঙ্গুর জোট

নেতানিয়াহু একটি ভঙ্গুর ডানপন্থী জোট সরকার এবং গাজা ও হামাসের জন্য ইসরায়েলের পরিকল্পনা সম্পর্কে তার দেশের বিরোধী পক্ষগুলোর তীব্র অভ্যন্তরীণ চাপের মুখোমুখি হয়েছেন।

তার মন্ত্রিসভার দুই ডানপন্থী সদস্য, জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গাভি এবং অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ শনিবার হুমকি দিয়েছেন যে, নেতানিয়াহু যদি বাইডেনের প্রস্তাবে রাজি হন তাহলে তার সরকারের পতন ঘটানো হবে।

শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, শান্তি চুক্তিতে প্রাথমিকভাবে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি থাকবে এবং আংশিক ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার এবং কিছু জিম্মিকে মুক্তি দেয়া হবে এবং মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে “সহিংসতার স্থায়ী অবসান”-এর আলোচনা করা হবে।

তিনি বলেন, “এই যুদ্ধ শেষ হওয়ার সময় এসেছে, পরবর্তী সময় শুরু হওয়ার সময় এসেছে।”

নেতানিয়াহু জোর দিয়ে বলেন, “ইসরায়েলের প্রস্তাবিত সঠিক রূপরেখা” অনুসারে এক পর্যায় থেকে পরবর্তী পর্যায়ে রূপান্তর “শর্তসাপেক্ষ” ছিল এবং এটি তার যুদ্ধের লক্ষ্য বজার রাখার কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছিল।

হোয়াইট হাউস জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কারবি। ফটোঃ ২৮ মে, ২০২৪।

'ইসরায়েলি প্রস্তাব'

হোয়াইট হাউস জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কারবি রবিবার বলেছেন, ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস যদি গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য ইসরায়েলের প্রস্তাবের সাথে একমত হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে ইসরায়েল সেই পরিকল্পনা গ্রহণ করবে।

“এই প্রস্তাব একটি ইসরায়েলি প্রস্তাব। আমাদের প্রত্যাশা হচ্ছে, হামাস যদি এই প্রস্তাব গ্রহণ করে – যেটা তাদেরকে দেয়া হয়েছিল, একটি ইসরায়েলি প্রস্তাব – তাহলে ইসরায়েল হ্যাঁ বলবে,” কারবি টেলিভিশন নেটওয়ার্ক এবিসি নিউজ-এর “দিস উইক” অনুষ্ঠানে বলেন।

মিশর, কাতার এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্ততাকারিরা প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দেয়া যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মিদের মুক্তির রূপরেখা মেনে নেয়ার জন্য দুপক্ষের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

হামাসের বিকল্প

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গালান্ট রবিবার বলেন, শান্তি প্রক্রিয়ার কোন পর্যায়েই তারা হামাসকে গাজার শাসক হিসেবে মেনে নেবে না। তিনি বলেন তারা হামাসের বিকল্প কে হতে পারে তা ভেবে দেখছেন।

“আমারা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক কার্যক্রম চালিয়ে যাবো, এবং একই সাথে হামাসের বিকল্প প্রশাসন কী হতে পারে, তা যাচাই করছে প্রতিরক্ষা কর্তৃপক্ষ,” গালান্ট এক বিবৃতিতে বলেন।

“আমরা গাজার কিছু এলাকা আলাদা করবো, সেখান থেকে হামাস কর্মীদের বের করবো এবং ভিন্ন একটি বাহিনী মোতায়েন করবো যারা বিকল্প প্রশাসন গড়ে তুলতে সক্ষম হবে – যে বিকল্প হামাসকে হুমকির মুখে রাখবে,” গালান্ট বলেন।

সম্ভাব্য বিকল্প কী হতে পারে, তার বিস্তারিত কিছু তিনি বলেন নি।

হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়েহ। ফাইল ফটোঃ ২৬ মার্চ, ২০২৪।

হামাসের দাবী

হামাসের দাবিগুলো হল গাজায় স্থায়ীভাবে আগ্রাসন বন্ধের নিশ্চয়তা, ভূখণ্ড থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার, ফিলিস্তিনিদের অবাধে চলাফেরা করার অনুমতি ও পুনর্নির্মাণ কাজের জন্য ত্রাণ সহায়তা।

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা এ ধরনের শর্ত নাকচ করেছেন এই বলে যে, এটা কার্যত ৭ অক্টোবরের আগের পরিস্থিতিতে ফিরে যাওয়ার সমতুল্য। সে সময় ইসরায়েল ধ্বংসের চেতনায় বলিয়ান হামাস গাজা শাসন করছিল। সে দিন হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলি সীমান্তের বেড়া পেরিয়ে এসে অতর্কিত হামলা চালালে যুদ্ধের সূচনা হয়। ইসরায়েলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই হামলায় ১,২০০ মানুষ নিহত হন এবং হামাসের হাতে জিম্মি হন ২৫০ জন।

এই হামলার প্রতিশোধ হিসেবে ইসরায়েল পাল্টাহামলা শুরুর করে, যার জেরে দরিদ্র ও উপকূলীয় ভূখণ্ডটিতে ৩৬ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এই তথ্য জানিয়েছেন। ইসরায়েলের দাবি, তাদের ২৯০ সেনা এই যুদ্ধে নিহত হয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্র হামাসকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে।

এই প্রতিবেদনের কিছু তথ্য এপি, এএফপি এবং রয়টার্স থেকে নেয়া হয়েছিল।