টানা বর্ষণে বণ্যা পরিস্থিরি অবনতি হয়েছে বাংলাদেশের সিলেট নগরীতে। রবিবার (২ মে) মধ্যরাত থেকে টানা ৭ ঘণ্টার অতিবৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের পানি নেমে আসায়, সুরমা নদীর পানি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। নদী উপচে জল ঢুকে সিলেট নগরীতে।
সিলেট নগরীর উপশহর, যতরপুর, মেন্দিবাগ, জামতলা, তালতলা, শেখঘাট, কলাপাড়া, মজুমদার পাড়া, লালদীঘিরপাড়, তোপখানা, কাজির বাজার, তেররতন, সোবহানীঘাটসহ অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
আবহাওয়া বিভাগের সিলেট অফিসের আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব আহমদ জানিয়েছেন, রবিবার সকাল ৬টা থেকে সোমবার (৩ মে) সকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটে ২২৬ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এরপর সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত আরো ২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
নগরীর লালাদিঘির পাড় এলাকার মামুন আহমদ বলেন, এমনিতেই ভারত থেকে নেমে আসা উজানি ঢলে সিলেটের বেশ কয়েকটি উপজেলায় অবস্থা ভয়াবহ। এরমধ্যে সুরমা নদী কানায় কানায় ভরে আছে কয়েকদিন থেকে। টানা বৃষ্টিতে বসত ঘরে পানি উঠেছে।
নগরের জামতলা এলাকার বাসিন্দা অনুপ চক্রবর্তী জানান, বাসায় হাঁটুপানি। আসবাবপত্রসহ অনেক মূল্যবান জিনিসপত্র পানিতে তলিয়ে গেছে।
তিনি আরো বলেন, “২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার পর যদি নদী খনন করা হতো, তাহলে বাসিন্দাদের এই দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।”
নগরীর মিরের ময়দান পায়রা এলাকার বাসিন্দা মো. আজমল আলী বলেন, নগরবাসীর দাবি একটাই, সুরমা নদী খনন। সুরমা নদী খনন করা হলে বন্যা থেকে নগরবাসী রক্ষা পাবেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আইনজীবী দেবব্রত চৌধুরী লিটন উল্লেখ করেন যে আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠায় নির্ঘুম রাত কাটছে সিলেটবাসীর। প্রথমে রাত ১টায়, পরে ৩টা ৫০ মিনিটে; দুইবার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে সবকিছু, পানি এখনো বাড়ছে।
তালতলা এলাকার বাসিন্দা রজত কান্তি গুপ্ত বলেন, “২০২২ সালের পর, ঘরে আবার পানি ঢুকলো। পরিবার নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছি। বন্যার আগে যদি নদী, ছড়া, খাল, বিল খনন করা হতো, তাহলে নগরীতে পানি ঢুকতো না।”
রবিবার (২ জুন) বিকেলে সিলেট নগরীর বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির খবর জানিয়েছিলেন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ।
তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, রবিবার বিকেল তিনটা পর্যন্ত সিলেট নগরীসংলগ্ন সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমা থেকে ১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো। রাতের এই অতি বৃষ্টিতে নতুন করে নিমজ্জিত হয়েছে সিলেটের অনেক এলাকা।
হাসপাতালে পানি
ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রশাসনিক বিভাগসহ কয়েকটি ওয়ার্ডে পানি ঢুকে পড়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। সোমবার (৩ জুন) ভোর থেকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান ফটকসহ আশপাশের এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
সেবা নিতে আসা রোগীর স্বজনরা জানান, ভোর থেকে হাসপাতালে পানি প্রবেশ করেছে। মেঝেতে যারা চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তড়িঘড়ি করে তাদের একজনের বিছানায় দুই রোগীকে জায়গা দেয়া হয়। এছাড়া, ওয়ার্ডে ময়লা-আবর্জনাযুক্ত পানি প্রবেশ করেছে
ওসমানী মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা যায়, ওসমানী মেডিকেল কলেজের উত্তরপাশ ঘেঁষে প্রবাহিত ছড়ার আশ-পাশে বিভিন্ন ভবন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মিত হয়েছে। এ কারণে ছড়া দিয়ে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক বাসিন্দা পানির প্রবাহ ওসমানী মেডিকেলের একমাত্র ড্রেনের সঙ্গে সংযুক্ত করেছেন। ফলে ড্রেন উপচে বৃষ্টির পানি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্রে প্রবেশ করে। এছাড়া প্যাথলজি বিভাগ, ২৬, ২৭ ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে হাঁটু সমান পানি রয়েছে।
এ বিষয়ে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজের নিচতলা পুরোটাতেই পানি ঢুকেছে। ২০২২ সালের বন্যার সময়ও পানি ঢুকে যায়। সংশ্লিষ্টদের বারবার জানানো হলেও, কোনো ধরনের ব্যবস্থা না নেয়ায় অতিবৃষ্টি হলেই পানি ঢুকে পড়ে হাসপাতালে।