বাংলাদেশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিদেশে চলে যাওয়া নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমীরের প্রশ্নের জবাবে পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্মাদক ওবায়দুল কাদের।
মির্জা ফখরুল শনিবার (১ জুন) প্রশ্ন করেছিলেন, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যরা কিভাবে দেশ ছাড়লেন? জবাবে ওবায়দুল কাদের রবিবার (২ জুন) বলেন “সরকারের কারা গিয়ে তাকে বিমানে তুলে দিয়েছে? কোন কর্তৃপক্ষ গিয়ে তাকে তুলে দিয়েছে? অন্ধকারে ঢিল ছুড়বেন না।”
ওবায়দুল কাদের বলেন, বেনজীর আহমেদের ঘটনা তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তদন্ত, মামলা, গ্রেপ্তার, সবকিছু একটা আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে।
“সরকার এখানে দুদককে এড়িয়ে আগ বাড়িয়ে কেন ব্যবস্থা নেবে? সরকারের দুর্নীতিবিরোধী যেসব সংস্থা আছে তাদের কোনো ব্যর্থতা থাকলে তারও বিচার হবে,” রবিবার (২ জুন) দুপুরে, ঢাকায় আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন।
একটি লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, দুর্নীতিতে অভিযুক্ত বেনজীর আহমেদ বিদেশে থাকলেও বিচার চলবে। দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে দেশে ফিরতেই হবে।
“সরকার কোনো ছাড় দেবে না,” আরো বলেন তিনি।
কাদের অভিযোগ করেন, ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়। “হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে বিএনপির দণ্ডিত পলাতক নেতা তারেক রহমান বিদেশে বিলাসী জীবনযাপন করছেন;” যোগ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দাবী করেন, দেশে ৭৫ পরবর্তীকালে কোনো শাসক ও সরকার দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার 'সৎ সাহস দেখাতে পারেনি।'
"শেখ হাসিনার সরকার তা দেখিয়েছে। ব্যক্তি দুর্নীতি করতে পারে। তবে দুর্নীতি করার পর সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি কী, সেটা দেখতে হবে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি," কাদের বলেন।
আলামগিরের প্রশ্ন: ‘বেনজীর কিভাবে সিঙ্গাপুর গেলেন’
বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থাকার পরও, বাংলাদেশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যরা কিভাবে দেশ ছাড়লেন, তা নিয়ে শনিবার (১ জুন) প্রশ্ন তোলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এক আলোচনা সভায় আলমগীর আরো বলেন, “সরকার শুধু বেনজীর ও আজিজ আহমেদ-কে (সাবেক সেনাপ্রধান) লালন-পালন করেনি, বরং অসংখ্য দুর্নীতিবাজ-কে প্রশ্রয় দিয়েছে।”
“এই ঘটনা, ‘অন্যায়কারীদের ছাড় দেয়া হবে না’ বলে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বক্তব্যকে নিছক লোকদেখানো ও প্রতারণা বলে প্রমাণ করে” আলমগীর যোগ করেন।
বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন, “আমি একটি গণমাধ্যমে দেখলাম, বেনজীর (সাবেক আইজিপি) ও তার পরিবার ৪ মে দেশ ছেড়ে সিঙ্গাপুরে গেছেন।”
তিনি প্রশ্ন করেন বেনজীর কিভাবে দেশ ছাড়লেন? আরো বলেন, “তার সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও ব্যাংক হিসাব জব্দ করার জন্য আদালতের আদেশ এবং তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলা দায়েরের পদক্ষেপের তাৎপর্য কী?”
“যখন বলা হলো তাকে কোথাও যেতে দেয়া হবে না, তখন তিনি কিভাবে সরকারের নাকের ডগার উপর দিয়ে সিঙ্গাপুর গেলেন;” আরো বলেন বিএনপি মহাসচিব।
সিঙ্গাপুরে বেনজীর
বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম শুক্রবার (৩১ মে) এবং শনিবার (১ জুন) সংবাদ প্রকাশ করেছে যে সাবেক আইজিপি বেনজীর গত ৪ মে, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সিঙ্গাপুর চলে গেছেন।
গত ৪ মে তিনি ঢাকা ত্যাগ করেছেন এবং সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স এর ফ্লাইটে সিঙ্গাপুর গেছেন, ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে ঢাকার সংবাদ মাধ্যমগুলো।
সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী ও তিন মেয়ের স্থাবর সম্পদ ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে এ পাঁচজনের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব এবং বিভিন্ন কোম্পানিতে তাদের নামে থাকা শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশও দেয়া হয়। চলমান এই পরিস্থিতি তৈরির আগেই গত ৪ মে সপরিবারে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন সদ্য অবসরে যাওয়া পুলিশের এই কর্মকর্তা।
বেনজীর আহমেদের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বলছে, গত ৪ মে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনের একটি ফ্লাইটে তিন মেয়ে, স্ত্রীসহ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যান তিনি। স্ত্রী জীশান মির্জার চিকিৎসাজনিত কারণে তারা সেদেশেই অবস্থান করছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য
শনিবার (১ মে) দুপুরে, ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বর্তমান অবস্থান নিয়ে সরকার নিশ্চিত নয়।
“তার দেশত্যাগের বিষয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়নি। ব্যক্তির অপরাধের দায় বাহিনী নেবে না। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ীই বেনজীর আহমেদের বিচার হবে;” আরো বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা, র্যাব ও বেনজীর আহমদ
২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়।
এই কর্মকর্তাদের মধ্যে র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. আনোয়ার লতিফ খানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথক এক ঘোষণায় বেনজীর আহমেদ এবং র্যাব ৭–এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), মাদক দ্রব্যের বিরুদ্ধে সরকারের লড়াইয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত।
এতে বলা হয়েছে যে, তারা আইনের শাসন, মানবাধিকারের মর্যাদা ও মৌলিক স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে ক্ষুণ্ন করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। র্যাব হচ্ছে ২০০৪ সালে গঠিত একটি সম্মিলিত টাস্ক ফোর্স। তাদের কাজের মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরাধীদের কর্মকান্ড সম্পর্কে গোপন তথ্য সংগ্রহ এবং সরকারের নির্দেশে তদন্ত পরিচালনা করা।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বা এনজিওদের অভিযোগ হচ্ছে যে, র্যাব ও বাংলাদেশের অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ২০০৯ সাল থেকে ৬০০ ব্যক্তির গুম হয়ে যাওয়া এবং ২০১৮ সাল থেকে বিচার বহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের জন্য দায়ী। কোনো কোনো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এই সব ঘটনার শিকার হচ্ছে বিরোধী দলের সদস্য, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা।