ভারতের নির্বাচন: বিজেপি এক্সিট পোলে এগিয়ে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত জিতবে কে?

ভারতে দু'জন নারী ভোট দেয়ার পর তাঁদের আঙ্গুলে মুছে ফেলা যায় না এমন কালি দেখাচ্ছেন। তাঁদের পাশে সাইনবোর্ডে হিন্দিতে লেখা আছে, "নির্বাচন গণতন্ত্রের গর্ব।" ফটোঃ ১ জুন, ২০২৪।

ভারতে সাত দফার ম্যারাথন নির্বাচন শনিবার শেষ হওয়ার পরে এক্সিট পোল বা বুথ ফেরত জনমত সমীক্ষার ফলও প্রকাশিত হয়েছে। অধিকাংশ সংবাদমাধ্যম এবং সমীক্ষা সংস্থা বিজেপি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সকে (এনডিএ) এগিয়ে রেখেছে। বস্তুত অনেকটাই এগিয়ে রেখেছে এবং তারা জানিয়েছে, এনডিএ হয় আগের বারের মতো মোট ৫৪৩ আসনের মধ্যে ৩৫৩ (৬৫ শতাংশ) আসন পাবে বা তার থেকে আরও ১০ শতাংশ বেশি পেয়ে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে।

প্রায় প্রতিটি বিরোধী দল এই সমীক্ষার বিরোধিতা করে বলেছে, এর কোনো ভিত্তি নেই এবং অতীতে অনেকবারই বুথ ফেরত জরিপ বা এক্সিট পোল ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বস্তুত হয়েছেও তাই। এর আগে ২০০৪ এবং ২০১৪ সালের বুথ ফেরত সমীক্ষা অনেকটাই মেলেনি এবং রাজ্য স্তরে বিধানসভা নির্বাচনে অসংখ্য বার বুথ ফেরত সমীক্ষা ভুল প্রমাণিত হয়েছে।

কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা জয়রাম রমেশ অভিযোগ করেছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অন্তত ১৫০ জন জেলা স্তরে ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট এবং কালেক্টারকে ফোন করে “নির্লজ্জভাবে ভয় দেখিয়েছেন।” এই যাবতীয় ‘চক্রান্ত’ সত্বেও শেষ পর্যন্ত বিরোধী ইন্ডিয়া অ্যালায়েন্স নির্বাচনে জিতবে বলে মন্তব্য করেছেন রমেশ।

ভারতের হায়দারাবাদে একজন তাঁর মোবাইলে এক্সিট পোলের খবর দেখচ্ছেন। ফটোঃ ১ জুন, ২০২৪।

কে কোথায় দাঁড়িয়ে?

গোটা প্রক্রিয়ায় যে প্রশ্ন নিশ্চিতভাবেই মানুষের মনে এসেছে তা হল ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) বা আরো নির্দিষ্টভাবে বললে নরেন্দ্র মোদি কি গত দু’বারের পারফরম্যান্স বজায় রেখে তৃতীয়বারের জন্য এককভাবে জিততে পারবেন?

স্বাভাবিকভাবেই এই প্রশ্নে ভারত বিভক্ত। নিশ্চিতভাবে এটুকু বলা যায় যে অতীতে নরেন্দ্র মোদির যে বিরোধিতা ছিল গত ১০ বছরে তা বেড়েছে, অর্থাৎ জনপ্রিয়তা খানিকটা কমেছে। মানুষ এখন অনেক খোলাখুলিই তাঁর বিরোধিতা করছেন, দৈনন্দিন জীবনে এবং সামাজিক মাধ্যমে। তারপরেও খুব জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না যে বিজেপি হারবে। এর কয়েকটি কারণ রয়েছে।

প্রথম কারণটি বলছিলেন, কলকাতার এক ট্যাক্সি চালক এবং আদতে বিহারের বাসিন্দা জদ্দু চৌধুরী। “ভারতের একজন শক্তিশালী নেতা দরকার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য, সেরকম নেতা মোদি ছাড়া আর কে আছেন?” প্রশ্ন চৌধুরীর।

নরেন্দ্র মোদীঃ এক্সিট পোলে এগিয়ে, কিন্তু ৪ জুনের ভোট গণনায় কোথায় থাকবেন? ফটোঃ ২৮ মে, ২০২৪।

ধর্মীয় গোষ্ঠীর সমর্থন

চৌধুরী দীক্ষা নিয়েছেন রামানন্দি নামে বৈষ্ণব ধর্মানুসারী কিন্তু হিন্দু দেবতা রামচন্দ্রের ভক্ত একটি ধর্মীয় গোষ্ঠী (সেক্ট) থেকে। ভারতে এইরকম হাজার হাজার ধর্মীয় গোষ্ঠী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে এবং মানুষ কোনো না কোনো ধর্মীয় গোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সদস্য। এই গোষ্ঠীগুলি সম্পর্কে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষ অবগত নন। কিন্তু এরা সামাজিক স্তরে শক্তিশালী এবং মোদির পিছনে রয়েছে।

ফলে এই ধরনের ধর্মীয় গোষ্ঠীর সমর্থন এবং আপাতদৃষ্টিতে সমাজের দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত অংশের মোদিকে সমর্থনের কারণে তাঁর জেতার সম্ভাবনা প্রবল। নিম্ন আয়ের মানুষের সঙ্গে কথা বললেই এটা স্পষ্ট হয়। যেমন, জগবন্ধু দাস নামে দক্ষিণ কলকাতার এক ক্যাফের কর্মীর বক্তব্য যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যথেষ্টই অনুদান গরিবকে দিয়েছেন। তাঁর প্রতি পশ্চিমবঙ্গের দরিদ্র মানুষ কৃতজ্ঞ।

“কিন্তু এই নির্বাচন তো প্রধানমন্ত্রী বাছার নির্বাচন, এখানে মমতাকে ভোট দেওয়া মানে তা নষ্ট করা। ২০২৬ সালে যখন বিধানসভা নির্বাচন হবে তখন মোদিকে নয়, মমতাকে ভোট দেব। কিন্তু এবারে দেব মোদিকে,” জগবন্ধু দাস বলেন।

নির্বাচনী প্রচারণায় বিরোধী গোষ্ঠী অর্থনীতি এবং উন্নয়নের উপর জোর দিয়েছে। ফটোঃ কলকাতা, ২৮ মে, ২০২৪।

যেহেতু ভারতের ১৪০ কোটি মানুষের মধ্যে প্রায় পঞ্চাশ কোটি খেটে খাওয়া মানুষ অর্থাৎ ‘ওয়াকিং ক্লাস’ অর্থাৎ জদ্দু বা জগবন্ধুর মত মানুষ, তাই ধরে নেওয়া যায় যে এদের বড় অংশের ভোট মোদি পাবেন।

ভারতে ক্ষমতায় থাকার দশ বছর পরেও মোদির জনপ্রিয়তা অন্তত উত্তর ভারতে এখনো অক্ষুন্ন। সেটাই ক্ষমতায় ফেরার জন্য তাঁর তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ কারণ হতে পারে, বলছিলেন ভারতের ফ্রন্টলাইন পত্রিকার সাবেক জেষ্ঠ সম্পাদক এবং বর্তমানে একটি সংবাদ বিষয়ক ওয়েবসাইটের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ভেঙ্কিটেশ রামাকৃষ্ণান।

“এটা নিয়ে সন্দেহ নেই যে উত্তর ভারতে মোদী বড় ফ্যাক্টর। এককভাবে যদি কোনো ফ্যাক্টরকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলতে হয়, তাহলে উত্তরে সেটা মোদী ফ্যাক্টর,” বললেন রামাকৃষ্ণান।

দক্ষিণে হাওয়া কোন দিকে?

ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে রামাকৃষ্ণান-সহ অন্যান্য সাংবাদিক, রাজনীতি বিশ্লেষক এবং সাধারন মানুষের সঙ্গে কথা বলে মোটামুটি ভাবে যেটা বেরিয়ে আসছে তা হল, ২০১৯ সালে বিজেপি যে সমস্ত রাজ্য থেকে ভালোরকম আসন পেয়েছিল সেখানে তা কমার সম্ভাবনা প্রবল। কিন্তু আবার যেখানে কম পেয়েছিল সেখানে বাড়ার একটা সম্ভাবনাও রয়েছে।

“যেমন ধরা যাক দক্ষিণ ভারতের কথা,” বললেন রামাকৃষ্ণান।

“দক্ষিণের বড় রাজ্য কর্ণাটকে অবশ্যই বিজেপির আসন কমার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০১৯ সালে কর্নাটকে ২৮-এর মধ্যে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ পেয়েছিল ২৭ আসন। এবারে সেটা অনেকটাই কমে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু আবার দক্ষিণেরই রাজ্য তেলেঙ্গানাতে তাদের আসন বা অন্ধ্রপ্রদেশে তাদের শরিক দল তেলুগু দেশম পার্টির আসন বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে,” বললেন রামাকৃষ্ণান।

অর্থাৎ একদিকে আসন হারানোর পাশাপাশি অন্যদিকে যে সমস্ত রাজ্যে অতীতে বিজেপি আসন পায়নি সেখানে পেতে পারে।

কংগ্রেসের কর্ণধার পরিবারঃ রাহুল, প্রিয়াঙ্কা এবং সোনিয়া গান্ধী। ফটোঃ ১৭ মে, ২০২৪।

নির্বাচন কমিশন নিয়ে অভিযোগ

বিরোধীদের সম্মিলিত অভিযোগ হচ্ছে যে, ভারতের নির্বাচন কমিশন তাদের নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে সরে বিজেপির হয়ে ভোট করাচ্ছে। বিজেপি যদি শেষ পর্যন্ত জিতে যায়, তবে সেটা নির্বাচন কমিশনের জন্যই হবে বলে প্রধান বিরোধী দলগুলি মনে করছে।

দিনকয়েক আগেই সামাজিক মাধ্যম ‘এক্স‘-এ তৃণমূলের এক সর্বভারতীয় মুখপাত্র এবং রাজ্যসভার এমপি সাকেত গোখলে লিখেছেন, “আমার প্রশ্ন হচ্ছে, গত ২২শে মে কমিশন কেন সুপ্রিম কোর্টকে বলল যে প্রথম পাঁচ দফার মোট ভোটারের সংখ্যা এখনই দেওয়া যাবে না কিন্তু আবার তিনদিন পরে তাদের মত পরিবর্তন করে পরিসংখ্যান দিয়ে দিল?

"দ্বিতীয়ত, ষষ্ঠ দফার নির্বাচনের তিনদিনের মধ্যে তারা ভোটার নিয়ে পরিসংখ্যান দিল কিন্তু প্রথম পাঁচ দফার পরিসংখ্যান তারা দিতে চায়নি। এটাই বা কেন? এই অদ্ভুত ব্যবহার কিছু অত্যন্ত জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সামনে আনছে,” গোখলে লিখেছেন।

বিজেপি এবং নির্বাচন কমিশন তাদের বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিজেপি জিতে গেলে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে যে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলবেন তা নিয়ে সন্দেহ নেই।

উত্তর প্রদেশের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যানাথ অযোধ্যায় রাম মন্দিরে প্রার্থনা করছেন। ফাইল ফটোঃ ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৩।

বিজেপির সমস্যার কিছু দিক

মোদি এবং বিজেপির দুশ্চিন্তার আরেকটা সম্ভাব্য কারণ দিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এবং রাজনীতি বিশ্লেষক অধ্যাপক মইদুল ইসলাম। নির্বাচন অর্ধেকের বেশি হয়ে যাওয়ার পরে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, “এবারে যে প্রথমে কিছুটা কম ভোট পড়ছে এটা বিজেপির জন্য চিন্তার। এর একটা কারণ হতে পারে, প্রধান যে দাবিগুলি বিজেপির পূর্ণ করার কথা ছিল যেমন কাশ্মীর থেকে সংবিধানের ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার বা রাম মন্দির নির্মাণ সেগুলি হয়ে গিয়েছে। ফলে তাদের নেতাকর্মীরা একটু উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন।

“অন্যদিকে অতীতের সমস্যাগুলি – যেমন কৃষির সংকট বা মুদ্রাস্ফীতি রয়ে গেল। কর্মহীনতা আরো বেড়ে গেল। ফলে একদিকে তাদের প্রধান হিন্দুত্ববাদী ভোটার অনুৎসাহিত এবং অন্যদিকে সাধারণ মানুষ অসন্তুষ্ট। বিজেপির জন্য এটা অবশ্যই বিরাট চিন্তার কারণ,” ইসলাম বলেন।

বিরোধীরা কি সংগঠিত হতে পারলেন?

সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে আজ থেকে ছয় মাস আগে যে অবস্থায় বিরোধীরা ছিলেন তার থেকে তারা অনেক বেশি সংগঠিত। সিনিয়র সম্পাদক এবং রাজনীতি বিশ্লেষক, যাকে ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কংগ্রেস পর্যবেক্ষক বলে মনে করা হয় সেই রশিদ কিদোয়াই বলছিলেন, ভারতে কোয়ালিশন রাজনীতি তখনই কাজ করে যখন অনেক সমশক্তির দলের জোটের মধ্যে একটি দল নিশ্চিতভাবে শক্তিশালী হয়, যেমন ২০০৪ সালে ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্সে (ইউপিএ) কংগ্রেস বা একসময়ে পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্টের মধ্যে সিপিআইএম অথবা বর্তমানে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটে বিজেপি নিজে।

“কিন্তু সমশক্তির অনেকগুলি দলের মধ্যে একতা থাকা মুশকিল কারণ তাদের কোনো নির্দিষ্ট এবং একক আদর্শ নেই। এই সমস্যা আজ থেকে ছয় মাস আগে অবশ্যই বিরোধী ইন্ডিয়া অ্যালায়েন্সের ছিল এবং এখনো যে নেই তা নয়। কিন্তু এর মধ্যে কতগুলো জিনিস আমরা দেখতে পেলাম,” কিদোয়াই বলেন।

“যেমন, দীর্ঘ নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় দ্বিতীয় দফা থেকে সম্ভবত বিরোধীরা বুঝতে পারলেন যে তাদের কিছু সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এই বোঝার অনেকগুলি কারণ আছে যার মধ্যে আমি যাচ্ছি না। কিন্তু যখন তারা এটা বুঝতে পারলেন তখন তাদের মধ্যে বেশ খানিকটা মসৃণভাবেই একটা সমঝোতা…একটা আদান-প্রদান… তৈরি হলো,” তিনি বলেন।

সমাজবাদীর প্রধান অখিলেশ যাদব (বাঁয়ে) এবং কংগ্রেসের প্রধান রাহুল গান্ধী একই মঞ্চে হাত মেলাচ্ছেন। ফটোঃ ২৮ মে, ২০২৪।

বিরোধীদের দৃষ্টিতে 'সুযোগ'

এই আদানপ্রদানের জায়গাগুলি ব্যাখ্যা করে কিদোয়াই বললেন, মাসছয়েক আগে যখন বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে বিভিন্ন বিরোধী দলের পরাজয় হয়েছিল, তখন ভারতের রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি আসনের (৮০) রাজ্য উত্তরপ্রদেশের প্রধান বিরোধী দল সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে জাতীয় স্তরে সবচেয়ে বড় বিরোধী দল কংগ্রেসের সম্পর্ক ভেঙে পড়েছিল।

“অথচ এখন সমাজবাদীর প্রধান অখিলেশ যাদব এবং কংগ্রেসের প্রধান রাহুল গান্ধী একই মঞ্চে হাত মেলাচ্ছেন, বক্তৃতা করছেন এবং হাজার হাজার মানুষ তাদের জনসভায় আসছেন। এটা কি করে সম্ভব হলো? আমার মতে, এটা সম্ভব হলো কারণ রাজনীতিবিদেরা সুযোগ বিষয়টা নির্বাচন বা রাজনীতি বিশ্লেষকদের থেকে অনেক দ্রুত ধরতে পারেন এবং তার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

“যখন নির্বাচনটা শুরু হল তখন অখিলেশ এবং রাহুল গান্ধী দুজনেই একটা ‘অপরচুনিটি’ (সুযোগ) হয়তো কোথাও দেখতে পেলেন এবং কাছাকাছি আসতে শুরু করলেন। এমনকি, যে কংগ্রেসের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের মুখ দেখাদেখি বন্ধ, সেই তৃণমূলের প্রার্থীকে উত্তরপ্রদেশের ভাদোই লোকসভা আসনে সমাজবাদী পার্টি এবং কংগ্রেস দু’জনেই সমর্থন দিয়েছে। এটাই সমঝোতা, এটাই আদানপ্রদান এবং এটা হঠাৎ করে একটা রূপ পেল। এই মুহূর্তে এটাই বিরোধীদের সবচেয়ে বড় জোরের জায়গা বলে মনে করছি,” বললেন রশিদ কিদোয়াই।

কংগ্রেসের প্রচেষ্টা

আন্তর্জাতিক স্তরে আরো এক সিনিয়র সাংবাদিক, লেখক এবং ভারতের রাজনীতি পর্যবেক্ষক দেবাশীষ রায়চৌধুরীও প্রায় অনেকটাই একই কথা বললেন, তবে কংগ্রেসের প্রসঙ্গে। তিনি মনে করেন, সাংগঠনিক ভাবে হয়তো কংগ্রেস আরো অনেক ভালো করতে পারত। তবে যোগাযোগের দিক থেকে, তারা ভালই করেছে।

“গত কয়েক মাসে তারা রাজনৈতিক আখ্যান (ন্যারেটিভ) নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে – যেটা একটা বিরাট ব্যাপার। তাদের ইশতেহারে তারা মানুষের জীবন-জীবিকার সমস্যা নিয়ে কথা বলে অবশ্যই একটা বার্তা দিয়েছে, যেটা বিজেপি স্পর্শ করেনি।

"প্রাক-নির্বাচন জরিপগুলি দেখিয়েছে যে চাকরি এবং মুদ্রাস্ফীতি ভোটারদের উদ্বেগের প্রধান কারণ। বারবার কংগ্রেসকে স্পর্শকাতর এবং সাম্প্রদায়িক বিতর্কে টেনে আনার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু সে সব এড়িয়ে কংগ্রেস বারবারই অর্থনীতি নিয়ে কথা বলেছে এবং ক্ষমতায় এলে জীবন যাপনের মান উন্নয়নে তাদের কর্মসূচি কি হবে তা নিয়ে প্রচার চালিয়েছে। আমার মনে হয়েছে যে প্রতিটি পর্যায়ের নির্বাচনের পরে তাদের আত্মবিশ্বাস উত্তরোত্তর বেড়েছে,” মন্তব্য দেবাশীষের।

কে এগিয়ে বা কে পিছিয়ে তা নিয়ে ব্যক্তিগত মতামত আগামী দুই দিনে আরও বেশি করে সামনে আসবে। আর ৪ জুনেই বোঝা যাবে তৃতীয় বারের জন্য মোদি হাওয়া কাজ করলো, নাকি যাবতীয় বুথ ফেরত সমীক্ষা হাওয়াতেই উড়িয়ে দিয়ে ফিরে এলো ২০০৪-এর পাঁচমেশালি জোট।