সংসদ সদস্য আনোয়ারুল হত্যার তদন্তে বাংলাদেশকে পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছে ভারত: দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র

নয়াদিল্লিতে সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। ৩০ মে, ২০২৪।

বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ঝিনাইদহ–৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের হত্যাকাণ্ডের তদন্তের অংশ হিসেবে বাংলাদেশকে পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছে ভারত। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এ কথা জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (৩০ মে) নয়াদিল্লিতে সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান তিনি।

জয়সওয়াল সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের দিক থেকে সরকার এ বিষয়ে চলমান তদন্তের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ পক্ষকে পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছে।”

জয়সওয়াল বলেন, এই বিশেষ মামলাটি ‘তদন্ত করা হচ্ছে’ এবং বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো সমন্বয় করছে এবং প্রয়োজনীয় তথ্য বিনিময় করা হচ্ছে।

ডিবিপ্রধান হারুন: সংসদ সদস্য আনোয়ারুল হত্যা মামলার তদন্তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে

এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানিয়েছেন, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যা মামলার তদন্তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ মে) বিকেলে ভারত থেকে দেশে ফেরার পর ঢাকা বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ।

হারুন অর রশীদ বলেন, “প্রমাণ পাওয়া গেছে এবং কিছু ডিজিটাল তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ফরেনসিক রিপোর্ট পাওয়ার পরই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।”

সঞ্জীভা গার্ডেনের সেপটিক ট্যাংক থেকে দেহাবশেষ উদ্ধারের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে উদ্ধার হওয়া দেহাংশগুলো এমপি আনারের। তবে ফরেনসিক রিপোর্ট পাওয়ার পর পুরো বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। শিগগিরই এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করা হবে।”

হারুন অর রশীদ বলেন, “কলকাতায় আমাদের তদন্ত সফল হয়েছে কারণ সেখান থেকে আমরা তথ্য পেয়েছি।”

দুই দেশের গোয়েন্দা তথ্যের সমন্বয় করে মামলার তদন্ত চলছে এবং এ কারণে ফলাফল ফলপ্রসূ হবে বলে দাবি করেন তিনি।

মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীন যুক্তরাষ্ট্রে আছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই মামলার আরেক অভিযুক্ত এখন নেপালে। ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।

তিনি বলেন, “আমরা নেপালের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি এবং ইন্টারপোলের মাধ্যমে শাহীনকে আমেরিকা থেকে ফিরিয়ে আনতে আমাদের সাহায্য করার জন্য আমরা ভারতের কাছে অনুরোধ করেছি।”

শাহীনকে দেশে ফিরিয়ে আনা হলেই এমপি আনার হত্যার মোটিভ জানা যাবে বলে জানান তিনি।

এমপি আনার হত্যার রহস্য উদঘাটনে ২৬ মে ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল কলকাতায় যায়।

উল্লেখ্য, চিকিৎসার জন্য ১১ মে ভারতে গিয়েছিলেন আনোয়ারুল আজীম। ১২ মে তার বন্ধু গোপালের বাড়িতে যান। ১৪ মে থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। আট দিন নিখোঁজ থাকার পর ২২ মে তাঁর খুন হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।

এ ঘটনায় ২২ মে একটি মামলা দাঁতের করা হয়।

ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর: সংসদ সদস্য আনোয়ারুল হত্যার উদ্দেশ্য এখনো জানা যায়নি

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী বিদেশে অবস্থান করায় হত্যার মূল উদ্দেশ্য এখনো জানা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান।

বুধবার (২৯ মে) ডিএমপি সদর দপ্তরে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “এমপি আনার হত্যার পেছনে উদ্দেশ্য কী- এটি বাংলাদেশ পুলিশ বা ভারতীয় পুলিশ এখনো পর্যন্ত বের করতে করতে পারেনি।”

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান। ৫ নভেম্বর, ২০২৩।

তবে পুলিশ কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের মূল হোতাকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবে বলেও জানান তিনি।

হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা গ্রেপ্তার হলেই উদ্দেশ্য জানা যাবে বলে জানান ডিএমপি কমিশনার।

হাবিবুর রহমান বলেন, এমপি আনোয়ারুল হত্যা মামলার প্রধান

অভিযুক্ত শাহীন এখন যুক্তরাষ্ট্রে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে কোনো বহিঃসমর্পণ চুক্তি নেই। তবে পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তাকে ফিরিয়ে আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের বক্তব্য

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের মৃত্যুরহস্য উদঘাটনে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

২৩ মে (বৃহস্পতিবার) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান তিনি।

হাছান মাহমুদ জানান, ভারতের কলকাতায় ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। ২৩ মে, ২০২৪।

হাছান মাহমুদ আরও বলেন, “আমাদের মিশন পুরো বিষয়টি নিয়ে কলকাতা পুলিশের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। যেহেতু তদন্তাধীন বিষয়, তাই এ নিয়ে বেশি কিছু বলা সমীচীন নয়।”

এর আগে ২২ মে (বুধবার) কলকাতায় বাংলাদেশ মিশন থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হাছান মাহমুদ জানিয়েছিলেন, কলকাতার যে ফ্ল্যাটে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, কলকাতা পুলিশ সেই ফ্ল্যাটে ঢুকে মরদেহ পায়নি।

তখন তিনি আরও বলেছিলেন, “আমরা আমাদের মিশনের মাধ্যমে খোঁজখবর রাখছি এবং মিশন থেকেও কলকাতা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। বিষয়টি তদন্তাধীন। তাই এর বেশি কিছু বলা সমীচীন নয়। আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে আরও যোগাযোগ রাখছে।”

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বক্তব্য

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের মরদেহ এখনো উদ্ধার করা যায়নি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ২৩ মে (বৃহস্পতিবার) বিকেলে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।

আসাদুজ্জামান খান বলেন, “আমরা এখনো লাশ উদ্ধার করতে পারিনি। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা সবকিছু উদ্ধার করতে না পারছি, ততক্ষণ আমরা আপনাদের কোনো তথ্য দিতে পারব না। আবারও বলছি, উভয় দেশের গোয়েন্দা সংস্থা এ বিষয়ে কাজ করছে।”

বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

তবে দুই দেশের গোয়েন্দা সংস্থাই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদেরসহ প্রায় সবকিছু শনাক্ত করেছে বলে জানান তিনি।

আসাদুজ্জামান খান বলেন, “যারা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তাদের শনাক্ত করার খুব কাছাকাছি আছি আমরা। শুধু ঘোষণা বাকি। দুই দেশের গোয়েন্দা সংস্থা একমত হলেই ঘোষণা দেওয়া হবে।”

আসাদুজ্জামান খান বলেন, “আমাদের পুলিশ, গোয়েন্দা, ভারতীয় পুলিশ ও গোয়েন্দারা কাজ করছে। আমরা নিশ্চিত যে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। যারা হত্যা করেছে তাদের থেকে শুনেছি, তবে আমরা এখনো লাশ উদ্ধার করতে পারিনি।”

এ হত্যাকাণ্ডে ভারতীয় কেউ জড়িত কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ভারতীয় জড়িত থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিইনি। তদন্ত চলছে। কারা জড়িত তা কিন্তু আমরা এখনো বলিনি। আমরা বলেছি যে, আমাদের একটি সাধারণ ধারণা আছে। সেই ধারণার ভিত্তিতেই আমরা কাজ করছি। এখন পর্যন্ত আমরা যে তথ্য পেয়েছি তা নিয়ে কাজ করছি।”

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য

এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ২৩ মে (বৃহস্পতিবার) বলেছিলেন, ঝিনাইদহ-৪ আসনের নিহত সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার ভারতে কোনো অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন কি না তা তদন্ত করে জানা যাবে।

তিনি আরও বলেন, “তদন্ত শেষ হওয়ার আগে আমি কিছু বলতে পারব না। আওয়ামী লীগে অপরাধীদের কোনো স্থান নেই।”

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

ওবায়দুল কাদের বলেন, জনপ্রিয়তার কারণে ঝিনাইদহ-৪ আসনে তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন আনোয়ারুল আজিম আনার। চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে ভারতীয় গণমাধ্যম। তাঁর মৃত্যুর পর এখন সেসব বিষয়ে তদন্ত চলছে।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, “অন্যায়কারী দলের লোক হলেও শেখ হাসিনা তাকে রেহাই দেন না। অপরাধের ব্যাপারে তিনি জিরো টলারেন্স নীতি মেনে চলেন।”

এসব অভিযোগের সময় ও সুযোগ নিয়েও প্রশ্ন তুলে ওবায়দুল কাদের বলেন, “(তাঁর) মৃত্যুর আগে আমাদের দেশের সাংবাদিকদের কোনো অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এ বিষয় কেন আসেনি?”