বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল: `আজিজ-বেনজীরের অপকর্মের দায় সরকারকে নিতে হবে’

মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ও সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের কথিত দুর্নীতি ও অপকর্মের জন্য সরকার দায়ী। তাঁদের অপকর্মের দায় সরকারকে নিতে হবে।

তিনি বলেন, সরকার দেশকে এমন ভয়াবহ অবস্থায় নিয়ে গেছে যে, গণমাধ্যমে একজন সাবেক পুলিশ প্রধানের দুর্নীতির অসংখ্য চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে।

বুধবার (২৯ মে) বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে দলটি।

মির্জা ফখরুল বলেন, “আপনি (প্রধানমন্ত্রী) তাঁকে (বেনজীর) লালন-পালন করেছেন। … অনেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা পাওয়ার পরও আপনারা তাঁকে আইজিপি বানিয়েছেন।”

তিনি বলেন, বাংলাদেশে লুটপাট, চুরি ও নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার অভিযোগে একজন সাবেক সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

মির্জা ফখরুল প্রশ্ন রেখে বলেন, এটা কি শুধু তাদের (আজিজ ও বেনজির) দায়? এ দায় জোর করে ক্ষমতায় থাকা এই সরকারের।

সাবেক সেনাপ্রধান ও আইজিপির অপকর্মের দায় নিয়ে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, “শুধু একজন আজিজ আর একজন বেনজীর নয়। আপনারা আজিজ, বেনজীরের মতো অসংখ্য মানুষকে লালন-পালন করেছেন, যারা জনগণের অর্থ লুটপাট করছে।”

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও অনুসারীরা কুখ্যাত বর্গিদের (সপ্তদশ শতাব্দীতে বাংলা অঞ্চলে ব্যাপক লুটপাটে লিপ্ত মারাঠা সাম্রাজ্যের ঘোড়সওয়ার) মতো জনগণের অর্থ লুটপাট করছে। তাদের একমাত্র কাজ বাংলাদেশের সম্পদ লুণ্ঠন এবং বিদেশে অর্থ পাচারের মাধ্যমে বিদেশে সম্পদ গড়ে তোলা।

মির্জা ফখরুল বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু করার দাবিতে বিএনপিসহ ৬৩টি বিরোধী দল দীর্ঘদিন ধরে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করছে।

তিনি বলেন, সরকার নিরপেক্ষ প্রশাসনের অধীনে নির্বাচন করতে অনিচ্ছুক, কারণ তারা খুব ভালো করেই জানে যে, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনে তারা ১০ শতাংশ আসনও পাবে না।

এমন পরিস্থিতিতে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে চলমান আন্দোলন বেগবান করতে সর্বস্তরের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জেগে ওঠার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।

আন্দোলনে বিএনপি নেতাকর্মীদের ত্যাগের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, এটা বৃথা যাবে না।

সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, জিয়াউর রহমান স্বৈরশাসন বাতিল করে বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করে আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছিলেন।

তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আওয়ামী লীগ নেতারা এখন জিয়াউর রহমান ও তাঁর বিধবা স্ত্রী খালেদা জিয়াকে নিয়ে কটূক্তি করছেন।

মির্জা আব্বাস বলেন, অনেকেই ভেবেছিলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াকে হত্যার মধ্য দিয়ে তারা ধ্বংস হয়ে যাবে। “এই দলকে কেউ ধ্বংস করতে পারবে না। এ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য বিএনপিকে হাজার বছর টিকে থাকতে হবে।”

‘সরকার কাউকে রক্ষা করবে না’: আজিজ-বেনজীর প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান রহমান

বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ ও পুলিশ প্রধান (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের দুর্নীতির অভিযোগের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, “সরকার কোনোরকম প্রটেকশন কাউকে দেবে না। আইন নিজের গতিতে চলবে।”

বুধবার (২৯ মে) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।

সাবেক সেনাপ্রধান ও পুলিশ প্রধানের অনিয়মের বিষয়টি নিয়ে সরকার বিব্রত কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে সালমান রহমান বলেন, “আমাদের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্পষ্টভাবে বলেছেন, কেউ যদি আইন ভঙ্গ করে তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখানে সরকারের বিব্রত হওয়ার মতো কোনো অবস্থা বলে আমি বিশ্বাস করি না।”

সালমান রহমান আরও বলেন, “আইন নিজের গতিতে চলবে। উনি (ওবায়দুল কাদের) বলেছেন, একজন লোক যতই প্রভাবশালী হোক না কেন, সরকার কোনোভাবেই কাউকে রক্ষা করবে না। আইন নিজের গতিতে চলবে।”

ভারতে বাংলাদেশের সংসদ সদস্য খুনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা সবাই এটা নিয়ে খুবই শকড হয়েছি। ঘটনাটি তদন্তাধীন আছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এটার বিষয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।”

বাজেটের পরে দ্রব্যমূল্যের ক্ষেত্রে নতুন কোনো অস্বস্তি তৈরি হবে কি না- জানতে চাইলে সালমান রহমান বলেন, “এটা তো হাইপোথেটিক্যাল কোশ্চেন। বাজেট কী হবে, বাজেটের পরে কী হবে, আমরা সুস্থ থাকব, না কি অসুস্থ থাকব, সেটা তো বাজেট দেখার পর আমি উত্তর দিতে পারব।”

এর আগে কল-কারখানা, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে দুর্ঘটনারোধ ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে গঠিত জাতীয় কমিটির তৃতীয় সভায় সভাপতিত্ব করেন তিনি।

সভায় কল-কারখানা, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে দুর্ঘটনা রোধ ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সভায় আরও ছিলেন- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের: ‘আজিজ ও বেনজীরকে নিয়ে বিব্রত নয় সরকার’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) বেনজীর আহমেদ ইস্যুতে সরকার বিব্রত নয়।

মঙ্গলবার (২৮ মে) দুপুরে ঢাকার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

“সরকারের বিচার করার সৎ সাহস আছে। সরকার তাদের অপরাধ অস্বীকার করে পার পেয়ে যাবার সুযোগ দেয়নি। দুর্নীতির ব্যাপারে সরকার আপোষহীন;” বলেন তিনি।

বেনজীরের বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত করছে বলে উল্লেখ করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, দুদক স্বাধীন। সরকার দুদককে স্বাধীনতা দিয়েছেন। দুদক জানিয়েছে, বেনজীর আহমেদের অবৈধ সম্পদের বিষয়ে তদন্ত এখনো চলছে এবং আরও তদন্ত করা হবে।

“যেহেতু তদন্ত চলছে, সেহেতু তাদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। শেখ হাসিনার শাসনামলে কোনো অপরাধী ছাড় পাবে না। সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ, তিনি যদি অপরাধী হন, তাঁর বিরুদ্ধেও তদন্ত করতে পারবে দুদক। অপরাধী হলে অপরাধের জন্য শাস্তি পেতেই হবে। তিনি যেই হোন;” যোগ করেন ওবায়দুল কাদের।

সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান, অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত ভিসা নীতির আওতায় নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

২১ মে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

“বাংলাদেশ সরকার দুর্নীতি দমনে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে এবং এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ অব্যাহত রাখবে;” যোগ করেন হাছান মাহমুদ।

তিনি বলেন, দুর্নীতি দমনে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করছে। “আমরা একসঙ্গে কাজ করতে চাই এবং তা অব্যাহত রাখবো;” আরও বলেন হাছান মাহমুদ।

এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত ভিসা নীতির আওতায় নেওয়া হয়নি। এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট, ফরেন অপারেশন অ্যান্ড রিলেটেড প্রোগ্রামস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস অ্যাক্টের ৭০৩১ (সি) ধারার আওতায়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ এবং সন্ত্রাসবাদ, মানবপাচার ও অন্য ইস্যুতে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করছে। সাবেক সেনাপ্রধানের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত প্রথমে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসকে জানানো হয় বলেও জানান তিনি।

বিষয়টি একজন সাবেক সেনাপ্রধানের সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়ায়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এ বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর বা স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদকে ‘উল্লেখযোগ্য দুর্নীতির’ সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে ‘ডেসিগনেট’ করেছে, বা তাঁর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

“আজিজ আহমেদ সরকারি প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করে উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে লিপ্ত হন, এবং তাঁর ভাইকে বাংলাদেশে অপরাধমূলক কাজের জন্য জবাবদিহিতা এড়াতে সহায়তা করেন,” ২০ মে (সোমবার) এক বিবৃতিতে স্টেট ডিপার্টমেন্ট জানায়।

স্টেট ডিপার্টমেন্টের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আজিজ অন্যায়ভাবে সামরিক কন্ট্রাক্ট প্রদানে তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করেন এবং নিজ সুবিধার জন্য সরকারি নিয়োগের বিনিময়ে ঘুষ গ্রহণ করেন।

“তাঁর কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়ায় জনগণের আস্থা দুর্বল করার জন্য অবদান রেখেছে,” বিবৃতিতে বলা হয়।

স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলে, আজিজের ‘ডেসিগনেশন’ বাংলাদেশে আইনের শাসন এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান জোরদার করতে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার আবারও ব্যক্ত করছে।

“যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সরকারি পরিষেবা আরও স্বচ্ছ, ব্যবসায়িক ও নিয়ন্ত্রক পরিবেশের উন্নয়ন এবং অর্থ পাচারসহ আর্থিক অপরাধ তদন্ত আর তার বিচারের মাধ্যমে দুর্নীতি-বিরোধী কার্যক্রম সমর্থন করে,” বিবৃতিতে বলা হয়।

এই ‘ডেসিগনেশন’ বা নিষেধাজ্ঞার ফলে, আজিজ আহমেদ এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা সাধারণভাবে যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশের অযোগ্য হবেন।

বেনজীর ও তাঁর পরিবারের জন্য দুদকের কমিটি

বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের দুর্নীতি তদন্তে কমিটি গঠন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

২২ এপ্রিল (বুধবার) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান কমিশন সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন।

তিনি বলেন, ৩১ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর ১ ও ২ এপ্রিল আরও কয়েকটি ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যমে একই ধরনের সংবাদ প্রকাশিত হয়।

প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে দুদক সচিব বলেন, এসব অভিযোগের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা, ২০০৭ এর বিধি নম্বর ৩ অনুযায়ী কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।

দীর্ঘ ঈদের ছুটি শেষে ১৮ এপ্রিল প্রথম বৈঠকে সাবেক আইজিপির দুর্নীতির বিষয়টি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন।

সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে তদন্ত শেষ করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।

এর আগে, পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। ২২ এপ্রিল (সোমবার) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সালাহউদ্দিন রিগ্যান। রিটে দুদক চেয়ারম্যান ও সচিবসহ চার জনকে বিবাদী করা হয়েছে।

টিআইবি

সংবাদপত্রে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সম্পদের যে খতিয়ান প্রকাশিত হয়েছে, সেটা তাঁর জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে খুবই অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।

তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “ক্ষমতার অপব্যবহার করে সম্পদ আহরণ বাংলাদেশে এখন স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। এই যে সাবেক আইজিপির বিশাল সম্পদের খতিয়ান প্রকাশিত হয়েছে, তা হতবাক করার বিষয়।”

“রিপোর্টে সম্পদের যেসব তথ্য প্রকাশিত হয়েছে সেটিকে নির্ভরযোগ্য বলতে হবে।” তাদের কাছে (পত্রিকার) লিখিত প্রমাণ আছে বলেও মনে করেন তিনি।

ইফতেখারুজ্জামান এর আগে বলেছিলেন, “আমাদের জানামতে দুদক চাইলে স্বপ্রণোদিত হয়ে যেটুকু তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, তা নিয়ে পদক্ষেপ নিতে পারে। অনুসন্ধান ও তদন্ত শুরু করতে পারে। এখন এটা কেন তারা করছে না, তা দুদকে (আপনারও) প্রশ্ন করা উচিত। তারা উত্তর দেবে, আমাদের কাছে অভিযোগ আসলে করবো। কিন্তু কেউ অভিযোগ করতে হবে, এমন বাধ্যবাধকতা নাই।”

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা, র‌্যাব ও বেনজীর আহমদ

২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‍্যাবের সাবেক সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও পররাষ্ট্র দফতর পৃথকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়।

ওই কর্মকর্তারা হলেন র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ, র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, র‍্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. আনোয়ার লতিফ খান। তাঁদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট।

এ ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর পৃথক এক ঘোষণায় বেনজীর আহমেদ এবং র‍্যাব ৭–এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব), মাদক দ্রব্যের বিরুদ্ধে সরকারের লড়াইয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত।

বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, তারা আইনের শাসন, মানবাধিকারের মর্যাদা ও মৌলিক স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে ক্ষুণ্ন করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। র‍্যাব হচ্ছে ২০০৪ সালে গঠিত একটি সম্মিলিত টাস্ক ফোর্স। তাদের কাজের মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরাধীদের কর্মকান্ড সম্পর্কে গোপন তথ্য সংগ্রহ এবং সরকারের নির্দেশে তদন্ত পরিচালনা করা।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বা এনজিওদের অভিযোগ হচ্ছে যে, র‍্যাব ও বাংলাদেশের অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ২০০৯ সাল থেকে ৬০০ ব্যক্তির গুম হয়ে যাওয়া এবং ২০১৮ সাল থেকে বিচার বহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের জন্য দায়ী। কোনো কোনো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এই সব ঘটনার শিকার হচ্ছেন বিরোধী দলের সদস্য, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা।