বিএনপি নেতা ফখরুল: ‘সহকর্মী ও কর্মকর্তাদের দুর্নীতির দায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মহাসচিব বলেছেন, দলের সহকর্মী ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির দায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ করা উচিত।

মঙ্গলবার (২৮ মে) ঢাকায়, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভার এ কথা বলেন তিনি।
ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও সাবেক কর্মকর্তাদের বিভিন্ন দুর্নীতির ঘটনা উন্মোচিত হওয়ার কথা উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, “লাগামহীন দুর্নীতি ও লুটপাটের জন্য সরকার কুখ্যাতি অর্জন করেছে।”

সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ ও সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদকে কারা পদোন্নতি দিয়েছে, সেই প্রশ্ন তোলেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “আজিজকে কে লালন-পালন করেছে? আজিজের অবস্থান কোথায় ছিলো এবং তিনি কোথায় উন্নীত হয়েছিলেন? এখন বেনজীর আহমেদের অসংখ্য অপকর্ম ও লুটপাটের ইতিহাস উন্মোচিত হচ্ছে।”

“এ ধরনের একটি বা দুটি ঘটনা নয়, আছে অসংখ্য। তাদের চারপাশে দুর্নীতি ছাড়া আর কিছুই নেই; যোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি আরো বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তাদের তথাকথিত নির্বাচিত প্রতিনিধি ও মধ্যরাতের নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্য, সবাই দুর্নীতিতে জড়িত। তারা সবাই অবৈধভাবে অর্জিত অর্থের ভারে ডুবে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

“ক্ষমতাসীন দলের নেতারা তাদের অবৈধ টাকায় বিদেশে সেকেন্ড হোম নির্মাণ করছেন। সাবেক ভূমি প্রতিমন্ত্রীর লন্ডনে ৩৬৫টি বাড়ি ছিলো;” উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল।

ব্যাপক দুর্নীতিতে সরকারের অস্তিত্ব কলঙ্কিত হয়েছে উল্লেখ করে, কোনো কৌশল ছাড়াই পদত্যাগের আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ওবায়দুল কাদের: ‘আজিজ ও বেনজীরকে নিয়ে বিব্রত নয় সরকার’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজির আহমেদ ইস্যুতে সরকার বিব্রত নয়।

মঙ্গলবার (২৮ মে) দুপুরে, ঢাকার ধানমন্ডিতে, আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। “সরকারের বিচার করার সৎ সাহস আছে। সরকার তাদের অপরাধ অস্বীকার করে পার পেয়ে যাবার সুযোগ দেয়নি। দুর্নীতির ব্যাপারে সরকার আপোষহীন;” যোগ করেন তিনি।

বেনজীরের বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত করছে বলে উল্লেখ করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, দুদক স্বাধীন। সরকার দুদককে স্বাধীনতা দিয়েছেন। দুদক জানিয়েছে, বেনজীর আহমেদের অবৈধ সম্পদের বিষয়ে তদন্ত এখনো চলছে এবং আরো তদন্ত করা হবে।

“যেহেতু তদন্ত চলছে, সেহেতু তাদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। শেখ হাসিনার শাসনামলে কোনো অপরাধী ছাড় পাবে না। সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ, তিনি যদি অপরাধী হন, তার বিরুদ্ধেও তদন্ত করতে পারবে দুদক। অপরাধী হলে অপরাধের জন্য শাস্তি পেতেই হবে। তিনি যেই হোন;” যোগ করেন ওবায়দুল কাদের।

বাংলাদেশের সাবেক সেনা প্রধানের ওপর নিষেধাজ্ঞা

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর বা স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রাক্তন প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদকে ‘উল্লেখযোগ্য দুর্নীতির’ সাথে সম্পৃক্ততার কারণে ‘ডেসিগনেট’ করেছে, বা তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

“আজিজ আহমেদ সরকারি প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করে উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে লিপ্ত হন, এবং তার ভাইকে বাংলাদেশে অপরাধমূলক কাজের জন্য জবাবদিহিতা এড়াতে সহায়তা করেন,” সোমবার (২০ মে) এক বিবৃতিতে স্টেট ডিপার্টমেন্ট জানায়।

স্টেট ডিপার্টমেন্ট-এর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আজিজ অন্যায় ভাবে সামরিক কন্ট্রাক্ট প্রদানে তার ভাইয়ের সাথে কাজ করেন এবং নিজ সুবিধার জন্য সরকারি নিয়োগের বিনিময়ে ঘুষ গ্রহণ করেন।

“তার কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়ায় জনগণের আস্থা দুর্বল করার জন্য অবদান রেখেছে,” বিবৃতিতে বলা হয়।

স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলে, আজিজের ‘ডেসিগনেশন’ বাংলাদেশে আইনের শাসন এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান জোরদার করতে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার আবারো ব্যক্ত করছে।

“যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সরকারি পরিষেবা আরো স্বচ্ছ, ব্যবসায়িক ও নিয়ন্ত্রক পরিবেশের উন্নয়ন এবং অর্থ পাচার সহ আর্থিক অপরাধ তদন্ত আর তার বিচারের মাধ্যমে দুর্নীতি-বিরোধী কার্যক্রম সমর্থন করে,” বিবৃতিতে বলা হয়।

এই ‘ডেসিগনেশন’ বা নিষেধাজ্ঞার ফলে, আজিজ আহমেদ এবং তার পরিবারের সদস্যরা সাধারণভাবে যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশের অযোগ্য হবেন।

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা, র‌্যাব ও বেনজীর আহমদ

২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‍্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়।

এই কর্মকর্তাদের মধ্যে র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ, র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. আনোয়ার লতিফ খানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথক এক ঘোষণায় বেনজীর আহমেদ এবং র‍্যাব ৭–এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব), মাদক দ্রব্যের বিরুদ্ধে সরকারের লড়াইয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত।

এতে বলা হয়েছে যে, তারা আইনের শাসন, মানবাধিকারের মর্যাদা ও মৌলিক স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে ক্ষুণ্ন করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। র‍্যাব হচ্ছে ২০০৪ সালে গঠিত একটি সম্মিলিত টাস্ক ফোর্স। তাদের কাজের মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরাধীদের কর্মকান্ড সম্পর্কে গোপন তথ্য সংগ্রহ এবং সরকারের নির্দেশে তদন্ত পরিচালনা করা।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বা এনজিওদের অভিযোগ হচ্ছে যে, র‍্যাব ও বাংলাদেশের অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ২০০৯ সাল থেকে ৬০০ ব্যক্তির গুম হয়ে যাওয়া এবং ২০১৮ সাল থেকে বিচার বহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের জন্য দায়ী। কোনো কোনো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এই সব ঘটনার শিকার হচ্ছে বিরোধী দলের সদস্য, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা।