ইউক্রেনের খারকিভ শহরে একটি বড় এবং ব্যস্ত হার্ডওয়্যার দোকানে রাশিয়ার বিমান হামলার পর অন্তত ১৪জন নিহত হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ রবিবার জানিয়েছে। শনিবারে এই হামলার পর মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে এবং কয়েক ডজন আহত হয়েছে।
আঞ্চলিক গভর্নর ওলেহ সিনিয়েহুবভ জাতীয় টেলিভিশনে বলেন, দুটি জিপিএস-নিয়ন্ত্রিত বোমা শনিবার বিকেলে শহরের একটি আবাসিক এলাকায় অবস্থিত এপিসেন্টার হাইপার মার্কেটে আঘাত হানে।
বোমাবর্ষণের ফলে মার্কেটে ব্যাপকভাবে আগুন ধরে যায় এবং ঘন কালো ধোঁয়ার এক বিশাল কুণ্ডলী আকাশে শত শত মিটার উপড়ে উঠে। স্থানীয় সরকারি বিচার দফতর থেকে জানানো হয়, ৪৩জন আহত হয়েছে।
খারকিভ শহরের মেয়র ইহর টেরেখভ বলেন, বোমাবর্ষণের সময় হার্ডওয়্যার দোকানে ১২০জন লোক উপস্থিত ছিলেন।
“আক্রমণটি শপিং সেন্টার লক্ষ্য করে চালানো হয়েছিল যেখানে অনেক মানুষ ছিল – এটা পরিষ্কারভাবে সন্ত্রাসবাদী কাজ,” টেরেখভ বলেন।
মস্কো ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক লক্ষ্যবস্তু আক্রমণ করার অভিযোগ অস্বীকার করে। তবে ইউক্রেনে তাদের ২৭ মাস ধরে চলা আক্রমেন কয়েক হাজার লোক নিহত এবং আহত হয়েছে।
সামাজিক মাধ্যম টেলিগ্রাম-এ লেখা এক পোস্টে ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইহর ক্লিমেঙ্কো বলেন যে আক্রমণের পর থেকে ১৬জন এখনো নিখোঁজ রয়েছে।
রুশ আক্রমণের মাত্রা বৃদ্ধি
রাশিয়ার সৈন্যরা খারখিভ সীমান্ত দিয়ে হামলা শুরু করে নতুন একটি রণাঙ্গন সৃষ্টি করার পর, গত এক সপ্তাহে এই শহরের উপর আক্রমণের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে দেখা গেছে।
রাশিয়া তার সীমান্ত থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে খারখিভ শহরের উপর যুদ্ধের পুরো সময় ধরে বোমাবর্ষণ করেছে। রাশিয়া ২০২২ সালে আক্রমণ চালানোর পর খারকিভের শহরতলিতে পৌঁছায় কিন্তু শহর দখল করতে ব্যর্থ হয়।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেন্সকি দেশের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য পশ্চিমা মিত্রদেশ গুলোর প্রতি আহবান জানিয়েছেন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রো সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ লেখা এক মন্তব্যে হার্ডওয়্যার দোকানের উপর হামলাকে “অগ্রহণযোগ্য” বলে বর্ণনা করেন।
আবাসিক ভবনে হামলা
শনিবার সন্ধ্যা বেলায় একটি ভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ১৩ লক্ষ বাসিন্দার এই শহরের কেন্দ্রস্থলে একটি আবাসিক ভবনে আঘাত হানে। রবিবার সকালের দিকে জানানো হয় যে হামলায় ২৫জন আহত হয়েছে।
ক্ষেপণাস্ত্রটি ভবনের নিচে ফুটপাথে কয়েক মিটার গভীর গর্ত সৃষ্টি করে। ভবনটিতে একটি পোস্ট অফিস, ক্যাফে এবং বিউটি পার্লার ছিল।
সীমান্তের ওপারে রাশিয়ার বেলগরদ অঞ্চলের গভর্নর জানান, শনিবার ইউক্রেনের আক্রমণে চারজন লোক নিহত হয়েছে।
আগুন নেভাতে ১৬ ঘণ্টা
ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্লিমেঙ্কো বলেছেন হার্ডওয়্যার কেন্দ্রে আগুন পুরোপুরি নেভাতে দমকল কর্মীদের ১৬ ঘণ্টা সময় লাগে। কেন্দ্রটির ১৩ হাজার বর্গমিটার এলাকা আগুন গ্রাস করে।
আরেক দফা আক্রমণ হতে পারে, এই ভয়ে উদ্ধারকারী, স্বাস্থ্যকর্মী এবং সাংবাদিকদের মাঝে-মধ্যে শহরের দুটি আক্রমণের ঘটনাস্থল থেকে দৌড়ে চলে হচ্ছিলো। সাম্প্রতিক কয়েকটি হামলার সময় দেখা গেছে রাশিয়ানরা একই জায়গায় দ্বিতীয় হামলা চালায়।
হার্ডওয়্যার কেন্দ্রের ২৬-বছর বয়স্ক কর্মী দমিত্র সিরোটেনকো আতঙ্কের বর্ণনা দেন।
“আমি আমার কর্মস্থলে ছিলাম। আমি প্রথম আঘাতের আওয়াজ পাই ... আমি আমার সহকর্মীর সাথে মাটিতে শুয়ে পড়ি। দ্বিতীয় একটি আঘাত আসে এবং আমাদের উপর ধ্বংসাবশেষের বিভিন্ন টুকরো এসে পরে। তারপর আমরা হামাগুড়ি দিয়ে উপড়ের দিকে যাই,” সিরোটেনকো বলেন।
জেলেন্সকি আক্রমণকে “রাশিয়ার পাগলামির আরেকটি উদাহরণ” হিসেবে নিন্দা করেন। “অন্য কোনভাবে এটার বর্ণনা করা যায় না।”
সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ লেখে এক মন্তব্যে জেলেন্সকি বলেন, খারকিভে বিমান সতর্কতা সাইরেন ১২ ঘণ্টা ধরে বহাল আছে। তিনি বলেন ২০০ জরুরী কর্মী এবং ৪০০ পুলিশ সদস্য আক্রমণের পর থেকে ঘটনাস্থলে কাজ করছে।