বাংলাদেশের উপকূলে প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল-এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত হচ্ছে, দেখা দিয়েছে অস্বাভাবিক জোয়ার। ভোলায় অন্তত ২০ জাজার মানুষ জলবন্দী হয়ে পড়েছে।
ইতোমধ্যেই ৮ লাখের বেশি মানুষকে আশ্রয়ে কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান।।
ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবেলায় বাংলাদেশের সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং অধীনে থাকা দপ্তর-সংস্থার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে, চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান উঠানামা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
ভোলায় অস্বাভাবিক জোয়ার
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার সাগর মোহনার দুর্গম ঢাল চর ও চর কুকরি মুকরি ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ারে, অন্তত ২০ হাজার লোক জলবন্দী হয়ে পড়েছে। অসংখ্য কাঁচাঘর বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।
মেঘনা নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রভাহিত হচ্ছে। এতে করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়ি বাধ হুমকির মুখে পড়েছে।
ঢাল চর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম জানান, তার ইউনিয়নের কোনো আশ্রয়কেন্দ্র নেই। সেখানে প্রায় ১২ হাজার লোক পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। নদী উত্তাল হওয়ায় সেখান থেকে মূল ভূখণ্ডে মানুষকে সরিয়ে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান তিনি।
চর কুকরি মুকরি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হাসেম বলেন, তার এলাকায় বেড়িবাঁধের বাইরে চর পাতিলাসহ বিভিন্ন এলাক প্রায় সাত হাজার লোক জলবন্দী অবস্থায় রয়েছে। অনেক আশ্রয় কেন্দ্রে এসেছেন।
“উঁচু স্থানে গবাদি পশু আশ্রয় নিয়েছে। তাদের শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কাচা ঘর বাড়ি ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মনপুরার হাজিরহাট ইউনিয়নের দাসের হাটের নিম্নাঞ্চল এবং কলাতলি, চর সামসুদ্দিন ও কাজির চর, চর নিজাম চার থেতদকে পাঁচ ফুট পানিতে প্লাবিত হয়েছে;” জানান চেয়ারম্যান আবুল হাসেম।
এদিকে ঘুর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সকাল থেকে জেলায় হালকা বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া বইছে। পাশাপাশি উত্তাল হয়ে উঠেছে মেঘনা নদী।
ভোলা জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান জানিয়েছেন, সন্ধ্যা পর্যন্ত দুর্গম চরাঞ্চল এলাকার প্রায় ৩৫ হাজার লোককে নিরাপদে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। রাতে আশ্রয় কেন্দ্রে খাবারের ব্যবস্থা করা হবে।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা খুলনায় ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি হচ্ছে সন্ধ্যা থেকে। ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি ৪ ফুট বেড়েছে সুন্দরবন এলাকায়।
সুন্দরবনে প্লাবন
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র ও পর্যটন স্পটের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির রবিবার বিকালে জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে মোংলা বন্দর চ্যানেলে চার ফুট পানি বেড়ে সুন্দরবন প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে সুন্দরবনে অবস্থিত করমজলের সরকারি বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র।
মোংলা নদীতে যাত্রীবাহী ট্রলার চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না ও পৌর মেয়র শেখ আব্দুর রহমান।
তারা জানান, ঝুঁকি এড়াতে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে জরুরি কাজ ও রোগীদের কথা চিন্তা করে মোংলা নদীতে ফেরি চালু রাখা হয়েছে। পৌর শহরের আশ্রয় কেন্দ্রে লোকজনকে আনার জন্য ব্যাপক তৎপরতা চালানো হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা
আবহাওয়া অফিসের দেয়া তথ্যানুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকিতে থাকা উপকূলীয় ১৬ জেলার মধ্যে রয়েছে; খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও চাঁদপুর।
সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ১০ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
এছাড়া, ফেনী, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮-১২ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মহাবিপদ সংকেত
পায়রা ও মংলা সমুদ্র বন্দরে চলছে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় রয়েছে।
কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার নদীবন্দরকে চার নম্বর সংকেত দেখিয়ে বন্দর এলাকা থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে বলা হয়েছে।
এছাড়া, অতি ভারী বর্ষণের কারণে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।
সর্বশেষ আবহাওয়া বুলেটিনে বলা হয়, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি শুরু হয়েছে।
আবহাওয়া বিভাগ বলেছে, ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র বাংলাদেশ অতিক্রম করার পর, এর নিম্নভাগ দেশের স্থলভাগ অতিক্রম করবে।
ঘূর্ণিঝড়টি রবিবার বিকাল ৩টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৩২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিলো।
ছুটি বাতিল
ঘূর্ণিঝড় রিমাল পরবর্তী সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশের সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং অধীনে থাকা দপ্তর-সংস্থার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
রবিবার সচিবালয়ে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এ ঘোষণা দেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান।
রবিবার (২৬ মে) সকালে বাংলাদেশের আবহাওয়া দফতর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় রিমাল সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪০০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৬০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ২৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিলো।
ঘূর্ণিঝড়টি আরো উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং ২৬ মে মধ্যরাত নাগাদ মোংলার কাছ দিয়ে, সাগর আইল্যান্ড (পশ্চিমবঙ্গ) এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি শুরু হয়েছে।
সাগর বিক্ষুদ্ধ
বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুদ্ধ রয়েছে।
পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোক ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ী অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধ্বস হতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলেছে আবহাওয়া বিভাগ।
চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে ফ্লাইট বন্ধ
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে, চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান উঠানামা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
আবহাওয়া দফতর চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলার পর, রবিবার (২৬ মে) দুপুর ১২টা থেকে ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তসলিম আহমেদ। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য ক্ষতি কমাতে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। বিমানবন্দরের সম্পদ এবং জনশক্তির নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় কর্তৃপক্ষ সজাগ রয়েছে।
এর আগে কলকাতা এবং কক্সবাজার বিমানবন্দরে ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রীর আহবান
ঘূর্ণিঝড় রিমাল বাংলাদেশের স্থলভাগের দিকে ধেয়ে আসার প্রেক্ষাপটে, উপকূলীয় ১৬ জেলার অধিবাসীদের দেরি না করে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান।
রবিবার (২৬ মে) সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে, সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এ অনুরোধ জানান। ইতোমধ্যেই ৮ লাখের বেশি মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমরা অতীতের অভিজ্ঞতা দিয়ে আরো সক্ষমতার সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলার জন্য সমস্ত প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।”
তিনি আরো বলেন, “আমি সবাইকে শেষবারের মতো আহবান জানাবো, কালবিলম্ব না করে সবাই নিরাপদ আশ্রয়ে যান।”
প্রতিমন্ত্রী জানান, মহাবিপদ সংকেত জারি করা হয়েছে। সন্ধ্যা নাগাদ ঝড়ের প্রথম ভাগ বাংলাদেশ অতিক্রম শুরু করবে। মধ্যরাতের মধ্যে ঝড়ের মূল অংশটি বাংলাদেশ অতিক্রম করবে।
উপকূল অতিক্রমের সময় ঝড়ের সর্বোচ্চ গতি হতে পারে ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার। ঝড়ের সময় উপকূলীয় এলাকায় ১০ থেকে ১২ ফুটের বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। জোয়ার থাকলে এটি আরো বেশি হবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ছুটি বাতিল
এদিকে, শনিবার (২৫ মে) থেকেই উপকূলীয় এলাকাসমূহের সকল ফায়ার স্টেশনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে সার্বিকভাবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দুর্যোগপ্রবণ এলাকার জনসাধারণকে সচেতন, সতর্ক ও সাবধান করছে ওই অঞ্চলের ফায়ার স্টেশনগুলো।
শনিবার দুপুরের পর থেকে সচেতনতা সৃষ্টির এই প্রচারণা চালাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস। ঘূর্ণিঝড়-পূর্ব, ঘূর্ণিঝড়ের সময় এবং ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী সকল কাজ কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বয় করতে ঢাকার সদর দপ্তরে একটি মনিটরিং সেল গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স।
এছাড়া খুলনা, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ এ বিষয়ে সার্বক্ষণিক নজরদারি করছে। এছাড়া এসব বিভাগের খোলা হয়েছে বিভাগীয় মনিটরিং সেল।
উদ্ধারকারী দলের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে উপকূলীয় এলাকাসমূহের সকল ফায়ার স্টেশনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। সকলকে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন।
দুর্যোগপ্রবণ এলাকার জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রতি ফায়ার স্টেশনে ফায়ারফাইটিং টিম, সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ টিম, প্রাথমিক চিকিৎসাকা প্রদানকারী দল এবং ওয়াটার রেসকিউ টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
এছাড়া, প্রয়োজনীয় সংখ্যক অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার সরঞ্জামসহ অ্যাম্বুলেন্স, চেইন স, হ্যান্ড স, রোটারি রেসকিউ স, স্প্রেডার, মেগাফোন, র্যামজ্যাক বা এয়ার লিফটিং ব্যাগ, ফাস্ট এইড বক্সসহ যাবতীয় সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী অনুসন্ধান ও উদ্ধারকাজসহ রাস্তাঘাট যান চলাচল উপযোগী করার কাজে ফায়ার সার্ভিস নিয়োজিত থাকবে। তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করবেন ফায়ার সার্ভিসের প্রশিক্ষিত সেচ্ছাসেবীরা। এসব এলাকায় জীবন ও মালামাল সুরক্ষা সংক্রান্ত যেকোনো কাজে ২৪ ঘণ্টা ফায়ার সার্ভিসের সেবা গ্রহণ করতে পারবে মানুষ।
সকল আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি প্রয়োজনে উপকূলবর্তী ফায়ার স্টেশনগুলোতেও সাধারণ জনগণ আশ্রয় নিতে পারবেন।
ফায়ার সার্ভিসের মনিটরিং সেল, কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষসহ সকল বিভাগীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সারাক্ষণ সংবাদ সংগ্রহে নিয়োজিত থাকবে।
যেকোনো জরুরি প্রয়োজনে সেবা গ্রহণের জন্য ফায়ার সার্ভিসের নিকটবর্তী ফায়ার স্টেশন, বিভাগীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের হটলাইন নম্বর ১৬১৬৩ অথবা কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেলের জরুরি মোবাইল নম্বর ০১৭৩০৩৩৬৬৯৯-এ ফোন করার জন্য সকলকে অনুরোধ জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।