তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি যাচাই করলো চীনের সামরিক মহড়া, বলছেন বিশ্লেষকরা

তাইওয়ানের জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় প্রকাশিত এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে চীনা গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার জি আনকে (ডানে) পর্যবেক্ষণ করছে তাইওয়ানের গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার মা কং (বামে); ২৩ মে, ২০২৪।

চীন শুক্রবার তাইওয়ানের আশপাশের এলাকায় পরিচালিত তাদের দুই দিনের বড় পরিসরের সামরিক মহড়া শেষ করেছে। এর আগে, তাইওয়ানের আশেপাশের এলাকায় ১১১টি বিমান ও ৪৬টি নৌযান মোতায়েন করে চীন।

তাইওয়ানের জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৮২টি চীনা সামরিক বিমান তাইওয়ান প্রণালীর মধ্যবর্তী রেখা অতিক্রম করেছে। এসব বিমানের কয়েকটি ‘২৪ নটিক্যাল মাইল’ লাইনের খুব কাছ দিয়ে উড়ে যায়। এই লাইনকে তাইওয়ান তাদের সীমানা বলে বিবেচনা করে।

এই সামরিক মহড়াকে তাইওয়ানের নতুন প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে এর জন্য 'শাস্তি' বলে বর্ণনা করেছে চীন। লাই চিং-তে একজন বিচ্ছিন্নতাবাদী; এমটাই মনে করে চীন। এই মহড়ার মূল লক্ষ্য ছিলো; সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী ও রকেট ফোর্সে ব্যবহার করে যৌথ সমুদ্র ও আকাশ যুদ্ধ প্রস্তুতির টহল সক্ষমতা, যৌথ যুদ্ধক্ষেত্র নিয়ন্ত্রণ এবং যৌথভাবে মূল লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুলভাবে আঘাত হানার সক্ষমতা যাচাই করা।

বেইজিং এই মহড়াকে “সম্পূর্ণ বৈধ ও প্রয়োজনীয়” বলে উল্লেখ করেছে। অন্যদিকে, চীনা সমারিক বাহিনী তাইওয়ান প্রণালীর শান্তি বিনষ্ট করছে বলে এর সমালোচনা করেছে তাইপে।আর, এই মহড়াকে “অযৌক্তিক উষ্কানি” বলে উল্লেখ করেছে।

গত ২০২২ সালের আগস্টের পর থেকে তাইওয়ানকে ঘিরে চীন তৃতীয় বারের মতো বড় পরিসরের সামরিক মহড়া চালালো। অনেক বিশ্লেষক বলছেন, গত ২০২২ ও ২০২৩ সালে পরিচালিত মহড়ার চেয়ে এবারের মহড়া তাইওয়ানের অনেক কাছাকাছি এলাকায় পরিচালনা করা হয়েছে।

আরো কিছু বিশ্লেষক বলেছেন, মহড়ার সময় চীনা সামিরিক বাহিনী এমন অনুশীলন করেছে যেন তাইওয়ানের সঙ্গে তারা সত্যিকারের যুদ্ধ পরিচালনা করছে।

তাইওয়ানের ন্যাশনাল পলিসি ফাউন্ডেশনের সামরিক গবেষক চিয়েহ চুং ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেছেন, চীনা সামরিক বাহিনী এই মহড়ায় তাইওয়ানের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে যৌথভাবে আঘাত হানা এবং যৌথভাবে বাধা দানের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে। এ ছাড়া, তাইওয়ানের মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানার বিষয়টিও গুরুত্ব পেয়েছে মহড়ায়।

তিনি আরো বলেন, এই মহড়ায় চীনা সামরিক বাহিনী যৌথ টহল পরিচালনার জন্য প্রথমবারের মতো উপকূল রক্ষী বাহিনীর জাহাজ মোতায়েন করেছে। আর, এগুলো মোতায়েন করা হয়, তাইওয়ানের অদূরবর্তী দ্বীপ কিনমেন ও মাতসু এর কাছাকাছি এলাকায়।

কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, তাইওয়ানের অদূরবর্তী দ্বীপগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য, চীনা সামরিক বাহিনীর সহায়ক হিসেবে কোস্টগার্ডের জাহাজগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

এসব দ্বীপের কাছে চালানো মহড়ার বাইরে, চীনা সামরিক বাহিনী তাইওয়ানের পূর্ব দিকে মহড়া চালিয়েছে। চুং ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, এর মানে হচ্ছে, পূর্ব তাইওয়ানের নৌ ও বিমান ঘাঁটিতে আক্রমনের সুযোগ যাচাই করছে চীন। ঐতিহ্যতগভাবে তাইওয়ান তাদের নৌ ও বিমান বাহিনীর সক্ষমতা সংরক্ষণের জন্য এই অঞ্চল ব্যবহার করে।

চুং আরো বলেন, “চীন যদি তাইওয়ানের পূর্বাঞ্চলে নৌবহর মোতায়েন করতে পারে এবং যদি সরাসরি নৌ ও বিমান বাহিনীর ওপর সরাসরি হামলা করতে পারে; তবে তাইওয়ানের সামরিক সক্ষমতা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে।” সম্ভাব্য চীনা আক্রমন মোকাবেলায় তাইওয়ানের কার্যকর সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এই মহড়ার উদ্দেশ্য হলো তাইওয়ানের সামরিক বাহিনী এবং জনগণের আত্মবিশ্বাসকে দুর্বল করার চেষ্টা; এ কথাও বলছেন অনেক বিশ্লেষক।

শুক্রবার চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র উ কিয়ান সতর্ক করে বলেন, যখনই “তাইওয়ানের স্বাধীনতাকামী বাহিনী” এমন কোন কাজ করবে, যা চীনকে উস্কে দেয়, তখনই বেইজিং এ ধরনের প্রচেষ্টা মোকাবেলায় আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে। পুনরেকত্রীকরণ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাইওয়ানের ওপর চীনা সামরিক বাহিনীর চাপ অব্যাহত থাকবে বলে উল্লেখ করেন উ কিয়ান।