পাকিস্তানে চলতি বছরে পঞ্চম সাংবাদিককে হত্যা করা হলো

সিন্ধ প্রদেশ, পাকিস্তান। আফগান-পাকিস্তান সীমান্ত।

পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলে সিন্ধ প্রদেশে একজন সাংবাদিককে চলতি সপ্তাহের শুরুতে গুলি করা হয়। কয়েকদিন সঙ্কটজনক অবস্থায় থাকার পর শুক্রবার তিনি মারা গেছেন। ২০২৪ সালে সে দেশে এই নিয়ে মোট পাঁচজন গণমাধ্যম কর্মীকে হত্যা করা হলো বলে জানা গেছে।

চিকিৎসক ও কর্মকর্তারা সাংবাদিক নাসরুল্লাহ গাদানির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। মঙ্গলবার সিন্ধ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে অজ্ঞাত পরিচয় আততায়ীদের গুলিতে আহত হওয়ার পর তার চিকিৎসা চলছিল প্রাদেশিক রাজধানী করাচির এক হাসপাতালে। এই হামলার দায় কেউ স্বীকার করেনি।

সক্রিয়বদী ও সহকর্মীরা বলেছেন, নিহত এই সাংবাদিক তার প্রতিবেদনে দরিদ্র সিন্ধ প্রদেশে প্লেগের মতো ছড়িয়ে পড়া নাগরিক সমস্যাগুলির উপর অব্যাহত ভাবে আলোকপাত করতেন। এই অঞ্চলের ক্ষমতাশালী সামন্ত প্রভুদেরও সমালোচনা করতেন গাদানি। এই কারণে পুলিশ তাকে বারবার আটক করেছে। পাকিস্তানি সাংবাদিক হামিদ মির তার এক্স (সাবেক ট্যুইটার) হ্যান্ডেলে এমনটাই উল্লেখ করেছেন।

গাদানির মৃত্যুর সংবাদে সাংবাদিক মহল ও সুশীল সমাজের সদস্যের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে; যার ফলে নিহত সাংবাদিকের জন্য ন্যায়বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ প্রদর্শন করা হয়।

প্রাদেশিক মুখ্যমন্ত্রী মুরাদ আলি শাহ এক বিবৃতিতে বলেন, “নাসরুল্লাহের পরিবার ও যে মিডিয়া সংস্থায় তিনি কাজ করতেন তাদের সঙ্গে আমিও গভীরভাবে শোকাহত ও দুঃখিত।” সিন্ধু প্রদেশে মিডিয়া কর্মীদের উপর সম্প্রতি বেশ কয়েকটি হামলার পিছনে শাহের সরকার রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন সমালোচকরা।

অধিকার বিষয়ক অগ্রণী স্বতন্ত্র পর্যবেক্ষকগোষ্ঠী,পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশন বলেছে, দেশে সাংবাদিকরা যে পরিস্থিতির মুখে পড়ছেন তা নিয়ে তারা “গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।” তারা গাদানির হত্যার তদন্ত করতে ও অপরাধীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে সিন্ধ সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে।

ইতোমধ্যে, কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস বা সিপিজে ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও কবি আহমাদ ফারহাদ শাহের অবস্থান অবিলম্বে প্রকাশ করতে পাকিস্তানকে চাপ দিয়েছে।

দেশের শক্তিশালী সামরিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সক্রিয়তাবাদের জন্য শাহকে অপহরণ করা হয়েছে বলে পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স বা আইএসআই-কে অভিযুক্ত করেছেন শাহের স্ত্রী সৈয়দা উরুজ জয়নব।

শুক্রবার ইসলামাবাদ হাই কোর্টের বিচারপতি এই মামলার শুনানির পর আইএসআই-সহ সে দেশের গোয়েন্দা বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের তলব করেছেন। পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে ২৯ মে। এইদিন ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের জবাব শোনা হবে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল শুক্রবার এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছে, “তার হাল-হকিকত এখনও অজানা। রাষ্ট্রের নিপীড়ন ও অতীতে বলপূর্বক নিরুদ্দেশ করে দেওয়ার বিষয়ে আহমাদ নির্ভীকভাবে কথা বলেছেন।”