ওবায়দুল কাদের: সংসদ সদস্য আনোয়ারুল ভারতে অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন কি না তদন্তে জানা যাবে

তেজগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে নবগঠিত যুব ও ক্রীড়া উপকমিটির সদস্যদের পরিচিতি সভায় ওবায়দুল কাদের। ২৩ মে, ২০২৪।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ঝিনাইদহ-৪ আসনের নিহত সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার ভারতে কোনো অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন কি না তা তদন্ত করে জানা যাবে।

তিনি আরও বলেন, “তদন্ত শেষ হওয়ার আগে আমি কিছু বলতে পারব না। আওয়ামী লীগে অপরাধীদের কোনো স্থান নেই।”

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে নবগঠিত যুব ও ক্রীড়া উপকমিটির সদস্যদের পরিচিতি সভায় এ কথা বলেন তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, জনপ্রিয়তার কারণে ঝিনাইদহ-৪ আসনে তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন আনোয়ারুল আজিম আনার। চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে ভারতীয় গণমাধ্যম। তাঁর মৃত্যুর পর এখন সেসব বিষয়ে তদন্ত চলছে।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, “অন্যায়কারী দলের লোক হলেও শেখ হাসিনা তাঁকে রেহাই দেন না। অপরাধের ব্যাপারে তিনি জিরো টলারেন্স নীতি মেনে চলেন।”

এসব অভিযোগের সময় ও সুযোগ নিয়েও প্রশ্ন তুলে ওবায়দুল কাদের বলেন, “(তাঁর) মৃত্যুর আগে আমাদের দেশের সাংবাদিকদের কোনো অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এ বিষয় কেন আসেনি?”

চিকিৎসার জন্য ১১ মে ভারতে গিয়েছিলেন আনোয়ারুল আজীম। ১৪ মে থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। আট দিন নিখোঁজ থাকার পর বুধবার তাঁর খুন হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।

কলকাতার অদূরে নিউ টাউনের একটি ফ্ল্যাটে তাঁকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

বুধবার ধানমন্ডির নিজ বাসভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “এ পর্যন্ত আমাদের কাছে যে তথ্য আছে, তাতে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আমাদের দেশের মানুষ জড়িত।”

অন্যদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ ড. হাছান মাহমুদ সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমের হত্যাকাণ্ড অত্যন্ত মর্মান্তিক, দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত উল্লেখ করে জানান, হত্যাকাণ্ডের মূল হোতাসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে।

বুধবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকেরা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সফরকালে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমের মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন করলে এ কথা বলেন তিনি।

কলকাতায় বাংলাদেশ মিশন থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হাছান মাহমুদ আরও জানান, কলকাতার যে ফ্ল্যাটে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, কলকাতা পুলিশ সেই ফ্ল্যাটে ঢুকে তাঁর লাশ পায়নি।

তিনি বলেন, “আমরা আমাদের মিশনের মাধ্যমে খোঁজখবর রাখছি এবং মিশন থেকেও কলকাতা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। বিষয়টি তদন্তাধীন। তাই এর বেশি কিছু বলা সমীচীন নয়। আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে আরও যোগাযোগ রাখছে।”

আনোয়ারুল আজিমের হত্যার বিচার চাইলেন তাঁর মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের মৃত্যুর বিচার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে যেন হয় সেই দাবি করেছেন তাঁর মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন।

বুধবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ দাবি জানান।

ডিএমপি গোয়েন্দা বিভাগের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আনোয়ারুল আজিম আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। ২২ মে, ২০২৪।

মুমতারিন ফেরদৌস বলেন, “আমি তাদের ফাঁসি দেখতে চাই। আজ আমি এতিম হয়ে গেছি। আমি তো এখনো আমার পড়াশোনাও শেষ করতে পারিনি।”

খুনিদের চেনেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমি কাউকে চিনি না, তবে আমি তাদের সম্পর্কে জানতে চাই। আমি ডিবি প্রধান হারুন-অর-রশীদকে অনুরোধ করেছি তাদের চিহ্নিত করে হত্যার মোটিভ উদঘাটন করতে।”

বাবার সঙ্গে শেষ কথোপকথন সম্পর্কে জানতে চাইলে মুমতারিন ফেরদৌস বলেন, “আমাদের ভিডিও কলে কথা হয়। সে সময় বাবা বলেছিলেন ভারত থেকে দেশে ফিরে আমার সঙ্গে কথা বলবেন।”

কাউকে সন্দেহ করছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমি কাউকে সন্দেহ করি না। তবে আমি তাদের দেখতে চাই, আমার সন্দেহের বিষয়টি পরে জানাব।”

হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তার করে এ হত্যাকাণ্ডের সূত্র খুঁজে বের করতে ডিবি পুলিশকে অনুরোধ জানান তিনি।

মুমতারিন ফেরদৌস বলেন, “বাবা বলেছিলেন, ভারত থেকে আসার পর তোমার পরীক্ষার রেজাল্ট দেখে নেব। আমার বাবা ১৪ বছর ধরে মিথ্যা মামলায় ছিলেন। ছোটবেলায় তাঁকে পাইনি। বড় হয়ে বাবাকে পেলাম, এখন তাঁকে হারালাম।”

ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ: সংসদ সদস্য আনোয়ারুলের হত্যাকারীরা বাংলাদেশি

এদিকে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের হত্যাকারীরা বাংলাদেশি বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশীদ।

ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ।

বুধবার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “হত্যাকাণ্ডের কারণ জানতে তদন্ত চলছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি যারা আছে তাদের প্রত্যেককে আমরা আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করব। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না।”

হারুন অর রশীদ বলেন, “আমরা ভারতীয় পুলিশের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যোগাযোগ করছি এবং হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচ্ছি, তবে এখনই কিছু প্রকাশ করতে পারছি না।”

হত্যার উদ্দেশ্য কী হতে পারে জানতে চাইলে হারুন অর রশীদ বলেন, “হত্যাকাণ্ডের পেছনের কারণ জানতে তদন্ত চলছে। পারিবারিক হোক বা আর্থিক বা স্থানীয় ইস্যু বা অপরাধীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য, আমরা তদন্তের মাধ্যমে সবকিছু বের করে আনব।"