বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল: ‘সাবেক সেনাপ্রধান আজিজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার জন্য সরকার দায়ী’

ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ২২ মে, ২০২৪।

বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার জন্য সরকার দায়ী বলে অভিযোগ করেছেন বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বুধবার (২২ মে) রাজধানী ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, “একজন সাবেক সেনাপ্রধানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জাতির জন্য অত্যন্ত লজ্জার বিষয়।”

তিনি আরও বলেন, “নিষেধাজ্ঞার জন্য এই সরকার দায়ী। তারা সেনাবাহিনীকে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করায় এ ঘটনা ঘটেছে। তারা সেনাবাহিনীকে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করত।”

জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে বর্তমান সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানোর কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, “বিভিন্ন গণমাধ্যম বিশেষ করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জেনারেল আজিজের অনিয়ম নিয়ে প্রতিবেদন পরিবেশন করেছে। কিন্তু সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। জাতির বদনাম করার, তার মর্যাদা ও সম্মান হ্রাস করার অধিকার কারও নেই।”

সেনাবাহিনীকে জাতির সবচেয়ে বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধু সরকারের কারণে সেনাবাহিনীর সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে, এটা দেশের জনগণ মেনে নিতে পারে না।

র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সরকার এ থেকে কোনো শিক্ষা নেয়নি। বরং তাদের কয়েকজনকে আইজিপি পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। আমি জানি না এটা (নিষেধাজ্ঞা) কতটা প্রভাব ফেলবে।”

সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে দেশের অন্য শক্তিগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে বলপ্রয়োগ করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “এটা শুধু বাংলাদেশের জন্যই দুর্ভাগ্যজনক নয়, লজ্জা ও অস্বস্তিরও বটে।”

সরকার পরিকল্পিতভাবে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ভোট নিয়ে জনগণের আগ্রহ না থাকায় নির্বাচন নিয়ে তাদের মধ্যে কোনো উৎসাহ দেখছি না। নির্বাচনি ব্যবস্থার ওপর জনগণ আস্থা হারিয়ে ফেলায় কোথাও নির্বাচন নিয়ে জনগণের মধ্যে কোনো আলোচনা হচ্ছে না।”

সরকার বাংলাদেশকে পরনির্ভরশীল ও পরাধীন দেশে পরিণত করে জাতির আত্মাকে ধ্বংস করছে বলেও অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, “তথাকথিত উন্নয়নের নামে ঋণের বোঝা ভারী হচ্ছে। সরকারের ব্যর্থতায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামও বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে মানুষ কোথায় যাবে?”

সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমের মরদেহ উদ্ধারের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “একজন সংসদ সদস্য যখন ভারতে গিয়ে নিখোঁজ হন, তখন বাংলাদেশ সরকার বা বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারত এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেনি। তাহলে আমরা কী বিশ্বাস করব?”

ভারতে এমপির মৃত্যুর পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র আছে কি না সে বিষয়েও তাদের দল নিশ্চিত নয় বলে জানান তিনি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ: সাবেক সেনাপ্রধানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা 'ভিসা নীতির আওতায় নয়’

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান, অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত ভিসা নীতির আওতায় নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। মঙ্গলবার (২১ মে) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আয়োজিত, মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

হাছান মাহমুদ বলেন, “বাংলাদেশ সরকার দুর্নীতি দমনে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে এবং এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ অব্যাহত রাখবে।”

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি আয়োজিত মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। ২১ মে, ২০২৪।

তিনি বলেন, দুর্নীতি দমনে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করছে। “আমরা একসঙ্গে কাজ করতে চাই এবং তা অব্যাহত রাখব।”

এক প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত ভিসা নীতির আওতায় নেওয়া হয়নি। এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট, ফরেন অপারেশন অ্যান্ড রিলেটেড প্রোগ্রামস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস অ্যাক্টের ৭০৩১ (সি) ধারার আওতায়।

তিনি জানান,যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ এবং সন্ত্রাসবাদ, মানবপাচার ও অন্যান্য ইস্যুতে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করছে। সাবেক সেনাপ্রধানের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত প্রথমে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসকে জানানো হয় বলেও জানান তিনি।

বিষয়টি একজন সাবেক সেনাপ্রধানের সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়ায়, হাছান মাহমুদ এ বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

বাংলাদেশের সাবেক সেনা প্রধানের ওপর নিষেধাজ্ঞা

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর বা স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদকে ‘উল্লেখযোগ্য দুর্নীতির’ সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে ‘ডেসিগনেট’ করেছে, বা তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

“আজিজ আহমেদ সরকারি প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করে উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে লিপ্ত হন, এবং তাঁর ভাইকে বাংলাদেশে অপরাধমূলক কাজের জন্য জবাবদিহিতা এড়াতে সহায়তা করেন,” সোমবার (২০ মে) এক বিবৃতিতে স্টেট ডিপার্টমেন্ট জানায়।

স্টেট ডিপার্টমেন্টের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আজিজ আহমেদ অন্যায়ভাবে সামরিক কন্ট্রাক্ট প্রদানে তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে কাজ এবং নিজ সুবিধার জন্য সরকারি নিয়োগের বিনিময়ে ঘুষ গ্রহণ করেন।

“তার কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়ায় জনগণের আস্থা দুর্বল করার জন্য অবদান রেখেছে,” বিবৃতিতে বলা হয়।

স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলে, আজিজের ‘ডেসিগনেশন’ বাংলাদেশে আইনের শাসন এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান জোরদার করতে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার আবারও ব্যক্ত করছে।

“যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সরকারি পরিষেবা আরও স্বচ্ছ, ব্যবসায়িক ও নিয়ন্ত্রক পরিবেশের উন্নয়ন এবং অর্থ পাচারসহ আর্থিক অপরাধ তদন্ত আর তার বিচারের মাধ্যমে দুর্নীতি-বিরোধী কার্যক্রম সমর্থন করে,” বিবৃতিতে বলা হয়।

এই ‘ডেসিগনেশন’ বা নিষেধাজ্ঞার ফলে, আজিজ আহমেদ এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা সাধারণভাবে যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশের অযোগ্য হবেন।