বাংলাদেশে উদযাপিত হয়েছে বুদ্ধ পূর্ণিমা

বুদ্ধ পূর্ণিমা বাংলাদেশজুড়ে উদযাপিত হয়েছে বুধবার। ২২ মে, ২০২৪।

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বুদ্ধ পূর্ণিমা বাংলাদেশজুড়ে উদযাপিত হয়েছে বুধবার (২২ মে)।

বৌদ্ধধর্ম মতে, খ্রিস্টপূর্ব ৫৬৩ সালের এই দিনে মহামতি গৌতম বুদ্ধ আবির্ভূত হয়েছিলেন। গৌতম বুদ্ধের শুভজন্ম, বোধিজ্ঞান ও মহাপরিনির্বাণ লাভ—এই তিন স্মৃতিবিজড়িত বৈশাখী পূর্ণিমা বিশ্বের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কাছে বুদ্ধপূর্ণিমা নামে পরিচিত।

তিনি ৩৫ বছর বয়সে সর্বোচ্চ জ্ঞান লাভ করেন এবং অবশেষে খ্রিস্টপূর্ব ৪৮৩ সালে ৮০ বছর বয়সে ‘নির্বাণে’ চলে যান।

বুদ্ধের মূল জীবনদর্শন হচ্ছে অহিংসা, সাম্য, মৈত্রী ও প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সহাবস্থান করা। অহিংসবাদের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধ বলেছিলেন, বৈরিতা দিয়ে বৈরিতা, হিংসা দিয়ে হিংসা কখনো প্রশমিত হয় না। অহিংসা দিয়ে হিংসাকে, অবৈরিতা দিয়ে বৈরিতাকে প্রশমিত করতে হবে।

বুদ্ধপূজা ও শীল গ্রহণ, পিণ্ডদান, ভিক্ষু সংঘের প্রাতরাশসহ নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে দিনটি উদ্‌যাপন করেছেন বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা। বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে দিনটি বাংলাদেশে ছিল সরকারি ছুটির দিন।

দিবসটি উপলক্ষে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, “বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আমাদের সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল ঐতিহ্য সব ধর্মের মানুষ বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে তাদের নিজ নিজ ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করে আসছে।”

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা এই ঐতিহ্যের চর্চা এবং বুদ্ধের মহান আদর্শকে ধারণ করে দেশের উন্নয়নে তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বৌদ্ধরা সমানভাবে অংশগ্রহণ করে আসছেন।

তিনি বলেন, “আমি আশা করি, তারা গৌতম বুদ্ধের আদর্শকে সমুন্নত ও লালন করে বাংলাদেশকে একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখবেন।”

এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।

বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে বুধবার বিকেলে বঙ্গভবনে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী রেবেকা সুলতানা বঙ্গভবনে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব বুদ্ধ পূর্ণিমা উদযাপন এবং বৌদ্ধ নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতারাও বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতিকে ফুলের তোড়া প্রদান করেন।

অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

এই আয়োজনে ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাসহ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী কয়েক শ আমন্ত্রিত ব্যক্তি অংশ নেন।

বুদ্ধপূর্ণিমা উদ্‌যাপনের জন্য বুধবার দেশজুড়ে বৌদ্ধবিহারগুলোতে বুদ্ধপূজা, প্রদীপ প্রজ্বালন, শান্তি শোভাযাত্রা, ধর্মীয় আলোচনা সভা, সমবেত প্রার্থনা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এ ছাড়া, সকাল ৮টায় রাজধানী ঢাকার শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত ‘জাতীয় সম্মিলিত শান্তি শোভাযাত্রা’ করে বাংলাদেশ বৌদ্ধ সাংস্কৃতিক পরিষদ।