সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের মতে বিশ্বের জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি মানুষ এমন দেশে বাস করেন যেখানে মুক্ত ভাবে মত প্রকাশ সংকটাপন্ন।
এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে কারণ অনেকগুলো দেশে ২০২৪ সালে নির্বাচন হবার কথা এবং সেখানে আর্টিকেল নাইন্টিন ইতোমধ্যেই দেখাচ্ছে তথ্যের নাগাল পেতে বাধা দেয়ার প্রচেষ্টার কথা। এই আর্টিকেল নাইন্টিন এ ব্যাপারে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
এই প্রতিবেদনের মতে,সামগ্রিক ভাবে প্রায় ৪২০ কোটি লোক অর্থাত্ বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৫৩% মানুষ এমন সব দেশে বাস করেন যেখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংকটের মুখে পড়েছে। আর মাত্র এক পঞ্চমাংশের একটু বেশি-২৩% মানুষ এমন দেশে বসবাস করেন যেগুলোকে মুক্ত কিংবা যেখানে বিধিনিষেধ কম বলে মনে করা হয়।
আর্টিকেল নাইন্টিনের নির্বাহী পরিচালক কুইন ম্যাককিউ লন্ডন থেকে ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “এটা যে শুধু খারাপ তা নয়, অর্ধেক পৃথিবীতে আপনি দেখবেন এই পরিস্থিতি অনেক খারাপ”।
দ্য গ্লোবাল এক্সপ্রেশান রিপোর্টে গত বার্ষিক প্রতিবেদনের চেয়ে লক্ষ্যযোগ্য পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। গত বছর আর্টিকেল নাইন্টিনের প্রতিবেদনে ছিল যে বিশ্বের জনসংখ্যার ৩৪ শতাংশ সেই সব দেশে বাস করেন যেখানে মুক্ত মত প্রকাশ সংকটের মুখোমুখি ছিল। গত এক দশক ধরে মুক্ত মতপ্রকাশের গোষ্ঠটি ৭৮টি দেশে অবনতিশীল পরিস্থিতির প্রমাণ দিয়েছে।
তার মূল্যায়নে আর্টিকেল নাইন্টিন ২৫টি সূচক বিশ্লেষণ করেছে ডার মধ্যে রয়েছে সংবাদমাধ্যম, ধর্ম এবং শিক্ষা ক্ষেত্রের স্বাধীনতা। তারা তারপর দেশ এবং অঞ্চলগুলোর শ্রেণী বিন্যাস করে মুক্ত, অল্প বিধিনিষেধ সম্পন্ন, কঠোর বিধিনিষেধ সম্পন্ন এবং সংকটাপন্ন এই চার ভাগে।
ম্যককিউ বলেন, এই শতকের যে কোন সময়ের তূলনায় অনেক বেশি লোক বাস করছেন সেই সব জায়গায় যেখানে মুক্ত মত প্রকাশ সংকটের মধ্যে আছে।
ম্যককিউ বলেন, “এটি বিশেষত চ্যালেঞ্জিংকারণ আমরাতো জানি সত্য, অবমুক্ত গণতন্ত্রের জন্য মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রয়োজনীয় পূর্বশর্ত”।
ম্যাককিউ’র মতে এ বছর ইতোমধ্যে যখন নির্বাচন চলছে তখন আর্টিকেল নাইন্টিন ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া , নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে রাষ্ট্র সমর্থিত প্রচারণার বিষয়গুলি লক্ষ্য করেছে।
ম্যাককিউ বলেন ভারতে মতামত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর আক্রমণ বিশেষ উদ্বেগের বিষয়।
ভারত তার ছয় সপ্তাহব্যাপী জাতীয় নির্বাচনের প্রায় শেষ পর্বে রয়েছে । এই নির্বাচনে ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তৃতীয় মেয়াদের জন্য সেই পদে থাকতে চাইছেন। এই দীর্ঘ সময় ধরে চলা নির্বাচন সম্পন্ন হবে ১ জুন এবং ভোট গণনা শুরু হবে ৪ জুন থেকে।
২০১৪ সালে মোদী প্রধান মন্ত্রী হওয়ার পর থেকে আর্টিকেল নাইন্টিনের বার্ষিক প্রতিবেদনের বিশ্লেষণে ভারত ২৫টি উপাদানের মধ্যে ২৪টিতেই পিছিয়ে গেছে। এ বছর এই প্রতিবেদনে ভারতকে “সংকটাপ্ন্ন”বলে শ্রেণীভুক্ত করা হয়েছে।
ম্যককিউ বলেন, ভারতে গুরুত্বপূর্ণ সাংবাদিক ও সংবাদ মাধ্যমের উপর আক্রমণ ১৪০ কোটি লোকের সেই দেশে মুক্ত ভাবে মত প্রকাশের বিরুদ্ধে বৃহত্তর হুমকিকে তুলে ধরেছে।
তাঁর এই তথ্য অন্যান্য নজরদারি গোষ্ঠীর উপাত্তেও সমর্থিত ।
দ্য কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টের মতে ২০১৯ সালে ভারতের গত সাধারণ নির্বাচনের সময় থেকে রেকর্ড সংখ্যক সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে কিংবা তাদের ফৌজদারি অভিযোগের সম্মুখীন হতে হয়েছে এবং অনেকগুলি সমালোচনামূলক সংবাদ মাধ্যমের উপর কথিত জালিয়াতি বা কর ফাঁকি দেয়ার অভিযোগে হানা দেয়া হয়েছে ।
ম্যককিউ বলেন, “ ভারত নিজেকে পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র বলে তুলে ধরে।বিশ্বে সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্র বলে পরিচিতি লাভের জন্য যে জিনিষটির প্রয়োজন তাকে যদি খর্ব করা হতে থাকে, তা হলে আর কতদিন লাগবে গণতন্ত্র হতে”?
ওয়াশিংটনে ভারতের দূতাবাস মন্তব্যের জন্য ইমেইলে ভয়েস অফ আমেরিকার ইমেইলের তাত্ক্ষণিক কোন জবাব দেয়নি।
গত বছরের প্রতিবেদনের পর অন্য যে সব দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পতন হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে বুরকিনা ফসো, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, ইকুয়েডার, ইথোপিয়া, মলদোভা, মঙ্গোলিয়া, সেনেগাল এবং টোগো। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বৈশ্বিক ভাবে মুক্ত মতপ্রকাশ অচলাবস্থায় রয়েছে।
তবে নির্বাচনগুলি মুক্ত মতপ্রকাশের জন্য ইতিবাচক প্রভাবও আনতে পার, যেমনটি দেখা গেছে ব্রাজিলে ক্ষমতাসীন ডানপন্থি প্রেসিডেন্ট জায়ের বলসোনারোর পরাজয়ের পর সাবেক প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দ্য সিলভার বিজয়ে।
২০২৩ সালের শুরুতে লুলা দ্য সিলভা প্রেসিডেন্ট পদ গ্রহণের পর , আর্টিকেল নাইন্টিনের মতে ব্রাজিলে মুক্ত মতপ্রকাশের সূচক ২৬ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়।
ব্রাজিল ছাড়া গত বছর অন্যান্য যে সব দেশে মুক্ত মতপ্রকাশের সূচক বৃদ্ধি পায় সেগুলো হচ্ছে ফিজি, শ্রীলংকা ও থাইল্যান্ড।