বাংলাদেশের অন্যতম নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, জাতীয় বা স্থানীয় সরকার নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য কত শতাংশ ভোট লাগবে, সে বিষয়ে কোনো বিধি, প্রবিধান বা বাধ্যবাধকতা নেই। সোমবার(২০ মে) নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।
“নির্বাচন কমিশন এটা নিয়ে মাথা ঘামায় না। ইসি যে কোনো হারেরই ভোটে সন্তুষ্ট হবে;” তিনি যোগ করেন।উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ায় যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে, সে প্রসঙ্গে এ কথা বলেন কমিশনার আলমগীর।
নির্বাচন কমিশনার আলমগীর আরো বলেন, ফসল কাটা, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া এবং প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর অনুপস্থিতির কারণকে অপ্রত্যাশিত ভোটার উপস্থিতি হয়েছে।
“এটা নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা বা অনাস্থার বিষয় নয়;” তিনি আরো বলেন। পছন্দের প্রার্থী না পাওয়া এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ভোটার উপস্থিতি কমেছে বলেও জানান তিনি।
“তবে কত শতাংশ ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক হবে, সে বিষয়ে ইসির কোনো বাধ্যবাধকতা নেই;” উল্লেখ করেন নির্বাচন কমিশনার আলমগীর।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও সহিংসতা মুক্ত করতে, নির্বাচন কমিশন সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষা ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বলেন, “সুষ্ঠু নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশন বদ্ধপরিকর। বিশ্বব্যাপী নির্বাচন নিয়ে মানুষের আগ্রহ কম দেখা যাচ্ছে এবং এটি আমাদের দেশের জন্য অনন্য কোনো সমস্যা নয়।”
কমিশনার আলমগীর বলেন, জনগণকে ভোট কেন্দ্রে না যেতে উদ্বুদ্ধ করতে, লিফলেট বিতরণ করছে বিএনপি। এটা তাদের রাজনৈতিক অধিকার এবং তারা তা করতেই পারে। তবে, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে ইসি।
দ্বিতীয় ধাপে ৪৫৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন
মঙ্গলবার (২১ মে) অনুষ্ঠিত হচ্ছে দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ৪৫৭ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে।
বিজিবির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২৩ মে পর্যন্ত বিজিবি সদস্য মোতায়েন থাকবে। 'ইন এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ার' এর আওতায়, অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে বিজিবি সদস্যরা।
গত ৮ মে প্রথম ধাপে ১৫০টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে সময় ৪১৮ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়।
প্রথম ধাপে ভোটার উপস্থিতি
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। গত ৮ মে বিকেলে রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।
হাবিবুল আউয়াল বলেন, “ বৃষ্টি ও ফসল কাটা নিয়ে ব্যস্ততার কারণে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যেতে অনীহা প্রকাশ করছে।” কয়েকটি অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানান হাবিবুল আউয়াল।
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দেশের ৫৯ জেলার ১৩৯টি উপজেলায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১৩৯টি উপজেলা পরিষদে প্রতিটি উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোট ৪১৭টি পদের বিপরীতে প্রায় ৫৭০ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ মোট ১ হাজার ৬৩০ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে ২ কোটি ৮০ লাখের বেশি ভোটার ছিলেন।
অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত বিএনপির
বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে উপজেলাসহ অন্য কোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) হাইকমান্ড।
১৬ এপ্রিল (মঙ্গলবার) দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষর করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
এতে বলা হয়, সোমবার (১৫ এপ্রিল) রাতে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বৈঠকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শেখ হাসিনার সরকার ও তাঁর আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন, বেসামরিক ও পুলিশ প্রশাসন একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে পারে না।
অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ নেই বলে উল্লেখ করে দলটি।
উপজেলা নির্বাচন
বাংলাদেশে চার ধাপে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২১ মার্চ (বৃহস্পতিবার) প্রথম ধাপের ১৫২টি উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। তফসিল অনুযায়ী, প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণ হয় ৮ মে।
দ্বিতীয় ধাপের ১৬১টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হবে ২১ মে। তৃতীয় ধাপে ১১২টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন ২৯ মে অনুষ্ঠিত হবে।
চতুর্থ ধাপের উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৫ জুন। চতুর্থ ধাপে ৫৪টি উপজেলায় ভোট হওয়ার কথা রয়েছে।