বাজেট ছোট করে রাখলে অনেক কিছু সীমিত হয়ে যায়: শিবলী রুবাইয়াত-উল- ইসলাম

শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম

পুঁজিবাজার একটি দেশের অর্থনীতির অন্যতম অনুষঙ্গ। শিবলী রুবাইয়াত-উল- ইসলাম বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের বাজেট কেমন হওয়া উচিৎ এ নিয়ে তার সঙ্গে কথা হয় ভয়েস অফ আমেরিকার। ভয়েস অফ আমেরিকার পক্ষ থেকে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মলয় বিকাশ দেবনাথ।

ভয়েস অফ আমেরিকা: কোন কোন খাতে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত? কেন?

শিবলী রুবাইয়াত-উল- ইসলাম: বাজেট আলোচনায় আমি আমার ক্যাপিটাল মার্কেট নিয়ে বলবো। আমি মনে করি ক্যাপিটাল মার্কেটে আরও ভালো ভালো কোম্পানি আসা উচিৎ। ভালো কোম্পানি আনার ক্ষেত্রে তাদের ইনসেনটিভ দেয়া প্রয়োজন। তা না হলে তারা মনিটরিং বা সুপারভিশনের মধ্যে আসতে চায় না। তারা ভাবে, এখানকার কর্পোরেট গভর্ন্যান্স বা যে নিয়মনীতি মেনে চলতে হবে তাতে একটা খরচ আসে যা অতিরিক্ত। এই ভেবে তারা আসতে চায় না। এক্ষেত্রে যারা লিস্টেড কোম্পানি তাদের ট্যাক্স কম রেখে আর যারা ননলিস্টেড তাদের ট্যাক্স প্রয়োজনে বাড়িয়ে দিয়ে একটা ডিফারেন্স ক্রিয়েট করা যায় তাহলে কোম্পানিগুলোকে ক্যাপিটাল মার্কেটের দিকে উৎসাহিত করা যেতে পারে। এবং এ বিষয়টি দেখার জন্য আমি এনবিআর কে অনুরোধ করবো।

পাশাপাশি অহেতুক কারো ওপর যেন ডাবল বা ট্রিপল ট্যাক্স চাপানো না হয় সে বিষয়ে খেয়াল করতে হবে। আর যারা অলরেডি ট্যাক্স দিচ্ছে তাদের ওপর চাপ না বাড়িয়ে ট্যাক্সের নেট বাড়াতে হবে। একই মানুষকে বারবার ট্যাক্স, ট্যাক্সের ওপর জরিমানা আবার হ্যারাসম্যান্ট এই ট্রেন্ড থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে। এসব কারনেও অনেকে ট্যাক্স দিতে চায় না। আমাদের প্রয়োজন ট্যাক্স নেট বাড়ানো, ট্যাক্সের চাপ বাড়ানো নয়। এবারের বাজেটে আমাদের অগ্রাধিকার দেয়া উচিৎ সতেরো কোটি মানুষের এম্প্লয়মেন্ট জেনারেশনকে। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি বলে আমি মনে করি।

ভয়েস অফ আমেরিকা: বাস্তবায়ন সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কী কী করা দরকার?

শিবলী রুবাইয়াত-উল- ইসলাম: এবারের বাজেটে যেসব বিষয়ে বাস্তবায়ন সক্ষমতা বাড়ানো দরকার সেগুলো হলো কারিগরি দিক এবং হাইটেক ইলেকট্রনিক ইন্ডাস্ট্রিগুলো। কেননা বাংলাদেশ অন্যান্য উন্নত বা উন্নয়নশীল দেশের মতো যে ধাপগুলো পার হয়ে আসার কথা অর্থাৎ যেটা টেক্সটাইল দিয়ে শুরু হয় সে ধাপ পার করে এসেছে।

এখন আমাদের মেকানিক্যাল, ইলেকট্রনিক, আইটি রিলেটেড ইন্ডাস্ট্রি আসতে শুরু হয়েছে এবং সামনের দিনগুলোতে আরও বাড়বে। তাই শিক্ষিত বেকার তৈরি না করে কারিগরি শিক্ষা যেমন ইঞ্জিনিয়ারিং, আইটি ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষার্থীদের এখন থেকে পারদর্শী করে তুলতে হবে।

ভয়েস অফ আমেরিকা: আয় বাড়ানোর জন্য কী করা দরকার?

শিবলী রুবাইয়াত-উল- ইসলাম: বাংলাদেশে ইঞ্জিনিয়ারিং এবং আইটি সেক্টরে অলরেডি কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়ে আছে। দক্ষ জনশক্তির অভাবে বিদেশীদের নিয়ে আসতে হচ্ছে। আমি মনে করি এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য আমাদের ছেলেমেয়েদের কর্মসংস্থানের উপযোগী করে তুলতে হবে। প্রয়োজনে ওদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ইনসেনটিভ দিতে হবে। আরেকটি বড় গ্যাপ রয়েছে মেডিকেল এবং নার্সিং সেক্টরে। সেখানে নজর দিতে হবে।

দেশে ডাক্তার নার্সদের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিদেশে পাঠানোর দিকেও নজর দিতে হবে। এতে রেমিট্যান্স বাড়বে পাশাপাশি আয়ও বাড়বে। এছাড়া প্রচুর বিদেশী নাগরিক অনেক অর্থ নিয়ে যাচ্ছে সেখানে সেভ হবে। ইয়াং জেনারেশন যাদেরকে আমরা দেশের জন্য ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বলি তাদের সঠিক শিক্ষা দিয়ে আয় উপার্জনের গন্ডিটাকে বড় করা সম্ভব।

ভয়েস অফ আমেরিকা: কোন কোন খাতে খরচ কমানো উচিত?

শিবলী রুবাইয়াত-উল- ইসলাম: খরচ কমানো না বলে আমি বলবো আমাদের আরও সাশ্রয়ী হতে হবে। কোথাও যদি অতিরিক্ত লোকবল থেকে থাকে তাদের অন্য জায়গায় সুযোগ করে দিয়ে সক্ষমতা বাড়ানোর দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। লেখাপড়ার ব্যাকগ্রাউন্ড অনুযায়ী কর্মক্ষেত্রে প্রবেশাধিকার দিতে হবে। তবেই কোয়ালিটি কাজ আসবে।

ভয়েস অফ আমেরিকা: আইএমএফ বাজেটের আকার ছোট রাখতে বলেছে, আপনি কী একমত? কেন?

শিবলী রুবাইয়াত-উল- ইসলাম: আইএমএফ বাজেট ছোট করতে বললেও আমি এ ব্যাপারে একমত নই। একটা উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে বাজেট ছোট করে রাখলে অনেক কিছু সীমিত হয়ে যায়। টার্গেট বড় থাকলে তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন না করতে পারলেও বাস্তবায়নের চেষ্টা থেকেও অনেকটা এগুনো যায়।

ভয়েস অফ আমেরিকা: কোন তিনটি খাতে সংস্কার সবচেয়ে জরুরি? কী করা উচিত?

শিবলী রুবাইয়াত-উল- ইসলাম: যে তিনটি খাতে সংস্কার সবচেয়ে বেশি জরুরি সেগুলো হলো ইন্ডাস্ট্রি এবং একাডেমির মধ্যে রিলেশনশিপ তৈরি করে ইন্ডাস্ট্রি যা চায় অর্থাৎ যে বিষয়গুলোর কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে সেসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করাতে হবে। যে বিষয়গুলোর কোন জব মার্কেট নেই সেগুলোকে বাদ দিয়ে যে বিষয়গুলোর ডিমান্ড রয়েছে সেগুলো কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এক কথায় শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। স্বাস্থ্যসেবায় একটা বড় রকমের সংস্কার প্রয়োজন। এখাতে বিপুল অঙ্কের টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে। হাসপাতাল এবং চিকিৎসা সেবা যদি আমরা ভালোভাবে দিতে পারতাম তাহলে বিপুল পরিমান লোকের মেডিকেল ট্যুরিজমের জন্য যে খরচটা হয় সেখান থেকে বের হয়ে আসতে পারতাম। আরেকটি খাত হচ্ছে অবকাঠামোগত খাত।

ভয়েস অফ আমেরিকা: বাজেট তৈরির সময় কোন কোন চ্যালেঞ্জ এর কথা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মাথায় রাখা দরকার?

শিবলী রুবাইয়াত-উল- ইসলাম: এখানেও আমি বলবো কর্মসংস্থান। কর্মসংস্থানের কথা মাথায় রাখলেই তা বিজনেসকে প্রমোট করা হয়। বিজনেসকে প্রমোট করতে পারলেই কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে। ভ্যাট, ট্যাক্স আহরনের গতি বাড়বে। সুতরাং কর্মসংস্থান, বিজনেস এক্সপানশন এবং দেশী বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানোর চ্যালেঞ্জ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মাথায় রাখতে হবে।

ভয়েস অফ আমেরিকা: গত পাঁচ বছরের বাজেট পর্যালোচনা করলে কোন দুর্বলতা সীমাবদ্ধতা বা ভুলগুলো চোখে পড়েছে? এগুলো এড্রেস করা হয়েছে কি? কী করা উচিত?

শিবলী রুবাইয়াত-উল- ইসলাম: এ বিষয়ে আমি দুর্বলতা বা সীমাবদ্ধতা বলবো না। বাজেট করলে অথবা যেকোন কাজ করলে কিছু ভূল ত্রুটি হতেই পারে এবং এটা খুবই স্বাভাবিক। এবার সেগুলোকে এড্রেস করে ঠিকঠাক করে নিলেই হবে। কাজ করলে ভূল হবে এ নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগার কিছু নেই।

ভয়েস অফ আমেরিকা: অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে লিঙ্গসমতা অর্জনের জন্য বাজেটে কী সংযোজন বা বর্জন করা যেতে পারে?

শিবলী রুবাইয়াত-উল- ইসলাম: আমাদের দেশে ছেলে মেয়ে উভয়েই দ্রুতগতিতে একসঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে। লিঙ্গ সমতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ব্যাপক এগিয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে মেয়েদেরকে ফ্রি করে দেয়া হয়েছে। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে আরও পাঁচ বছর প্রায়রোটি দিলে মেয়েরা আরও এগিয়ে যাবে। তবে শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাচ্ছি মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় বেশি ভালো করছে।