বর্তমানে জেন্ডার বলতে কিছু নেই: এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম

মাহবুবুল আলম

বাংলাদেশে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ‘কেমন বাজেট চাই’; এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ, অর্থনীতিবিদ এবং অংশীজনদের মতামত জানতে চেয়েছে ভয়েস অফ আমেরিকা। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম এ বিষয়ে তার মতামত জানিয়েছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রেদওয়ানুল হক।

ভয়েস অফ আমেরিকা: এবারের বাজেটে কোন কোন খাতে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত? কেন?

মাহবুবুল আলম: এবারের বাজেটে কৃষি খাতে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার। আমাদের অনেক কৃষি পণ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে; এগুলো কিভাবে হিমায়িত ব্যবস্থায় সংরক্ষণ করা যায় সে ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে এসব পণ্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানির ব্যবস্থা করতে হবে।

এছাড়া গ্যাস বিদ্যুৎ খাতে অগ্রাধিকার দেয়া দরকার। বর্তমানে শিল্পায়ন করতে গিয়ে গ্যাস বিদ্যুতের সংকট দেখা যাচ্ছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন যথেষ্ট হয়েছে, এখন ইমপ্লিমেন্টেশন জরুরী। সাপ্লাই চেইন স্বাভাবিক রাখতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে অগ্রাধিকার দিতে হবে। লজিস্টিক পলিসি প্রণয়নে অগ্রাধিকার দরকার। রপ্তানি খাতেও বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।

ভয়েস অফ আমেরিকা: বাজেট বাস্তবায়ন সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কী কী করা দরকার?

মাহবুবুল আলম: বাজেট বড় হতে হবে। এম্বিশন না থাকলে হবে না। কারণ আমাদের মার্কেটের সাইজ অনেক বড়। এক সময় মার্কেট অনেক ছোট ছিল। এখন ট্রিলিয়নের দিকে যাচ্ছে। আমরা ৩১তম অর্থনীতির দেশ। তবে সক্ষমতার জন্য অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে আয় বাড়াতে হবে।

ভয়েস অফ আমেরিকা: আয় বাড়ানোর জন্য কী করা দরকার?

মাহবুবুল আলম: আয় বাড়ানোর জন্য ট্যাক্স নেট বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে আওতা সম্প্রসারণ করে উপজেলা পর্যায়ে নেট বাড়াতে হবে। তাহলে ওখান থেকে অনেক আয় হবে। তবে ট্যাক্স আদায় সহজীকরণ করতে হবে। পোর্টের সমস্যা সমাধান করতে হবে। যেকোনমূল্যে সময়ক্ষেপণ বন্ধ করতে হবে। বর্তমানে পণ্য খালাসে ১০-১২ দিন লেগে যায়, সেটি ১-২ দিনে সম্ভব। এসব ঝামেলা কমলে অন্যান্য ব্যয় কমবে; ফলে ট্যাক্স ফাঁকির হার কমে যাবে।

ভয়েস অফ আমেরিকা: কোন কোন খাতে খরচ কমানো উচিত?

মাহবুবুল আলম: খরচ কমানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনুৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ বন্ধ করতে হবে। এক্ষেত্রে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি ভালভাবে করতে হবে। যাতে এমন কোন প্রকল্প না হয়, যেখান থেকে আয় আসবে না। এবার যেন কোন উচ্চাভিলাষী প্রকল্প না হয়। আমাদের অবকাঠামো খাতে যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছে; তাই আপাতত এ খাতে ব্যয় কম করতে হবে। লজিস্টিক পলিসি নেওয়া হয়েছে, সেটি বাস্তবায়ন করতে হবে।

ভয়েস অফ আমেরিকা: আইএমএফ বাজেটের আকার ছোট রাখতে বলেছে, আপনি কী একমত? কেন?
মাহবুবুল আলম: না , বাজেট বড় হতে হবে। এম্বিশন না থাকলে হবে না। বাজেট ছোট করার ক্ষেত্রে আইএমএফ এর লজিক নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু আমাদেরও লজিক আছে। আমাদের অর্থনীতির স্বাস্থ্য বড় হচ্ছে, অভ্যন্তরীণ বাজার বড় হচ্ছে। এখন আমরা ৩১ তম অর্থনীতির দেশ ২০৩০ এর মধ্যে ২৫তম অর্থনীতির দেশ হব।

ভয়েস অফ আমেরিকা: কোন তিনটি খাতে সংষ্কার সবচেয়ে জরুরি কেন? কী করা উচিত?

মাহবুবুল আলম: আর্থিক খাতের সংস্কার জরুরী। এছাড়া পোর্ট এবং কাস্টমস খাতে সংস্কার করতে হবে। এক্ষেত্রে কস্ট কমানো দরকার। তৃতীয়ত, ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো জরুরি, এটি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।

ভয়েস অফ আমেরিকা: বাজেট তৈরির সময় কোন কোন চ্যালেঞ্জের কথা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মাথায় রাখা দরকার?

মাহবুবুল আলম: অভ্যন্তরীণ সম্পদ বাড়ানো এবারের বাজেটের বড় চ্যালেঞ্জ।

ভয়েস অফ আমেরিকা: গত পাঁচ বছরের বাজেট পর্যালোচনা করলে কোন দুর্বলতা সীমাবদ্ধতা বা ভুলগুলো চোখে পড়েছে? এগুলো এড্রেস করা হয়েছে কি? কী করা উচিত?

মাহবুবুল আলম: অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় বড় ভুল ছিল। যেখান থেকে আমাদের রাজস্ব আসছেনা, সেখানে ব্যয় বড় ভুল। এটা আমাদের ভালভাবে মাথায় রাখতে হবে।

ভয়েস অফ আমেরিকা: অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে লিঙ্গসমতা অর্জনের জন্য বাজেটে কী সংযোজন বা বর্জন করা যেতে পারে?

মাহবুবুল আলম: বর্তমানে জেন্ডার বলতে কিছু নেই; পুরুষ-নারী আলাদা না করে, কিভাবে সবাইকে একসঙ্গে এগিয়ে নেওয়া যায় সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।

ভয়েস অফ আমেরিকা: গত পাঁচবছরে বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতার বিচারে সরকারকে ১০ এ কত দেবেন?

মাহবুবুল আলম: সক্ষমতার বিচার করতে গেলে ১০ এর মধ্যে ৮ দিব।