ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী একটি হেলিকপ্টার রবিবার খারাপ আবহাওয়ার কারণে "দুর্ঘটনার" শিকার হয়, রাষ্ট্রীয় মিডিয়া জানিয়েছে। তাকে উদ্ধারের জন্য অনুসন্ধান চলছে এবং তার অবস্থা সম্পর্কে এখনও কোনো কিছু জানা যায় নি।
পূর্ব আজারবাইজানের পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ জোফা অঞ্চলে "প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টারটিতে একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে", রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানায়।
অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দল দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় তাদের খোঁজে গিয়েছে, ইসলামিক প্রজাতন্ত্র দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়। তারা বলে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ানও বিমানটিতে আরোহী ছিলেন।
"কঠোর আবহাওয়া এবং ঘন কুয়াশার কারণে উদ্ধারকারী দলগুলিকে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছানো কঠিন করে তুলেছে," রাষ্ট্রীয় টিভি একটি অন-স্ক্রীন সংবাদ সতর্কতায় বলে।
রাষ্ট্রীয় টিভিতে একটি ইরানী রেড ক্রিসেন্ট দল ঘন কুয়াশার মধ্যে একটি ঢালে হেঁটে যাওয়ার ফুটেজ দেখায়, সেইসাথে রাইসির নিজ শহর মাশহাদে ইমাম রেজার পবিত্র মাজারে প্রার্থনারত মানুষদের ভিড়ের লাইভ ফুটেজ সম্প্রচার করে।
রবিবারের দুর্ঘটনাটি ভারজাগান শহরের কাছে ডিজমারের পাহাড়ী সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ঘটেছে, সরকারী বার্তা সংস্থা আইআরএনএ জানিয়েছে।
তেষট্টি বছর বয়সী রাইসি রবিবার প্রদেশটি পরিদর্শন করছিলেন যেখানে তিনি প্রতিবেশী দেশ আজেরবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের সাথে দুই দেশের সীমান্তে একটি বাঁধ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।
তার বহরে তিনটি হেলিকপ্টার ছিল, এবং বাকি দুটি "নিরাপদভাবে তাদের গন্তব্যে পৌঁছে," তাসনিম বার্তা সংস্থা জানিয়েছে।
আইআরএনএ জানিয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং স্থানীয় কর্মকর্তারা রাইসির সাথে একই হেলিকপ্টারে ভ্রমণ করছিলেন।
সংস্কারবাদী শার্গ দৈনিক আরও জানিয়েছে যে "প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়েছে" কিন্তু, অন্য দুটি হেলিকপ্টার নিরাপদে অবতরণ করে।
পরবর্তীতে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেদ ওয়াহিদি বলেন, হেলিকপ্টারগুলোর একটি "খারাপ আবহাওয়ার কারণে একটি কঠিন অবতরণ করে" এবং বিমানটির সাথে "যোগাযোগ স্থাপন করা কঠিন" ছিল।
রাইসি ২০২১ সালের জুন থেকে মধ্যপন্থী হাসান রুহানির উত্তরসূরি হিসেবে ইসলামী প্রজাতন্ত্র দেশটির প্রেসিডেন্ট পদে আছেন। তিনি এমন একটি মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হন যখন ইরান সংকট ও সংঘাতের মুখোমুখি হয়।
সঙ্কট আর সংঘাতের সময়
রাইসি এমন সময়ে প্রেসিডেন্ট হন যখন ইরান একটি সামাজিক সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং পারমানবিক কর্মসূচির কারণে দেশের অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার চাপে কঠিন সময় পার করছে।
ইরানি-কুর্দিশ নারী মাহসা আমিন ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পুলিশ হেফাজতে মারা যাবার পর ইরানের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ বিক্ষোভ দেখা যায়।
আঞ্চলিক প্রতিপক্ষ ইরান এবং সৌদি আরব ২০২৩ সালের মার্চ মাসে একটি অপ্রত্যাশিত চুক্তির মাধ্যমে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে।
গত বছর ৭ অক্টোবর গাজায় যে যুদ্ধ শুরু হয়, তা আঞ্চলিক উত্তেজনা আবার তুঙ্গে নিয়ে যায়। কয়েক দফা পাল্টা-পালটি ঘটনার পর ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে ইরান সরাসরি ইসরায়েলের উপর শত শত ক্ষেপণাস্ত্র আর ড্রোন নিক্ষেপ করে।
রবিবার বাঁধ উদ্বোধন করার পর এক ভাষণে রাইসি ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইরানের সমর্থনের উপর জোর দেন। ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে ইরানের পররাষ্ট্র নীতির প্রধান বিষয়গুলোর অন্যতম।
“আমরা বিশ্বাস করি যে, ফিলিস্তিন হচ্ছে মুসলিম বিশ্বের জন্য প্রথম ইস্যু,” রাইসি বলেন।
রাইসি ১৯৬০ সালে ইরানের পবিত্র শহর মাশহাদে জন্মম গ্রহণ করেন এবং অল্প বয়সে উচ্চ পর্যায়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মাত্র ২০ বছর বয়সে তাঁকে তেহরানের কাছে কারাজের প্রসেকিউটার-জেনেরাল নিয়োগ করা হয়।
তিনি ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত তেহরানের প্রসেকিউটার-জেনেরাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। রাইসি ২০০৪ সালের পর দশ বছর বিচার বিভাগের উপ-প্রধান ছিলেন, এবং ২০১৪ সালে জাতীয় প্রসেকিউটার-জেনেরালের দায়িত্ব পান।