গাজার এক হাসপাতাল রবিবার জানায়, একটি বাসা লক্ষ্য করে চালানো ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ২০জন নিহত হয়েছে। গাজার মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত একটি ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরে হামলাটি চালানো হয়।
“মধ্য গাজায় আল-নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বিমান হাসান পরিবারের বাসা লক্ষ্য করে হামলা চালানোর পর আমার ২০টি মৃতদেহ এবং কয়েকজন আহত ব্যক্তিকে পাই,” আল আকসা মারটারস হাসপাতাল এক বিবৃতিতে জানায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, হামলা স্থানীয় সময় ভোর ৩টায় ঘটে। ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বলছে, তারা খবরটি যাচাই করে দেখছে।
ফিলিস্তিনি সরকারি বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানায়, আহতদের মধ্যে কয়েকটি শিশু রয়েছে এবং উদ্ধারকারীরা ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ মানুষের সন্ধান করছেন।
রাফায় থেকে ৮ লক্ষর পলায়ন
গাজার দক্ষিণে রাফা শহরে ইসরায়েলের আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে এবং সেখান থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ পালিয়ে যাচ্ছে।
ওই অঞ্চলে এএফপি সংবাদদাতাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী হামাস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আক্রমণে ইসরাইল কিছু অঞ্চল দখল করেছে এবং শনিবার রাফায় প্রচন্ড সংঘাত এবং ভূমি ও আকাশ থেকে বোমা বর্ষণ গোটা এলাকা কেঁপে উঠেছে।
ফিলিস্তিনি শরনার্থীদের জন্য জাতিসংঘে দপ্তর (আনরা)’র প্রধান শনিবার জানান দু সপ্তাহ আগে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফায় স্থল আক্রমণ শুরু আনুমানিক আট লক্ষ লোক সেই স্থান থেকে পালিয়ে গেছে।
আনরা’র প্রধান ফিলিপে লাটসারিনি সামাজিক মাধ্যম এক্স এ লিখেছেন যে আগেই বাস্তুচ্যূত অসামরিক লোকজন রাফাহ ত্যাগ করছেন এবং “ভাঙা ভবনগুলিসহ মধ্যবর্তী এলাকা ও খান ইউনিসের দিকে”চলে যাচ্ছেন।
লাটসারিনি বলেন লোকজন যে দিকে পালিয়ে যাচ্ছেন সেখানে পানির অভাব রয়েছে এবং যথেষ্ট পয়ঃব্যবস্থাও নেই। এই জায়গাগুলির মধ্যে রয়েছে উপকুলীয় শহর আল মাওয়াসি এবং দেইর আল বালাহ শহর যেটি সাম্প্রতিক সময়ে বাস্তুচূত মানুষে পরিপূর্ণ।
ইসরাইলের ঘনিষ্ঠতম মিত্র যুক্তরাষ্ট্র রাফায় সামরিক অভিযান সম্প্রসারিত করার বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়েছে। এই অভিযান শুরুর আগে থেকেই সেখানে ১৪ লক্ষ অসামরিক ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়ে আছে।
গাজার উত্তরে জাবালিয়ায় অভিযান
ইসরাইল, তার কথায় রাফায় এবং গাজার উত্তরাঞ্চল জা্বালিয়ায় ”সন্ত্রাসী এবং তাদের অবকাঠামেোর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযান”চালাচ্ছে। ঐ সব অঞ্চলে হামাস জঙ্গিদের পুনুরুত্থানের বিরুদ্ধে এই অভিয়ান।
শনিবার ইসরাইলি সেনা এবং ট্যাংক জাবালিয়ায় প্রবেশ করে । গাজার আটটি শরণার্থী শিবিরের মধ্যে বৃহত্তম শিবির সেখানেই অবস্থিতি। সেখানে ১৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন এবং আরও কয়েক ডজন আহত হন।
গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় এবং বেসামরিক জরুরি পরিষবোর মতে তারা সম্ভাব্য হতাহতের বিষয়ে অনেক টেলিফোন পাচ্ছিল কিন্তু স্থল ও বিমান আক্রমণের জন্য তারা ঐ সব টেলিফোনে সাড়া দিতে পারেনি।
ইসরাইলের সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে , “ গাজা ভূখন্ডে ইসরাইলি বিমান বাহিনীর অভিযান অব্যাহত আছে এবং গতকাল থেকে তারা ৭০টি সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুর উপর আঘাত হেনেছে যার মধ্যে তাদের অস্ত্রাগার, সামরিক অবকাঠামোর স্থান এবং সন্ত্রাসীরা ছিল যারা ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্য এবং সামরিক বাহিনীর অবস্থানের প্রতি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
ইসরাইলি সংবাদ মাধ্যম বলছে সর্বসাম্প্রতিক এই আক্রমণের সময়ে গোয়েন্দা বিভাগএকটি লোকের মরদেহ উদ্ধারের কথা জানায়। তিনি ছিলেন ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার সময় প্রায় ২৫০ জন জঙ্গির একজন।
এএফপি’র যাচাই করা ইসরায়েলের সরকারী হিসাব অনুযায়ী, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের ১১৭০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।
অপরদিকে হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গাজায় ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় কমপক্ষে ৩৫,৩০৩ জন নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নারী ও শিশু।
যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৭ সালে হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে। ইসরাইল, মিশর, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাপানও হামাসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে।
এই প্রতিবেদনের কিছু অংশ রয়টার্স, এএফপি এবং এপি থেকে নেয়া হয়েছে।