শনিবার মিয়ানমারের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে এমন একটি সশস্ত্র ও ক্ষমতাবান নৃগোষ্ঠী দাবি করেছে, তারা দেশটির পশ্চিমাঞ্চলের রাজ্য রাখাইনের একটি শহর দখল করেছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের এই শহর দখলের ঘটনাটি দেশটির সামরিক সরকারের বিরোধিতাকারীদের ধারাবাহিক বিজয়ের সর্বশেষ নজির।
মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বুথিডং শহরের সংঘাতের মূল ভুক্তভোগী হয়েছেন বলে মনে হচ্ছে। রোহিঙ্গারা ২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্যে সামরিক বাহিনীর নির্দেশনায় পরিচালিত সহিংস হামলারও মূল্য লক্ষ্যবস্তু ছিল। আরাকান আর্মি দাবি করেছে, তারা এই শহর থেকে সামরিক সরকারকে বিতারণ করেছে।
শহরে অগ্নিসংযোগের ফলে রোহিঙ্গা বাসিন্দারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। তবে এ ঘটনার জন্য কে বা কারা দায়ী, সে বিষয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে।
এই পরস্পরবিরোধী দাবি নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা যায়নি। এ অঞ্চলে ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন সংযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন বলা যায়।
আরাকান আর্মির মুখপাত্র খাইং থুখা এপিকে একটি অজ্ঞাত অবস্থান থেকে এসএমএস বার্তার মাধ্যমে জানান, সংগঠনটি বুথিডং-এর সবগুলো সামরিক চৌকি দখল করে শহরটির নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ করেছে।
চীন সীমান্তে এলাকা দখল
আরাকান আর্মি রাখাইনের জাতিগত সংখ্যালঘু আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত একটি সুপ্রশিক্ষিত ও অস্ত্র-সজ্জিত সামরিক সংগঠন। তারা মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে স্বায়ত্তশাসন চায়। একইসঙ্গে এই সংগঠন নৃগোষ্ঠীদের সশস্ত্র জোটেরও সদস্য, যারা সম্প্রতি দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মিয়ানমার-চীন সীমান্তে কৌশলগত ভূখণ্ড দখল করেছে।
বিদ্রোহীদের ছায়া সরকার ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টের মানবাধিকার বিষয়ক উপমন্ত্রী অং কিয়াও মো একজন রোহিঙ্গা। তিনি তার ফেসবুক পেজে শনিবার জানান, বুথিডং “ছাইয়ের গাদায় পরিণত হয়েছে” এবং সেখানকার বাসিন্দারা শহরের বাইরের ধান ক্ষেতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
তিনি বলেন, “এ ঘটনার দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ও নিরপেক্ষ তদন্ত প্রয়োজন। সামরিক একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ মানেই এই নয় যে যা ইচ্ছে করার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। যুদ্ধেরও নিয়ম আছে।”
আরাকান আর্মি শহরে অগ্নিসংযোগের জন্য দায়ী — এই অভিযোগকে সংগঠনের মুখপাত্র খাইং থুখা ভিত্তিহীন বলে অভিহিত করেন। তিনি দাবি করেন, সামরিক সরকারের বিমানহামলার কারণে বাড়িগুলোতে আগুন ধরে যায়।
তিনি আরও জানান, পিছু হটার সময় সেনাবাহিনীর সদস্যরা এবং তার ভাষায়, “জঙ্গি সংগঠনে” তাদের (সামরিক বাহিনীর) মিত্ররা — যার অর্থ রোহিঙ্গা গেরিলা গ্রুপ —এ বং স্থানীয় মুসলিমরা, যাদেরকে সামরিক বাহিনীতে নেওয়া হয়েছে — তারা সবাই বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন।
গণতন্ত্রপকামী ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের সঙ্গে সংঘাতে গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়ার অসংখ্য প্রমাণ রেখেছে দেশটির সামরিক সরকার।