পেনি ওং ঢাকা সফরে আসছেন ২১ মে, অগ্রাধিকার পাবে আঞ্চলিক শান্তি

অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং।

অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং আগামী ২১ ও ২২ মে ঢাকা সফর করবেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা। বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করা এবং আঞ্চলিক শান্তি, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তার জন্য সহযোগিতা জোরদারের উপায় খুঁজে বের করা হবে তাঁর সফরের মূল লক্ষ্য।

রবিবার (১৯ মে) বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, অস্ট্রেলীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সফরে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন, রোহিঙ্গা সংকট, সামুদ্রিক নিরাপত্তা, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

এই কর্মকর্তা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নন বলে তিনি নাম প্রকাশ না করতে অনুরোধ করেন।

রোহিঙ্গা শিবিরের পরিস্থিতি দেখতে সেখানে যাওয়ার কথা রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার মন্ত্রীর, জানান এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের চূড়ান্ত প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী রোহিঙ্গা ইস্যুকে আলোচনায় রাখতে অস্ট্রেলিয়ার সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ।

রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার বিষয়ে এবং তাদের প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে সমর্থন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া; তিনি আরো জানান।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, পেনি ওং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।

অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে থাকবেন দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া গ্রুপের ডেপুটি সেক্রেটারি এবং পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য বিভাগের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অফিসের প্রধান মিশেল চ্যানসহ একটি প্রতিনিধি দল।

মালয়েশিয়ার সাবাহ রাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন ওং, এবং ১৯৭৬ সালে তার পরিবার অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। তখন তার বয়স ছিলো ৮ বছর।

অ্যান্থনি অ্যালবানিজের বক্তব্য

এর আগে, চলতি মাসের শুরুতে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ বলেন, আঞ্চলিক শান্তি, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তায় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার এবং একসঙ্গে অবদান রাখতে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।

জানুয়ারিতে পুনঃনির্বাচিত হওয়ায় অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা চিঠিতে অ্যান্থনি অ্যালবানিজ বলেন, “ভারত মহাসাগরীয় রাষ্ট্র হিসেবে সার্বভৌমত্বের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা এই অঞ্চলের প্রতি আমাদের অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে এবং তা দুই দেশের নাগরিকদের সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তার প্রসার ঘটায়। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি মোকাবেলা করে।”

বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া ইতোমধ্যে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের নতুন সুযোগ উন্মুক্ত করতে একটি কাঠামো চুক্তি সই করেছে।

দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফ্রেমওয়ার্ক অ্যারেঞ্জমেন্ট (টিফা), অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য নতুন সুযোগ উন্মুক্ত করার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম প্রদান করবে বলে আশা করছে উভয় পক্ষ।

উল্লেখ্য, গত বছরের মে মাসে অস্ট্রেলিয়ার সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী টিম ওয়াটস বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন।সফরকালে তিনি বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক-কে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়া এমন একটি অঞ্চল চায়, যেখানে কোনো দেশ আধিপত্য বিস্তার করবে না এবং কোনো দেশই আধিপত্যের শিকার হবে না।

বাংলাদেশের এক কর্মকর্তা জানান, চলতি বছরের জুন মাসে অস্ট্রেলিয়ায় দুই দেশের পঞ্চম ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। গত বছরের মার্চে ঢাকায় চতুর্থ এফওসি অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য এখন প্রায় ৪০০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। বাণিজ্যের এই আকার, দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কের দৃঢ়তাকে প্রতিফলিত করে বলে উল্লেখ করেনে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা।