তথ্য সংগ্রহের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন ডেপুটি গভর্নর খুরশীদ আলম। তিনি বলেন, “তথ্যের প্রয়োজন হলে, সাংবাদিকরা শতবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যেতে পারেন।”
শনিবার (১৮ মে) বিকালে, গ্রাহক সচেতনতা সপ্তাহ উপলক্ষে, পঞ্চগড় চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
“প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের একজন মুখপাত্র থাকে। আমাদের তিনজন আছেন। যে কোনো ধরনের তথ্যের জন্য, তাদের সঙ্গে গিয়ে কথা বলুন;” খুরশীদ আলম যোগ করেন।
তিনি বলেন, কেনো সাংবাদিক যদি তাদের দেয়া তথ্যে সন্তুষ্ট না হন, তবে চারজন ডেপুটি গভর্নরের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। “আমরা এর উত্তর দেবো;” তিনি আরো বলেন।
অবাধ প্রবেশাধিকার প্রসঙ্গে খুরশীদ আলম প্রশ্ন তোলেন, “অবাধ প্রবেশ কী?” ডেপুটি গভর্নর বলেন, “আপনি যদি একা যেতে চান তবে আপনি যেতে পারেন এবং নিযুক্ত কর্মকর্তারা আপনাকে তথ্য সরবরাহ করবেন; যা গোপনীয়তা আইনের অধীনে অনুমোদিত। তবে রাষ্ট্রের গোপনীয়তা সম্পর্কে তথ্য পেতে চাইলে তা দেয়া হয় না।”
কোনো ধরনের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি আহবান জানান খুরশীদ আলম।বলেন, “উদীয়মান অর্থনীতির অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, আমরা দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে যাচ্ছি।”
ব্যাংকারদের উদ্দেশে ডেপুটি গভর্নর বলেন, অর্থনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। আর্থিক খাত অর্থনীতির প্রাণ। “আপনাদের গ্রাহকদের কাছ থেকে ট্যাক্স আদায় করতে হবে এবং একই সঙ্গে তারা যাতে হয়রানির শিকার বা অসন্তুষ্ট না হন সেদিকে নজর রাখতে হবে;” যোগ করেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের: ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশের প্রয়োজন নেই’
এর আগে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশের কোনো প্রয়োজন নেই; কারণ তাদের প্রয়োজনীয় সব তথ্য ব্যাংকের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে।
শনিবার(১৮ মে) রাজধানীর ঢাকার ধানমন্ডিতে এক সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
“কোন দেশে অবাধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ঢোকা যায়? যে কেউ কি ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রবেশ করতে পারে? সব কিছু ওয়েবসাইটে আছে; কেন আপনার প্রবেশ করা দরকার?” পাল্টা সাংবাদিকদের প্রশ্ন করেন ওবায়দুল কাদের।
বিএনপির সমালোচনা
এদিকে, গত ২৮ এপ্রিল, বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করায়, সরকারের সমালোচনা করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।
এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের দুর্নীতি ও লুটপাটের বিষয়টি আড়াল করতে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।” এক বিক্ষোভ সমাবেশে একথা বলেন তিনি।
“বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা লুট হয়ে গেছে এবং অপরাধীরা আর কেউ নয়, তারা এমপি-মন্ত্রী বা তাদের ঘনিষ্ঠ সহচর;” রিজভী যোগ করেন।
রিজভী আরো বলেন, লুটপাট ও দুর্নীতির তথ্য যাতে প্রকাশ করতে না পারে, সেজন্য সাংবাদিকদের এখন বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশে বাধা দেয়া হয়েছে। কারণ অপরাধীরা সব সময় নিজেদের পাপ ঢাকতে চায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকারের ওপর বিধিনিষেধ আরোপের নিন্দা জানান রুহুল কবির রিজভী।
বিধিনিষেধ ও প্রতিবাদ
গত ২৫ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক ঘোষণা দেন, “এখন থেকে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করতে সাংবাদিকদের সুনির্দিষ্ট অনুমতি নিতে হবে। এর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো বিভাগে সাংবাদিকদের অবাধে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।”
বাংলাদেশ ব্যাংক সাংবাদিকদের প্রবেশের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন।
গত ২৭ এপ্রিল বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) এর উভয় অংশ এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেছে।এর আগে, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) এক বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানায়।
অন্যদিকে, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকারে বিধিনিশেষ আরোপ করা, একটি স্বেচ্ছাচারিতার ও গোপনীয়তার নিন্দনীয় উদাহরণ। এ ধরনের পদক্ষেপে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে টিআইবি। আর, জনস্বার্থে এমন বিধিনিষেধ অবিলম্বে প্রত্যাহারের আহবান জানিয়েছে।