রাফা জেটিতে প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম পৌঁছানোর পর সংঘর্ষ চরমে

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রকাশ করা এই হ্যান্ডআউট ছবিতে গাজায় সামরিক অভিযানের সময় ইসরায়েলি সেনাদের দেখা যাচ্ছে । ( ১৮ মে, ২০২৪)

গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায় শনিবার ব্যাপক সংঘর্ষ ও বোমাবর্ষণ চলে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মানবিক ত্রাণের প্রথম ৩১০টি প্যালেট বা বারকোষ যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত একটি জেটি দিয়ে অবরুদ্ধ অঞ্চলে প্রবেশ করার পর সংঘর্ষ চরমে উঠে।

রাফায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মতে 'সীমিত' অভিযানের ১০ দিন পার হয়ে যাবার পর গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েলি বাহিনী ও হামাসের মধ্যে লড়াই আবারও ছড়িয়ে পড়েছে।

কুয়েতি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাতভর ইসরায়েলি হামলায় রাফায় একটি শিবিরে আশ্রয় নেয়া দু'জন নিহত হয়েছেন। শহরের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভারী গোলাগুলি ও গোলাবর্ষণ এবং পূর্বাঞ্চলে বিমান থেকে বোমাবর্ষণের খবর জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

বার্তা সংস্থা এএফপির সংবাদদাতা, প্রত্যক্ষদর্শী ও চিকিৎসাকর্মীরা জানিয়েছেন, উত্তর জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে রাতভর তীব্র লড়াই চলেছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী শুক্রবার ৭ মাসের বেশি চলা যুদ্ধে এটাকে সম্ভবত ’সবচেয়ে বড়’ সহিংসতা বলে মনে করছে।

গাজার উত্তরাঞ্চলে হামাসের মেরুদন্ড ভেঙে দিয়েছে বলে জানুয়ারির গোড়ার দিকে ইসরায়েল জানিয়েছিল। বর্তমান পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী বলেছে যে ৭ অক্টোবর যে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীটির আক্রমণে বর্তমান যুদ্ধটি শুরু হয় "আমরা আসার আগে অবধি কয়েকদিন আগ পর্যন্তও জাবালিয়া সম্পূর্ণ তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল।”

ত্রাণ সংস্থাগুলো বলছে, প্রবল আন্তর্জাতিক বিরোধিতা এবং থমকে থাকা যুদ্ধবিরতি নিয়ে মধ্যস্থতাকারীরাদের আলোচনায় সাফল্যের আশার মধ্যেই রাফায় নতুন করে ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরু হয়েছে এবং মানবিক সংকটের আরও অবনতি ঘটেছে।

স্থলপথে সীমান্ত পারাপারগুলি বন্ধ থাকা বা সীমিত ভাবে কাজ করার কারণে কিছু ত্রাণ সরবরাহ যুক্তরাষ্ট্রের নির্মিত একটি অস্থায়ী, ভাসমান জেটির মাধ্যমে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত গাজায় প্রবেশ শুরু হয়।

এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, “ভাসমান জেটি দিয়ে মানবিক সহায়তার প্রথম পর্যায়” মোট ৩১০টি প্যালেটবা বারকোশ উপকূলের দিকে আসা শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ড জেটির মাধ্যমে, আগামী দিনগুলোতে গাজায় প্রায় ৫০০ টন ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার আশা করছে।

তবে জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবিক ত্রান সংস্থাগুলো এ ব্যাপারে খুব একটা আশাবাদী নয়। তারা বলছে যে কথিত সমুদ্রপথের করিডর এবং বিমান থেকে ত্রাণ সামগ্রী ফেলা , গাজায় যানবহরের মাধ্যমে ত্রাণ সামগ্রী পাঠানোর বিকল্প হতে পারে না। তারা বার বার গাজায় আসন্ন দুর্ভিক্ষের বিষয়ে সতর্ক করছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন সাইপ্রাস থেকে গাজায় প্রথম চালানকে স্বাগত জানালেও স্থল পথে ও অন্যান্য ক্রসিং অবিলম্বে খুলে দিয়ে আরও বেশি ত্রাণ প্রবেশে সাহায্য করার জন্য ইসরায়েলের প্রতি তারা আহ্বান জানিয়েছে।

গাজার শাসক হামাসও জোর দিয়ে বলেছে ভাসমান অস্থায়ী জেটিগুলি স্থল পারাপার এলাকা খোলার কোন বিকল্প নয়।

এএফপি’র যাচাই করা ইসরায়েলের সরকারী হিসাব অনুযায়ী, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের ১১৭০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।

অপরদিকে হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গাজায় ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় কমপক্ষে ৩৫,৩০৩ জন নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নারী ও শিশু।

.