সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার ৬৫ দিন পর, মঙ্গলবার (১৪ মে) চট্টগ্রামে ফিরে এসেছে এমভি আব্দুল্লাহ এবং জাহাজের ২৩ নাবিক। উষ্ণ অভ্যর্থনায় পরিবারের স্বজনরা বরণ করে নেন নাবিকদের।
নাবিকদের বহন করা জাহাজ এমভি জাহান মনি–৩ কে তিনটি টাগবোট পাহারা দিয়ে জেটিতে নিয়ে আসে। জাহাজটি জেটিতে ভিড়লে, সেখানে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। দুপুর ২টার দিকে কুতুবদিয়া উপকূল থেকে তাদের নিয়ে রওনা দেয় জাহাজটি। এনসিটি-১ জেটিতে আগে থেকেই অপেক্ষা করছিলেন স্বজনরা।
এমভি আবদুল্লাহর চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খানের ভাই আবদুর নূর খান আসিফ বলেন, “আমার বড় ভাই ফিরে আসায় আমরা যে কতটা খুশি, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। পরিবারের সবাই এই দিনের অপেক্ষায় ছিলাম।”
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ভয়েস অফ আমেরিকাকে জাহাজের নাবিকরা সবাই সুস্থ আছেন বলে জানান। তিনি বলেন, "তারা তো মুক্ত হওয়ার পর দুবাই গিয়েছে, সেখান থেকে মালামাল নিয়ে ওই জাহাজ নিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। নাবিকরা শারীরিক ও মানসিক সব দিক থেকে সুস্থ ও খুব ভালো আছেন।”
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নাবিকদের নিয়ে এক সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
জিম্মি দশা থেকে মুক্ত হয়ে এমভি আবদুল্লাহ সোমালিয়া থেকে গত ২২ এপ্রিল দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দরে ভিড়ে। সেখানে কয়লা খালাস শেষে ২৭ এপ্রিল মিনা সাকার বন্দরে যায় জাহাজটি। ওই বন্দর থেকে ৫৬ হাজার টন চুনাপাথর বোঝাই করে রওনা দেয় চট্টগ্রামের উদ্দেশে। সকালেই বাংলাদেশের জলসীমায় পৌঁছে যায় জাহাজটি।
মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে দুবাই যাওয়ার পথে সোমালিয়া উপকূলের কাছে গত ১২ মার্চ জলদস্যুদের কবলে পড়ে এমভি আবদুল্লাহ। উপকূলের ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূরে অস্ত্রের মুখে জাহাজ ও ২৩ নাবিককে জিম্মি করে জলদস্যুরা। এরপর ৩৩ দিন কাটে নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে। গত ১৪ এপ্রিল মুক্তিপণ দিয়ে জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হয় ২৩ নাবিকসহ জাহাজটি।
জাহাজ উদ্ধারের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “আমরা আন্তর্জাতিক মেরিটাইম ভুক্ত দেশ। আইএমও-এর ক্যাটাগরির ‘সি’ নির্বাচিত কাউন্সিলর। ১৭৪ টি দেশ আইএমও সদস্য। আমাদের ইউএস কোস্ট গার্ড, ইউরোপীয় ইউনিয়সহ সবার সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে। যখন আন্তর্জাতিক রুটে একটি জাহাজ জলদস্যুদের কবলে পড়েছে তখন মেরিটাইমসহ সব ধরণের সংস্থা ও দেশ সবাই সহযোগিতা করেছে।”
প্রতিমন্ত্রী বলেন,“ আর যে দেশের জলদস্যুরা এটাকে হাইজ্যাক করেছিলো, তাদেরও নিরাপত্তার একটা বিষয় আছে। কাজেই সবকিছু মিলিয়ে যে চাপ তৈরি হয়েছিলো সেটা জাহাজ উদ্ধারে বিরাট কাজে লেগেছিলো। পুরোটাই আমাদের আলোচনা, আন্তর্জাতিক মহলের যে চাপ ছিলো সবকিছু মিলিয়ে জাহাজ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি।”
এই প্রসঙ্গে কেএসআরএম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাতের পক্ষে মিজানুল ইসলাম ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “জাহাজ এবং নাবিকদের নিরাপদ ও সুস্থভাবে ফিরিয়ে আনাটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ ছিলো।...আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতা ছিলো। ২০১০ সালে আমাদের একটি জাহাজ সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়েছিলো। ১০০ পরে ২৫ জন নাবিকসহ অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে ফেরেছি। এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এবারও নাবিকদের অক্ষত অবস্থায় ফিরেয়ে আনতে পেরেছি।”
এদিকে, কুতুবদিয়ায় অবস্থান করা এমভি আবদুল্লাহর দায়িত্ব নতুন নাবিকদের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম।
এই প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন আদিত্য রিমন।