দুর্নীতির অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের সেনেটর রবার্ট মেনেনডেজ-এর বিচার প্রক্রিয়া সোমবার জুরি বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে। এই মামলা ডেমক্র্যাট দলের সেনেটরের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ প্রভাবিত করতে পারে, এবং আগামী বছর কোন দল যুক্তরাষ্ট্রের সংসদের উচ্চ কক্ষ সেনেট নিয়ন্ত্রণ করবে, সেটা নির্ধারণ করতেও ভূমিকা রাখতে পারে।
সত্তর বছর বয়স্ক মেনেনডেজ-এর বিরুদ্ধে ১৬টি ফৌজদারি অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। তাঁর মধ্যে আছে, ঘুষ গ্রহণ, জালিয়াতি এবং বিদেশী এজেন্ট হিসেবে কাজ করা। নিউ ইয়র্কের ম্যানহাট্টান ফেডেরাল কোর্টে তাঁর বিচার প্রক্রিয়ায় নিউ জার্সির দুজন ব্যবসায়ীও জড়িত আছেন।
সেনেটরের স্ত্রী নাডিন মেনেনডেজ-এর বিরুদ্ধেও চার্জ গঠন করা হয়েছে তবে তাঁর বিচার আলাদা ভাবে হবে। অভিযুক্ত চারজনই নিজেদের নির্দোষ বলে দাবী করেছেন।
নিউ জার্সির সিনিয়র সেনেটর মেনেনডেজ টানা তিন মেয়াদ শেষে নভেম্বর মাসে নির্বাচনের মুখোমুখি হবার কথা। তিনি যদি অভিযোগ থেকে রেহাই পান তাহলে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার আশা করছেন।
সাম্প্রতিক জনমত জরীপে দেখা গেছে, মেনেনডেজ নিউ জার্সি ভোটারদের মধ্যে মোটেই জনপ্রিয় নন। ডেমক্র্যাট দলের বেশ কয়েকজন সেনেটর, যেমন নিউ জার্সির করি বুকার, মেনেনডেজকে পদত্যাগ করার আহবান জানিয়েছেন। একশ আসনের সেনেটে ডেমক্র্যাট এবং তাদের সাথে মিত্র স্বতন্ত্র সদস্যরা ৫১-৪৯ আসনে সংখ্যাগরিষ্ঠ।
র্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞার দাবী
সেনেটর রবার্ট মেনেনডেজ-এর নামের সাথে বাংলাদেশের অনেকেই পরিচিত হন ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে, যখন তিনি এবং ৯জন সেনেটর তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পমপেও এবং ট্রেজারি সেক্রেটারি স্টিভেন মানুশিনকে একটি চিঠি লেখেন।
চিঠিতে মেনেনডেজ এবং অন্য ৯জন স্বাক্ষরকারী বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ বাহিনী র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-এর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনেন এবং র্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞার দাবী জানান।
ডনাল্ড ট্রাম্প ২০২০ সালের নির্বাচনে পরাজিত হলে জো বাইডেন ক্ষমতায় আসেন এবং তাঁর প্রশাসন ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র্যাব ও তার ছয় কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
কাপড়ের ভেতর টাকা
নিউ ইয়র্কে বাদী পক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, মেনেনডেজ নিউ জার্সিতে তাঁর প্রভাব খাটানোর জন্য এবং মিশর অর কাতার সরকারকে সুবিধা এনে দেয়ার জন্য নগদ টাকা, সোনার বার এবং একটি দামি মার্সেডেজ বেঞ্জ গাড়ি গ্রহণ করেছিলেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, মেনেনডেজ যত নগদ ঘুষ গ্রহণ করেছিলেন, তার বেশির ভাগ তাঁর বাসায় কাপড় -চোপরের ভেতর পাওয়া গেছে।
মেনেনডেজের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি মিশরকে অস্ত্র কেনা এবং অন্যান্য সামরিক সাহায্য পাবার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি একজন মিশরিয় ব্যবসায়ীকে মিশরে রফতানি করা মাংসর হালাল সার্টিফিকেট দেয়ার একচেটিয়া অধিকার অর্জনে সহায়তা করেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবীরা আরও বলেন, মেনেনডেজ নিউ জার্সির এক নামকরা নির্মাণ ব্যবসায়ী, ফ্রেড ডাইবেসকে কাতারের বিনিয়োগ ফান্ড থেকে লক্ষ লক্ষ ডলার পেতে সহায়তা করেন।
মেনেনডেজ ২০০৬ সালে সেনেটর নির্বাচিত হন। তিনি প্রবল ক্ষমতাশালী সেনেট ফরেন রিলেশন্স কমিটির প্রধান ছিলেন। কিন্তু সেপ্টেম্বরে তাঁর বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হবার পর পদ থেকে সরে দাঁড়ান।