পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সহিংস বিক্ষোভ থামাতে ইসলামাবাদের ভর্তুকি ঘোষণা

পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফারাবাদের কাছে জয়েন্ট আওয়ামী অ্যাকশন কমিটির প্রতিবাদ বিক্ষোভের সময় আধা-সামরিক রেঞ্জার্স বাহিনীর সদসরা রাস্তা আটকে দেয়। ফটোঃ ১৩ মে, ২০২৪।

পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বাসিন্দাদের জরুরি অর্থনৈতিক সাহায্য দিতে ইসলামাবাদ সোমবার কয়েক কোটি ডলারের তহবিল ঘোষণা করেছে। সপ্তাহান্তে উপত্যকায় একাধিক সহিংস বিক্ষোভের পর এই ঘোষণা করা হলো।

সহিংস বিক্ষোভ থামার এখনও কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। পাকিস্তানের আধা-সামরিক বাহিনী রেঞ্জার্স-এর একটি কনভয় এই অঞ্চলের রাজধানী মুজাফফরাবাদে পৌঁছনোর চেষ্টা করলে তাদের একটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয় স্থানীয়রা।

একাধিক প্রতিবেদন থেকে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, তাদের পথ রোধ করায় আধা-সামরিক সৈন্যরা বিক্ষোভকারীদের দিকে গুলি নিক্ষেপ করে, যার ফলে অন্তত একজন নিহত ও কয়েকজন আহত হয়েছেন। এই অঞ্চলের নানা প্রান্তে সংঘর্ষ অব্যাহত থাকায় আরও ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সোমবার উপত্যকাজুড়ে স্কুল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি দফতরগুলি বন্ধ রাখা হয়েছিল। রবিবার ভোর থেকে বন্ধ থাকা মোবাইলে ইন্টারনেট পরিষেবা অল্প সময়ের জন্য চালু করা হয়েছিল। তবে সহিংসতা তীব্রতর হওয়ায় তা আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়।

গত বছর শুরু হওয়া বিক্ষোভের মূল লক্ষ্য ছিল ময়দার জন্য সরকারি ভর্তুকি এবং স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বিদ্যুতের মূল্য হ্রাস করা।

যে সহিংসতায় কয়েক ডজন ব্যক্তি গ্রেফতার, একজন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত ও কয়েকজন আহত হয়েছেন, তা রবিবার স্তিমিত হয়ে যায়।

তারপর থেকে নাগরিক অধিকার সংগঠন জয়েন্ট আওয়ামী অ্যাকশন কমিটির নেতৃত্বে মিছিলকারীরা প্রায় অবাধভাবে আঞ্চলিক রাজধানীর দিকে অগ্রসর হয়।

পাকিস্তানের প্রধান বাণিজ্য নগর করাচিতে বিক্ষোভকারীরা পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ময়দা এবং বিদ্যুতের দাম কমানোর দাবীর সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে। ফটোঃ ১৩ মে, ২০২৪।

ইসলামাবাদে জরুরী বৈঠক

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ সোমবার পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের আঞ্চলিক প্রশাসনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে জরুরী বৈঠক আহ্বান করেন।

এই বৈঠকের পর ৮.২৬ কোটি ডলারের বেশি অর্থ মঞ্জুরির মাধ্যমে ময়দার মূল্য ও বিদ্যুতের দাম কমানোর কথা ঘোষণা করা হয়েছে।

স্থানীয় সাংবাদিক জালালুদ্দিন মুঘল ভিওএ-কে বলেন, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে বিক্ষোভ হলেও আঞ্চলিক সম্পদের উপর স্বায়ত্তশাসন অর্জনই লড়াইয়ের মূল লক্ষ্য।

জাতিসংঘের প্রস্তাবনা মোতাবেক, ভারত ও পাকিস্তান যতদিন না গণভোট (এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যোগ্য ভোটারদের প্রত্যক্ষ ভোটদান) পরিচালনা করবে, ততদিন পাকিস্তানের সংবিধান কাশ্মীরকে বিতর্কিত ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দেবে।

ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের স্বশাসনের মর্যাদা নয়াদিল্লি ২০১৯ সালে বাতিল করে। এর ফলে, পাকিস্তানের পক্ষ থেকে তীব্র কূটনৈতিক প্রতিবাদ আসে।

ইসলামাবাদ পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরকে একটি প্রদেশ বা যুক্তরাষ্ট্রীয় বিভাগ হিসেবে স্বীকৃতি না দিলেও এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদগুলিকে তারা ব্যবহার করে। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশ কাশ্মীরের নদীগুলির উপর কৃষি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নির্ভর করে।

স্থানীয়রা দাবি করছেন, কাশ্মীরের নদীগুলি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ উৎপাদন-মূল্যের কাছা-কাছি দামে তাদেরকে বিক্রি করা হোক। তারা চান, পাকিস্তান অধিকাংশ বাড়তি কর ও প্রশাসনিক চার্জ বাতিল করুক।