গণমাধ্যমকর্মী আইন নিয়ে অংশীজনদের মতামত গ্রহণ শুরু করেছে তথ্য মন্ত্রণালয়

বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের বৈঠকে সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। ১২ মে, ২০২৪।

বাংলাদেশের গণমাধ্যমকর্মী (চাকরির শর্তাবলী) আইনের খসড়ার ওপর আবার বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন ও অংশীজনদের মতামত নেয়া শুরু করেছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়।

রবিবার (১২ মে) দুপুরে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিয়ে বৈঠক করেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।

সভায় তথ্য প্রতিমন্ত্রী জানান, গণমাধ্যমকর্মী আইনের আওতায়, শ্রম আইনের অধীনে সাংবাদিকদের প্রাপ্য সব ধরনের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে। সংবাদমাধ্যম কর্মীরা শ্রম আইনের আওতায় যেসব সুবিধা পায়, সেসব সুবিধার শতভাগ সুরক্ষা প্রস্তাবিত আইনে আছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হবে।

তিনি আরো জানান, যদি কোথাও ব্যত্যয় থাকে, তা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। শ্রম আইনের অধীনে সংবাদমাধ্যম কর্মীরা যে সুরক্ষা পান, তার কোনো ব্যত্যয় বা ঘাটতি প্রস্তাবিত গণমাধ্যম কর্মী আইনে থাকবে না।

“সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমে একটি সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টির জন্য গণমাধ্যম কর্মীদের কল্যাণ নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। এজন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রক্রিয়ায় মধ্য দিয়ে গণমাধ্যমকর্মী আইন পর্যালোচনা করা হচ্ছে;” বলেন প্রতিমন্ত্রী আরাফাত।

সাংবাদিক সংগঠন ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের গণমাধ্যম কর্মী আইনের খসড়ার ওপর লিখিত মতামত দেয়ার আহবান জানান তিনি।

সভায় মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তা, সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন এবং গণমাধ্যম।

সাংবাদিক মহলের আপত্তি

মন্ত্রিসভা ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে গণমাধ্যমকর্মী (চাকরির শর্তাবলি) আইন-২০১৮ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেয় । চার বছর পর ২০২২ সালের মে মাসে সংসদে উপস্থাপিত হয় ‘গণমাধ্যমকর্মী আইন’।

কিন্তু আইনটি সম্পর্কে সাংবাদিক নেতারা ও সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো আপত্তি তোলে। আইনটির যেসব ধারায় আপত্তি রয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করে নিজেদের পর্যবেক্ষণ উপস্থাপন করেন তথ্য মন্ত্রণালয়ে।

তখন সংশ্লিষ্টরা বলেছিলেন, গণমাধ্যমকর্মী আইনের অধিকাংশ ধারা ও উপধারায় মালিকপক্ষ ও সাংবাদিকদের অধিকার খর্ব হবে।

সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (নোয়াব) বিবৃতি দিয়ে বলেছিলো, নতুন গণমাধ্যমকর্মী আইনের প্রয়োজন নেই।

প্রস্তাবিত আইনটির ৫৪টি ধারার মধ্যে ৩৭টিই সাংবাদিকবান্ধব নয় বলে সম্পাদক পরিষদ, সিনিয়র সাংবাদিক এবং সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতারা মতামত ব্যক্ত করেন। এ আইন পাস হলে স্বাধীন সাংবাদিকতা বাধাগ্রস্তসহ সংবাদপত্রের বিকাশ সংকুচিত হবে বলে মনে করে তারা।

তখনকার তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছিলেন, পরীক্ষাধীন প্রস্তাবিত গণমাধ্যমকর্মী আইনটি পরিবর্তন-পরিমার্জন করার বিষয়ে সরকার একমত, যাতে সাংবাদিকদের স্বার্থ পুরোপুরি সংরক্ষিত হয়।

আইনটির নাম নিয়েও আপত্তি জানিয়েছিলেন সাংবাদিক নেতারা। গণমাধ্যমকর্মী আইন নাম দিয়ে সাংবাদিকদের সংবাদপত্রের কর্মী বানানো হয়েছে; যা পেশাকে হেয় করার শামিল বলে উল্লেখ করেছিলেন তারা।

অনেক সাংবাদিক নেতা বলেছেন, যদি আইন করতেই হয়, তবে এর নাম হতে পারে ‘সংবাদমাধ্যম আইন’। অনেকে বলেছেন, নতুন আইনটির নাম সংশোধন করে ‘সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যম কর্মচারী (চাকরি শর্তাবলি) আইন, ২০২১ রাখতে।

প্রস্তাবিত আইনে সাংবাদিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে বলেও মত দিয়েছিলেন অনেক সাংবাদিক নেতা।

সাংবাদিক নেতারা বলেছেন, ১৯৭৪ সালের নিউজ পেপার এমপ্লয়িজ অর্ডিন্যান্স-এ ধারা ছিলো ২১টি, ২০১৮ সালের খসড়া আইনে ধারা ছিলো ২৩টি; আর ২০২১ সালের (২০২২ সালে সংসদে উপস্থাপিত) আইনে ধারা ৫৪টি।

নতুন প্রস্তাবিত আইনে এমন কিছু ধারা সংযুক্ত করা হয়েছে যে বিষয়গুলো বিধি দিয়ে বা ওয়েজবোর্ডের সুপারিশ দিয়েই কার্যকর সম্ভব।

প্রস্তাবিত আইনটি সম্পর্কে বিএফইউজে-সহ সাংবাদিক নেতারা বলেন, সাংবাদিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি জারি করে নিউজ পেপার এমপ্লয়িজ (কন্ডিশন অব সার্ভিস) অর্ডিন্যান্স। এ আইনের অধীনেই সাংবাদিক ও সংবাদপত্র বোর্ড কর্মচারীদের ওয়েজবোর্ড হয়ে আসছিলো।

সেই আইনে, সাংবাদিক বা সংবাদমাধ্যম কর্মচারীদের অধিকার ও বিরোধ নিষ্পত্তির বিষয়গুলো শ্রম আইনের মধ্যে রেখেও কিছু বিশেষ মর্যাদা নিশ্চিত করা হয়েছিলো। এগুলো হচ্ছে; সাংবাদিক বা সংবাদমাধ্যম কর্মচারীদের জন্য পৃথক ওয়েজবোর্ড গঠন, পেশার সংজ্ঞায়ন, বিশেষায়িত বলে কতিপয় বিশেষ সুবিধা নিশ্চিতকরণ।

সাংবাদিক নেতারা আরো বলেছেন, সে সময় দেশে শ্রম আইন বহাল থাকলেও আইনটি করা হয়েছিলো বিশেষ লক্ষ্য নিয়ে। নতুন আইন করতে হলে, আগের চেতনা ধরে রাখতে হবে বলে উল্লেখ করেছিলেন তারা।