ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে তীব্র লড়াই চলছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে তাদের সৈন্যরা পাঁচটি গ্রাম দখল করেছে, তবে কিয়েভ সেই দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
মস্কোর বাহিনী রাশিয়ার বেলগোরোদ অঞ্চল থেকে সীমান্তের ওপারে ইউক্রেনের খারকিভ অঞ্চলের প্লেতেনিভকা, ওহিরতসেভ, বরিসিভকা, পাইলনা ও স্ট্রিলেচা গ্রামগুলো দখল করে নিয়েছে বলে মন্ত্রণালয় জানায়।
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা রাশিয়ার সাফল্যের দাবী নিশ্চিত করে নি। তবে, ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অফ ওয়ার শুক্রবার বলে, কমপক্ষে একটি গ্রাম দখল করা হয়েছে বলে এর অবস্থান নিশ্চিত করা গেছে। ওয়াশিংটন-ভিত্তিক এই গবেষণা প্রতিষ্ঠান রাশিয়ার অর্জনকে “কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ” বলে বর্নণা করেছে।
খারকিভের গভর্নর ওলেহ সিনিয়েহুবভ বলেছেন, সীমান্তের তিন থেকে পাঁচ কিলোমিটার নিকটবর্তী পাঁচটি গ্রামের চারপাশে লড়াই চলছে।
“আমরা পরিষ্কার বুঝতে পারছি শত্রুরা আমাদের এলাকার উত্তরে কি ধরনের সৈন্য নিয়োজিত করেছে। অবশ্যই, চাপ বাড়তে পারে, তারা তাদের সামরিক ইউনিটগুলোকে আরও শক্তিশালী করতে পারে, তাদের উপস্থিতি বাড়াতে পারে,” সিনিয়েহুবভকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স জানায়।
তবে, এখনই আঞ্চলিক রাজধানী খারকিভের প্রায় ১৩ লক্ষ লোককে সরিয়ে নেওয়া শুরু করার প্রয়োজন নেই। তারা নিয়মিত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা সত্ত্বেও সেখানে বসবাস করে আসছে।
তাছাড়া, ইউক্রেনীয় বাহিনী ৯ টি হামলা প্রতিহত করেছে বলেও তিনি শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তার শনিবার রাতের ভাষণে, খারকিভ অঞ্চলের সাতটি সীমান্তবর্তী গ্রামের চারপাশে লড়াইয়ের খবর জানিয়ে দক্ষিণাঞ্চলীয় দোনেৎস্ক অঞ্চলের পরিস্থিতিকে বিশেষভাবে উত্তেজনাপূর্ণ বলে অভিহিত করেন।
রণাঙ্গন সম্প্রসারণ
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনীর এক সূত্র জানিয়েছে, রুশ সেনারা সাঁজোয়া বাহিনী নিয়ে খারকিভের এক কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। রাশিয়ার সীমান্ত অঞ্চলে ইউক্রেনের হামলা ঠেকাতে তারা এখানে কাজ করছে।
এই অঞ্চলে রাশিয়ার অভিযানের ফলে প্রায় ১৭০০ বেসামরিক মানুষ এলাকা ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে বলে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ বলেছে।
ইউক্রেনে আগ্রাসনের দুই বছরেরও বেশি সময় পর রাশিয়া রণাঙ্গনে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। ইউক্রেন যখন জনবলের ঘাটতির পাশাপাশি আর্টিলারি শেল এবং বিমান প্রতিরক্ষা মজুদ নিয়ে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে, তখন রাশিয়া নতুন এলাকায় অভিযান শুরু করেছে।
জেলেন্সকি শনিবার সকালে এক বিবৃতিতে কিয়েভের পশ্চিমা মিত্রদের তাদের প্রতিশ্রুত অস্ত্র সরবরাহ ত্বরান্বিত করার আহ্বান জানান।
মার্চে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, তিনি বেলগোরোদ সংলগ্ন ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডে একটি “স্যানিটারি জোন'” তৈরির কথা ভাবছেন। বেলগোরোদ প্রায়ই ইউক্রেনের গোলাবর্ষণের স্বীকার হয়।
শুক্রবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কারবি বলেন, এসব কিছুই ইঙ্গিত করছে রুশ বাহিনী খারকিভে বড় ধরনের আক্রমনের পরিকল্পনা করছে।
তিনি বর্তমান পরিস্থিতিতে, ইউক্রেনীয় বাহিনী তীব্র রুশ সাঁজোয়া স্থল আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের জন্য নতুন করে ৪০ কোটি ডলারের অস্ত্র ও সরঞ্জাম প্যাকেজ ঘোষণা করেছে।।
প্রেসিডেন্সিয়াল ড্রডাউন অথরিটির এই সাহায্য প্যাকেজ কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে পেন্টাগনের স্টকপাইল থেকে যুদ্ধাস্ত্র এবং পরিষেবাদি স্থানান্তর করার অনুমতি দেয়। কংগ্রেসের ৯৫ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা বিল পাসের পর এটিই ইউক্রেনের জন্য জরুরি সামরিক সহায়তার তৃতীয় ধাপ।
এই প্রতিবেদনের জন্য কিছু তথ্য রয়টার্স, এপি এবং এ এফপি থেকে নেওয়া হয়েছে।