শি জিনপিংয়ের সফরের মাধ্যমে ইউরোপীয় ঐক্য পরীক্ষা করল চীন

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং তার স্ত্রী পেং লিইউয়ান ফ্রান্সের টারবেস-লর্ডেস বিমানবন্দরে তাদের প্রস্থানের আগে হাত নেড়ে বিদায় জানাচ্ছেন, ৭ মে, ২০২৪।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ফ্রান্স, হাঙ্গেরি এবং সার্বিয়ার সাথে কয়েক ডজন চুক্তি স্বাক্ষর করার পর শুক্রবার তার গুরুত্বপূর্ণ ইউরোপীয় সফর শেষ করেন। তিনি চীন ও ইউরোপের মধ্যে "পারস্পরিক সুবিধাজনক সহযোগিতা" বাড়ানোর জন্য বেইজিংয়ের আকাঙ্ক্ষা পুনর্ব্যক্ত করেন।

কিছু বিশ্লেষক বলেন, প্রেসিডেন্ট শি-এর ইউরোপ সফর বেইজিংয়ের ইউরোপীয় ঐক্যকে খর্ব করার প্রচেষ্টার অংশ। চীন ২৭ টি দেশ নিয়ে গঠিত ব্লকের সদস্য হাঙ্গেরির সাথে উন্নত অর্থনৈতিক সম্পর্কের মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়নে তাদের অবস্থান আরও গভীর করে তুলতে চায়।

ব্রাসেলসের রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের সহযোগী ফেলো, সারি আরহো হাভরেন বলেন, “বেইজিং ফ্রান্সকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি দুর্বল সুত্র হিসাবে চিহ্নিত করেছে” যাকে সম্ভবত চীন প্রভাবিত করতে পারে কারণ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ তার দেশের "কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনকে" অগ্রাধিকার দেওয়ার চেষ্টা করছেন এবং চীনা সরকার "মনে করে যে তারা হাঙ্গেরি এবং সার্বিয়াকে মধ্য ও পূর্ব ইউরোপকে প্রভাবিত করতে ব্যবহার করতে পারে,” ।

চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমগুলো সফরের ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরে শি-এর ইউরোপীয় সফরকে সাফল্য হিসেবে আখ্যায়িত করছে। রাষ্ট্র-পরিচালিত গ্লোবাল টাইমস এই সপ্তাহে চীন এবং ফ্রান্স যে ১৮টি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে তাকে “ইউরোপীয় উদ্যোক্তাদের জন্য একটি ইতিবাচক সংকেত এবং দুই পক্ষকে পৃথক করার চাপের বিরুদ্ধে চীন-ইউরোপ বাণিজ্য সম্পর্কের স্থিতিশীল মাধ্যম” হিসাবে বর্ণনা করে।

প্রেসিডেন্ট শি-এর সফরের সারমর্ম বিচার করে আরহো হাভরেন বলেন, শি ইউরোপের ঐক্য পরীক্ষায় কিছুটা হলেও সাফল্য অর্জন করেছেন।

আরহো হাভরেন বলেন, তাছাড়া, ম্যাক্রোঁ এবং জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজের সাথে শির সাম্প্রতিক যোগাযোগ চীনের সাথে সম্পর্ক কীভাবে পরিচালনা করা যায় সে সম্পর্কে জার্মানি এবং ফ্রান্সের মধ্যে একটি বিভেদমূলক অবস্থান প্রকাশ করে। জার্মানি এবং ফ্রান্স ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ অর্থনীতি সম্পন্ন দুটি দেশ।

তিনি একটি লিখিত প্রতিক্রিয়ায় ভিওকে-কে বলেন, “যেহেতু শোলজ তার বেইজিং ভ্রমণের সময় চীনের পাল্টা পদক্ষেপের ভয়ে জার্মান স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেন, [এটা পরিষ্কার] যে বেইজিং জার্মান ব্যবসায় এবং তাদের মাধ্যমে চ্যান্সেলরকে প্রভাবিত করতে সফল হয়েছে,”

আরহো হ্যাভরেন বলেন, সামগ্রিকভাবে, কিছু ইউরোপীয় দেশের বোঝা উচিত যে তারা চীনের সাথে পৃথকভাবে জড়িত হয়ে চীনের আচরণকে প্রভাবিত করতে পারবে না। বরং, এই ধরনের অনুশীলন ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টির ঝুঁকি তৈরী করে, যা বেইজিং চায়।

ইইউ এর অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এজেন্ডা

কিছু পর্যবেক্ষক বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ঐক্যকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য চীনের উদ্যোগগুলির মধ্যে একটি হল জোটটির অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এজেন্ডার মূল অংশগুলি সম্পাদন করার জন্য এটির উদ্যোগকে কমিয়ে আনা। সাম্প্রতিক মাসগুলিতে, ইইউ দূষণমুক্ত জ্বালানি এবং সুরক্ষা ডিভাইস সহ বেশ কয়েকটি চীনা পণ্যে ভর্তুকি বিরোধী তদন্ত শুরু করেছে।

দুশাতেল বলেন, চীন ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর গতিকে ধীর করতে "খুব একটা সফল" হয়নি। তিনি ভিওএ-কে বলেন,“আমার মনে হয় না যে চীন সেই গতিকে পরিবর্তন করতে পারবে কারণ যখন চীনের সাথে আমাদের সম্পর্কের মধ্যে কিছু ভারসাম্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য [অর্থনৈতিক নিরাপত্তা] উপকরণ ব্যবহার করার কথা আসে, তখন সেই ব্যাপারে ইউরোপ জুড়ে একটি বিস্তৃত সমঝোতা রয়েছে।

দুশাতেল বলেন, যদিও ইউরোপ জুড়ে সবাই একমত যে ইইউকে তার স্বার্থ রক্ষার জন্য তার ক্ষমতা জোরদার করা উচিত, চীনের বিরুদ্ধে কীভাবে উদ্দেশ্য সাধনের সুবিধা তৈরি করা যায় সে সম্পর্কে জোটটিতে ঐক্যের অভাব রয়েছে।

কোন বড় পরিবর্তন নেই

ইইউ-চীন সম্পর্কের উন্নতির বিষয়ে শির সফরকে ফলপ্রসূ হিসাবে দেখানোতে বেইজিংয়ের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, কিছু বিশ্লেষক বলেন, এই সফরটি যে বেইজিং এবং ব্রাসেলসের মধ্যে গতিশীলতাকে নতুন কোনও আকার দিবে তাঁরা এরকম আশা করেন না।

দুশাতেল বলেন, যদিও চীনের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক পরিচালনার জন্য অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এজেন্ডা ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান দৃষ্টিভঙ্গি হিসেবে থাকবে, অনেক ইউরোপীয় দেশ বলে যে চীনের বিনিয়োগের পরিবেশ “খুব ঝুঁকিপূর্ণ” হয়ে উঠেছে এবং বেইজিং ইউরোপীয় সরকারগুলিকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছে যে রাশিয়ার সাথে তার অংশীদারিত্ব “এমন কিছু নয় যা ইউরোপীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে যায়”।