বাংলাদেশের জল সীমায় পৌঁছেছে এমভি আবদুল্লাহ

বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ

সোমালিয়ার জলদস্যুদের জিম্মি দশা থেকে মুক্তি পাওয়ার এক মাস পর, জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ২৩ নাবিক নিয়ে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমানায় পৌঁছেছে।

জাহাজটির মালিক প্রতিষ্ঠান কবির গ্রুপের মিডিয়া ফোকাল পার্সন মিজানুল ইসলাম শনিবার(১১ মে) জানান, বৃহস্পতিবার (৯ মে) বঙ্গোপসাগরের জলসীমায় পৌঁছেছে এমভি আব্দুল্লাহ; এখন বাংলাদেশ অভিমুখে এগিয়ে আসছে।

মিজানুল ইসলাম আরো বলেন, সোমবার (১৩ মে) বিকালের মধ্যে আবদুল্লাহ কুতুবদিয়া পৌঁছাতে পারে। সেখানে কিছু পণ্য খালাস করবে। এতে দুই দিন সময় লাগতে পারে। তারপর চট্টগ্রাম বন্দরে আসবে। চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে বাকি পণ্য খালাস করা হবে বলে জানান তিনি।

এমভি আবদুল্লাহ কুতুবদিয়া পৌঁছানোর পর নাবিকরা জাহাজে করেই চট্টগ্রামে পৌঁছাবে, নাকি আগেই জাহাজ থেকে নেমে চট্টগ্রাম যাবে, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান মিজানুল ইসলাম।

জাহাজ চলচাল পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা মেরিটাইম ট্রাফিকের ওয়েবসাইটের তথ্য মতে, বৃহস্পতিবার (৯ মে) রাতে এমভি আবদুল্লাহ শ্রীলংকার কাছাকাছি বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছিলো।

ভারতের পূর্ব উপকূলে জাহাজটির অবস্থান দেখানো হয় মেরিটাইম ট্রাফিকের ওয়েব ম্যাপে। মেরিটাইম ট্রাফিকের ওয়েবসাইটে এমভি আবদুল্লাহ চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছার সম্ভাব্য সময় দেখানো হচ্ছে ১৪ মে।

উল্লেখ্য, গত ১২ মার্চ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে দুবাই যাওয়ার পথে সোমালিয়া উপকূল থেকে ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূরে জলদস্যুদের কবলে পড়ে এমভি আব্দুল্লাহ। অস্ত্রের মুখে জাহাজ ও এর ২৩ নাবিককে জিম্মি করা হয়। এর ৩৩ দিন পর গত ১৩ এপ্রিল জলদস্যুরা জাহাজটি ছেড়ে চলে যায়। এর পর দুবাইয়ের উদ্দেশে রওনা হয় এটি।

জিম্মিদশা থেকে মুক্তি

সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ এবং জাহাজের ২৩ নাবিক মুক্তি পেয়েছেন বলে গত ১৪ এপ্রিল ভোর পৌনে ৪টায় নিশ্চিত করে জাহাজের মালিকপক্ষ কেএসআরএম।

কোম্পানির মিডিয়া অ্যাডভাইজর মিজানুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, “কিছুক্ষণ আগে আমরা এই সুসংবাদ পেয়েছি। ২৩ নাবিকসহ আমাদের জাহাজটি ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সকল নাবিক অক্ষত এবং সুস্থ আছেন, তাদের অক্ষত অবস্থায় আমরা ফেরত পাচ্ছি।”

জলদস্যুদের কত টাকা মুক্তিপণ দেয়া হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এই মুহূর্তে তা বলতে পারছি না। তবে তাদের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে জাহাজ ও নাবিকদের আমরা ফিরিয়ে আনতে পারছি।” তবে, সোমালিয়ার একটি সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছিলো, ৫০ লাখ ডলার দিয়ে ছাড়া পেয়েছে এমভি আব্দুল্লাহ।

প্রতিমন্ত্রী খালিদ যা বলেছিলেন

গত ১৪ এপ্রিল বাংলাদেশের নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক চাপ ও আলোচনার মাধ্যমে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাত থেকে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ও এর ২৩ নাবিক মুক্ত হয়েছেন।

রাজধানী ঢাকায় তার বাসভবনে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি আরো বলেছেন যে জলদস্যুদের মুক্তিপণ দেয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য তার জানা নেই।

“টাকা-পয়সা কিংবা মুক্তিপণের সঙ্গে আমাদের কোনো যোগসূত্র নেই। টাকা দিয়ে জাহাজ ছাড়িয়ে আনা হয়েছে, এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। অনেকেই বিভিন্ন ধরনের ছবি দেখাচ্ছেন; এ সব ছবির কোনো সত্যতা নেই। ছবিগুলো কোথা থেকে আসছে, কিভাবে আসছে, তা আমরা জানি না; বললেন প্রতিমন্ত্রী খালেদ।

তিনি আরো বলেন যে এমভি আব্দুল্লাহর মুক্তির বিষয়ে, ডিপার্টমেন্ট অফ শিপিং, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা, ইউরোপিয়ান নেভাল ফোর্স, ভারতীয় নৌবাহিনী, সোমালিয়ার পুলিশের সহযোগিতায় হয়েছে।

মুক্তিপণের বিষয়ে তিনি জানিয়েছিলেন, “আমরা তাদের সঙ্গে নেগোসিয়েশন করেছি দীর্ঘদিন। এখানে মুক্তিপণের কোনো বিষয় নেই।”

খালিদ মাহমুদ বলেন, জলদস্যুরা একেবারে সর্বশক্তিমান, ব্যাপারটা তো এমন নয়। তারা ভীষণ চাপের মধ্যে ছিলো, সোমালিয়ান পুলিশের বিরাট একটা ভূমিকা ছিলো। জলদস্যুদের কারণে একটি দেশের ইমেজ নষ্ট হচ্ছে, এটা সোমালিয়ান পুলিশ উপলব্ধি করছে। সেই উপলব্ধি থেকে তারা খুব সজাগ ছিলো এবং জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার জন্য তারা খুবই তৎপর ছিলো।