রাফার বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া অসম্ভব, বলছেন মানবাধিকার কর্মীরা

রাফায় ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি বাড়ি পরিদর্শন করছে ফিলিস্তিনিরা। (৮ মে ২০২৪)

গাজা ভূখণ্ডে কর্মরত মানবাধিকার কর্মী ও চিকিৎসা পেশাজীবীরা বুধবার সতর্ক করে দিয়ে বলেন, রাফায় পূর্ণ মাত্রায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযান বিপর্যয় ডেকে আনবে এবং বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপদে গণহারে সেখান থেকে সরিয়ে নেয়া সম্ভব না।

বোমা হামলা ও লড়াই থেকে বাঁচতে গাজার অন্যান্য অংশ থেকে বারবার সরে যাওয়ার পর প্রায় ১৩ লাখ ফিলিস্তিনি গাজার দক্ষিণাঞ্চলের রাফায় আশ্রয় নিয়েছে।

গাজায় ব্রিটিশ ত্রাণ সংস্থা অক্সফামের মুখপাত্র গাদা আলহাদ্দাদ বলেন, কোথায় যাবে লোকজন জানে না। পুরো আল মাওয়াসি ও মধ্যাঞ্চলীয় শহর দেইর আল-বালাহ জুড়ে তাঁবু খাটানো হচ্ছে।

বেশ কয়েকটি সহায়তা সংস্থার চিকিৎসক ও মানবাধিকারকর্মীদের সাথে ব্রিফিং কলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এমনকি ফুটপাতে, রাস্তার ধারে, রাস্তায়, কবরস্থানে, হাসপাতালের আঙিনায়, স্কুলের আঙিনায় তাঁবু খাটানো হচ্ছে।

সাত মাস ধরে চলা যুদ্ধের ফলে জনগণের অবস্থা এতটাই অবনতির দিকে গেছে যে তারা হেঁটে স্থানান্তরিত হওয়ার মতো যথেষ্ট সবল নয়। হেঁটে যাওয়া ছাড়া বেশিরভাগের ক্ষেত্রে আর কোনো উপায়ও নেই। এদের মধ্যে শিশুরাও রয়েছে, রয়েছে বোমায় পঙ্গুত্ব বরণ করা এবং অপুষ্টিতে ভোগা মানুষ।

সেভ দ্য চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনালের হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাডভোকেসি এন্ড পলিসি বিভাগের প্রধান আলেকজান্দ্রা সাইয়েহ সাংবাদিকদের বলেন, “শিশু ও বৃদ্ধরা এতই ক্ষুধার্ত যে হাঁটতে পারছে না- এসব মানুষ হেঁটে অন্য এলাকায় চলে যেতে পারবে না।”

ফরাসি দাতব্য সংস্থা মেৎসা ডু মন্ডের (ডক্টর্স অব দ্য ওয়ার্ল্ড) আন্তর্জাতিক কার্যক্রমের পরিচালক হেলেনা রাঞ্চাল পশ্চিম তীরের নাবলুস থেকে বলেন, ‘নিরাপদ অঞ্চলের ধারণাটি মিথ্যা।’ তিনি বলেন, গাজায় এখন আর কোনো নিরাপদ এলাকা নেই।

সোমবার থেকে ইসরায়েল রাফার পূর্বাঞ্চলে হামাস ব্যাটালিয়ানকে লক্ষ্যবস্তু করা শুরু করে এবং রাফা সীমান্ত ক্রসিংও নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়, যা কিনা গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর প্রধান প্রবেশপথ। এরপর থেকে এটি বন্ধ রয়েছে।

রবিবার হামাসের রকেট হামলায় চারজন ইসরায়েলি সেনা নিহত হওয়ার পর দ্বিতীয় ক্রসিং কেরেম শালোম বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। বুধবার ক্রসিংটি খুলে দেয়া হয়েছে বলে জানালেও জাতিসংঘ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণ পৌঁছায়নি।

মানবাধিকার কর্মীরা বলেন, তৃতীয় একটি ক্রসিং ইরেজ কেবল অল্প সময়ের জন্য খোলা হয়েছে।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্ট মঙ্গলবার তার সেনাদের বলেন, “রাফা অঞ্চল এবং পুরো গাজা ভূখন্ড থেকে হামাসকে নির্মূল না করা পর্যন্ত বা জিম্মিরা ফিরে না আসা পর্যন্ত রাফা অভিযান অব্যাহত থাকবে।”

যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৭ সালে হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে। ইসরাইল, মিশর, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাপানও হামাসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে।