ব্রাজিলের দক্ষিণাঞ্চলে রিও গ্রান্দে দো সুল প্রদেশে ভয়াবহ বন্যায় গত সাত দিনে কমপক্ষে ৭৫ জনের প্রাণহানি এবং আরও ১০৩ জন নিখোঁজ হয়েছে। রবিবার স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এমনটাই জানিয়েছে।
এই বন্যায় অন্তত ১৫৫ জন আহত হয়েছেন এবং ক্ষয়ক্ষতির ফলে ৮৮ হাজারের বেশি মানুষ বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। আনুমানিক ১৬ হাজার মানুষ স্কুল, ব্যায়ামাগার ও অন্যান্য অস্থায়ী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন।
গোটা প্রদেশে বন্যার ফলে একাধিক ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে। রাস্তা জলমগ্ন হয়ে রয়েছে এবং কয়েকটি সেতু ভেঙে পড়েছে। এ ছাড়াও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অপারেটররা জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ ও জনসংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। নাগরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার বক্তব্য অনুযায়ী, ৮ লক্ষের বেশি মানুষ পানির সংকটে ভুগছেন। পানি সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটেছে। এই সংস্থা পানি বিষয়ক কোম্পানি করসানের পরিসংখ্যান উল্লেখ করে এই তথ্য জানিয়েছে।
সামরিক দমকল কর্মীদের ফুটেজ অনুযায়ী, বেন্টো গনসালভেস পুরসভা এলাকার এক প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উদ্ধারকারী দল একজন বয়স্ক ব্যক্তিকে হেলিকপ্টারে তুলে নেয়। এই ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা ছিল আশঙ্কাজনক।
স্থানীয় ইউওএল সংবাদ নেটওয়ার্কের শেয়ার করা ভিডিও ফুটেজ অনুযায়ী, শনিবার সন্ধ্যায় কানোয়ার শহরের বাসিন্দারা কাদা-পানিতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন এবং মানুষকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য কর্মব্যস্ত নৌকাগুলিকে টানতে তারা মানববন্ধন তৈরি করেছিলেন।
রবিবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় গুয়াইবা নদীর জলসীমা ৫.৩৩ মিটারের (১৭.৫ ফুট) রেকর্ড স্তরে পৌঁছেছিল। ১৯৪১ সালের ঐতিহাসিক প্লাবনের সময় নদীর জলসীমা ৪.৭৬ মিটার স্পর্শ করেছিল। জলস্তরের সেই রেকর্ডকেও ছাপিয়ে গেছে এবারের বন্যা।
প্রাদেশিক গভর্নর এডুয়ার্ডো লেইটে রবিবার সকালে বলেন, “আমি পুনরায় জোর দিয়ে বলছি: যে ধরনের ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে আমরা পড়েছি তা নজিরবিহীন।” তিনি আগে বলেছিলেন, এই প্রদেশ পুনর্গঠনের জন্য “এক ধরনের ‘মার্শাল প্ল্যান’” দরকার হবে।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা ডা সিলভা রবিবার দ্বিতীয়বারের মতো রিও গ্রান্দে দো সুল সফর করেন। তার সঙ্গে ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হোসে মুসিও, অর্থমন্ত্রী ফার্নান্দো হাদ্দাদ ও পরিবেশমন্ত্রী মারিনা সিলভা-সহ অনেকে। বামপন্থী এই নেতা ও তার দল হেলিকপ্টার থেকে পোর্তো আলেগ্রের বন্যাপ্লাবিত সড়কগুলি পরিদর্শন করেন।
লুলা পরে সাংবাদিকদের বলেন, “দুর্যোগের পিছনে দৌড়নো আমাদের বন্ধ করতে হবে। আমাদের আগে থেকেই আঁচ করতে হবে কী ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে এবং সেই বুঝে আমাদের কাজ করতে হবে।”
ভ্যাটিকানে রবিবারের জনসমাবেশে পোপ ফ্রান্সিস বলেছেন, তিনি এই প্রদেশের মানুষের জন্য প্রার্থনা করছেন। তিনি বলেন, “ঈশ্বর মৃতদের শান্তি দিন, তাদের পরিবার ও যারা বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন তাদের স্বস্তি দিন।”