হামাসের সাথে যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তি চুক্তি হোক বা না হোক, রাফায় অভিযান চলবে, বলছেন নেতানিয়াহু

রাফাতে অবস্থিত আল-নাজ্জার হাসপাতালে ইসরায়েলি বোমা হামলায় নিহত স্বজনদের প্রতি ফিলিস্তিনিদের শোক প্রকাশ,২৯ এপ্রিল, ২০২৪।

মঙ্গলবার গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফা শহরে সামরিক অভিযান চালানোর অঙ্গীকার করে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন হামাসের সাথে যুদ্ধবিরতি বা গাজায় আটক জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে চুক্তি হোক বা না হোক তিনি অভিযান চালিয়ে যাবেন।

নেতানিয়াহু জিম্মিদের পরিবারের সাথে এক বৈঠকে এ কথা বলেন বলে তার কার্যালয় থেকে জানানো হয়। তারা জানায়, নেতানিয়াহু বলেছেন, “লক্ষ্য অর্জনের আগেই যুদ্ধ থামানোর প্রশ্নই আসে না। রাফাতে প্রবেশ করে সেখানকার হামাসের সমস্ত বাহিনী ধ্বংস করব। চুক্তি হউক বা না হউক সম্পূর্ন বিজয় অর্জন করবোই।”

হামাসকে সম্পূর্নরূপে হারানোর জন্য ইসরায়েলি বাহিনীর রাফায় প্রবেশ করা জরুরী বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

ওদিকে সোমবার হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মিশর ও কাতারকে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি এবং কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে ফোনে আলাপকালীন প্রেসিডেন্ট বাইডেন গাজায় আটক বাকি ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির ব্যাপারে যথাসাধ্য চেষ্টার আহ্বান জানান।

হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে, জিম্মি মুক্তির বিষয়টিকে “গাজায় তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি ও ত্রাণের একমাত্র বাধা” হিসেবে উল্লেখ করে।

গত কয়েক মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্র, মিশর ও কাতার যুদ্ধ বন্ধের জন্য আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। নতুন আলোচনা শুরু হলে কিছু প্রস্তাব দেয়া হয়, এতে প্রায় ছয় সপ্তাহ মেয়াদের যুদ্ধবিরতি, হামাসের হাতে আটক ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি, ইসরায়েলের হাতে আটক ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি এবং গাজায় ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের জন্য মানবিক সহায়তা বৃদ্ধির কথা রয়েছে।

সোমবার কায়রোতে মিশর ও কাতারের প্রতিনিধিদের সাথে হামাসের কর্মকর্তারা এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেন। আলোচনা চলাকালীন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন সৌদি আরব, জর্ডান ও ইসরায়েলের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনার জন্য এই অঞ্চল সফর করছেন।

এদিকে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সোমবার জানিয়েছেন, রাতভর ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজার দক্ষিণাঞ্চলের শহর রাফায় অন্তত ২২ জন নিহত হয়েছে।আরও তিনটি বাড়িও হামলার শিকার হয়েছে বলেও প্রত্যক্ষদর্শী ও চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

হামাসকে নির্মূলের লক্ষ্যে চালানো ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের কারণে গাজার বহু মানুষ অন্যান্য জায়গা থেকে পালিয়ে গাজা ও মিশরের সীমান্তবর্তী এই শহরটিতে আশ্রয় নিয়েছে।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী সোমবার জানিয়েছে, লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে হিজবুল্লাহর সদস্যদের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়েছে তাদের বাহিনী।

ইসরায়েলি হিসাব অনুযায়ী, গত ৭ অক্টোবরে ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে হামাস ১২০০ জনকে হত্যা করে এবং প্রায় ২৫০ জন জিম্মিকে আটক করে।

অপরদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে গাজায় ইসরাইলের পাল্টা হামলায় ৩৪ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের দুই-তৃতীয়াংশই নারী ও শিশু।

যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৭ সালে হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে। ইসরাইল, মিশর, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাপানও হামাসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে।

এই প্রতিবেদনের কিছু তথ্য এপি, এ এফপি এবং রয়টার্স থেকে নেওয়া হয়েছে।