যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন সোমবার বলেছেন তিনি আশাবাদী যে, জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য ইসরায়েলি প্রস্তাব হামাস গ্রহণ করবে। ব্লিংকেন ইসরায়েলের প্রস্তাবকে “অসাধারণভাবে উদার” বলে বর্ণনা করেন।
“এই মুহূর্তে, হামাসই হচ্ছে একমাত্র বাধা, যারা গাজার জনগণ আর একটি যুদ্ধবিরতির মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে,” ব্লিংকেন সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে বলেন। তিনি ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে সাত-মাসব্যাপী যুদ্ধ থামানোর লক্ষ্যে আরও আলোচনার জন্য মধ্যপ্রাচ্যে এসেছেন।
হামাসের দিকে ইঙ্গিত করে ব্লিংকেন বলেন, “তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে – এবং তাদের খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।” গত বছর ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েল আক্রমণ করে প্রায় ১,২০০ মানুষকে হত্যা এবং ২৫০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যাবার পর ইসরায়েল যুদ্ধ ঘোষণা করে।
“আমি আশাবাদী তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে,” ব্লিংকেন বলেন।
হামাসের একটি প্রতিনিধিদলের সোমবার মিশরে পৌঁছানোর কথা। কাতারের মধ্যস্থতায় আলোচনা চলছে যে, কীভাবে ইসরায়েলের আক্রমণ থামানো এবং জিম্মিদের মুক্ত করা যায়।
ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় ৩৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে যাদের বেশির ভাগ নারী ও শিশু বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ইসরায়েল দাবী করে নিহতদের মধ্যে কয়েক হাজার হামাস যোদ্ধা আছে যাদের ইসরায়েল হত্যা করেছে।
সৌদি আরব-ইসরায়েল সম্পর্ক
এর আগে ব্লিংকেন সোমবার রিয়াদে বলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে নিরাপত্তাগত সমঝোতা প্রায় সম্পন্ন করে ফেলেছে যুক্তরাষ্ট্র, তবে সৌদি আরব যদি ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করে তাহলে এই চুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হবে।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম বা ডব্লিউইএফ-এ উপস্থিত শ্রোতাদের ব্লিংকেন বলেন, “আমাদের নিজস্ব চুক্তির নিরিখে সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে যে কাজটি করে আসছে তা আমার মনে হয় সম্পন্ন হওয়ার মুখে সম্ভবত।”
পাশাপাশি তিনি যোগ করেন, ইসরায়েল ও সৌদির সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে গত মাসে দুই দেশ নিবিড়ভাবে একসঙ্গে কাজ করেছে।
ব্লিংকেন জানিয়েছেন, গত বছর ১০ অক্টোবরে তার সৌদি আরব ও ইসরায়েলে যাওয়ার কথা ছিল। নির্দিষ্টভাবে ফিলিস্তিনের পক্ষ থেকে স্বাভাবিকীকরণ চুক্তিই ছিল মূল লক্ষ্য কারণ সেটা একান্ত জরুরি বিষয়। তবে, ৭ অক্টোবরে ইসরায়েলের উপর হামাসের সন্ত্রাসী হামলার কারণে তা হয়ে ওঠনি।
ব্লিংকেন বলেন, “স্বাভাবিকীকরণ প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে দুটি জিনিস দরকার: গাজায় শান্তি এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র নির্মাণের ভরসাযোগ্য পথ।”
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলেছেন, ইসরায়েলের জন্য নিরাপত্তার নিশ্চয়তাসহ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র নির্মাণের উপায় বের করা দীর্ঘমেয়াদি শান্তি, মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তা ও এই অঞ্চলে ইসরায়েলের যোগদান নিশ্চিত করার চাবিকাঠি।
জর্ডান ও ইসরায়েলে সফরের আগে সোমবার বিকালে ব্লিংকেন সৌদি আরবের যুবরাজ ও প্রধানমন্ত্রী মহম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠক করছেন। ইসরায়েলে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও অন্যান্য সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে ব্লিংকেনের।
বাইডেন প্রশাসন একটি সম্ভাব্য সমঝোতা-চুক্তি বিষয়ে নিরন্তর কাজ করছে যা সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে পারে। যদিও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকদের মতে, এর সম্ভাবনা খুবই কম।
দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান
গত সপ্তাহে ওয়াইট হাউস জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা জেক সালিভান বলেছিলেন, তিনি শীঘ্র সৌদি আরবে ফেরার পরিকল্পনা করছেন। তার কর্মসূচিতে রয়েছে ইসরায়েল ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে কোনও চুক্তিতে পৌঁছনো যায় কিনা তা নিয়ে সৌদির কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা।
হাড়ে চোট পাওয়ার কারণে সালিভান এর আগে মধ্যপ্রাচ্যে তার সফর বাতিল করেছিলেন।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান সূত্র ও গাজা নিয়ন্ত্রণ করতে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রত্যাবর্তনকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। যদিও উভয় দাবিকে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী ব্যাপকভাবে সমর্থন করেছে।
সৌদিরা পূর্বশর্ত হিসেবে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে ইসরায়েলের অঙ্গীকার দেখার দাবি করেছে।
রিয়াদে সোমবার সকালে গালফ কোঅপারশন কাউন্সিল এক বৈঠকে ব্লিংকেন বলেন, গাজার মানবিক সংকট নিরাময়ের শ্রেষ্ঠতম পথ হল যুদ্ধবিরতি।
ব্লিংকেন ২৮ এপ্রিল থেকে ১ মে পর্যন্ত রিয়াদ, আম্মান ও তেল আবিবে সফর করছেন। প্রায় ছয় মাস আগে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে এটা ব্লিংকেনের সপ্তম কূটনৈতিক সফর।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার এক বিবৃতিতে বলেছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতিকে নিশ্চিত করা ও জিম্মিদের মুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগের দিকে নজর দেবেন ব্লিংকেন এবং সেই সঙ্গে গাজা ছিটমহলে মানবিক ত্রাণ সরবরাহ যাতে অব্যাহত থাকে বা বাড়ানো যায়, সে দিকে লক্ষ্য থাকবে তার।