ইরাকঃ সমকামিতা বিরোধী আইনের জন্য তোপের মুখে বাগদাদ

ইরাকি সংসদে ভোট দেয়ার দৃশ্য। ফাইল ফটোঃ ১১ জুন, ২০২৩।

সমকামিতা এবং লিঙ্গ রূপান্তরকে জেল-যোগ্য অপরাধ করে ইরাকি সংসদে পাস হওয়া আইনের তীব্র সমালোচনা করেছে মানবাধিকার গোষ্ঠী এবং কূটনীতিকরা।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এক বিবৃতিতে বলেছেন, শনিবার পাস হওয়া আইন “ইরাকি সমাজে যারা সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে, তাদেরকেই হুমকির মুখে ফেলবে।” তিনি বলেন, এই আইন “ব্যবহার করে বাক স্বাধীনতা” ব্যাহত করা যাবে।

মিলার সতর্ক করে দেন যে, এই আইনের ফলে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যেতে পারে।

“আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক জোটগুলো ইতোমধ্যেই ইঙ্গিত দিয়েছে যে এ’ধরনের বৈষম্য দেশের ব্যবসা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে,” বিবৃতিতে বলা হয়।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এই আইনকে “বিপজ্জনক এবং উদ্বেগজনক” বলে বর্ণনা করেন।

রক্ষণশীল ইরাকি সমাজে সমকামিতাযদিও সব সময় একটি ‘ট্যাবু’ বিষয়, এবং রাজনৈতিক নেতারা মাঝে-মধ্যে সমকাম-বিরোধী প্রচারণা চালান, এর আগে ইরাকে সমকামীতাকে ফৌজদারি অপরাধ করে আইন করা হয় নি।

দেশের বিদ্যমান বেশ্যাবৃত্তি-বিরোধী আইনের সংশোধনীর অংশ হিসেবে এই আইনটি অনেকের নজর এড়িয়ে শনিবার পাস করা হয়। সম-লিঙ্গ সম্পর্কের জন্য এই আইনে ১০ থেকে ১৫ বছরের জেলের বিধান রাখা হয়েছে। আর যারা লিঙ্গ পরিবর্তনের জন্য অস্ত্রপচার করবে বা যারা অস্ত্রপচারের মাধ্যমে লিঙ্গ পরিবর্তন করবে, তাদের জন্য এক থেকে তিন বছরের জেলের বিধান আছে।

যে সব সংগঠন “বিকৃত যৌনতা” প্রচার করবে, এই আইনের অধীনে তাদের নিষিদ্ধ করা হবে এবং অন্তত সাত বছরের জেল ও এক কোটি দিনার (৭,৬০০ ইউএস ডলার) জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

ইরাকি কর্মকর্তারা বলেছেন এই আইন ইরাকের সামাজিক মূল্যবোধ সমুন্নত রাখবে, এবং সমালোচনাকে তারা পশ্চিমা হস্তক্ষেপ বলে বর্ণনা করেছেন।

ইরাকি সংসদের ভারপ্রাপ্ত স্পিকার মহসেন আল-মান্দালাউই এক বিবৃতিতে বলেন, সংসদের ভোট ছিল “সমাজের মূল্যবোধের কাঠামোকে পোক্ত করার জন্য” এবং “সমকামিতা আর নৈতিক বিচ্যুতির ডাক থেকে আমাদের সন্তানদের রক্ষা করার জন্য” প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।

মানবাধিকার গোষ্ঠী হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর এলজিবিটি রাইটস প্রোগ্রামের গবেষক রাশা ইউনেস বলেন, এই আইন পাস করে সমকামিদের “অধিকার লঙ্ঘনে ইরাকের জঘন্য রেকর্ডকে অনুমোদন করা হয়েছে।”

রাষ্ট্রদূত বহিষ্কারের দাবী

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ২০২২ সালের এক রিপোর্টে ইরাকের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে সমকামি এবং রূপান্তরকামি (ট্রান্সজেন্ডার) মানুষ ধর্ষণ, অত্যাচার এবং হত্যা করার অভিযোগ আনে। রিপোর্টে আরও বলা হয়, ইরাকি সরকার অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করতে ব্যর্থ হয়েছে।

ইরাকের এক দল সংসদ সদস্য রবিবার জানায়, তারা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করার দাবীতে প্রচারণা শুরু করেছে। তারা বলেছেন, রাষ্ট্রদূত আলিনা রোমানভস্কি আইনের সমালোচনা করে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছেন।

ইরাকিরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানায়।

বাগদাদবাসী আহমেদ মানসুর বলেন, তিনি আইনকে সমর্থন করেন, “যেহেতু সেটায় কুরান এবং ইসলাম ধর্মের অনুসরণ করে বিষয়টিকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।”

তবে আরেকজন বাগদাদবাসী হুধায়ফাহ আলী বলেন তিনি আইনের বিপক্ষে, “কারণ ইরাকে অনেক গোষ্ঠী এবং ধর্ম রয়েছে।”

“ইরাক গণতান্ত্রিক দেশ, এখানে কীভাবে গণতন্ত্র এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতার বিরুদ্ধে আইন পাস হয়?” তিনি বলেন।