যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, সমুদ্রপথে গাজায় ত্রাণ পৌঁছাতে সহায়তা করবে জাতিসংঘ সংস্থা

ফাইল – গাজা ভূখন্ডের রাফায় ফিলিস্তিনিরা খাবারের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। ২১ ডিসেম্বর, ২০২৩।

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা শুক্রবার বলেছেন, গাজার ক্ষুধার্ত বেসামরিক নাগরিকদের ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেবার জন্য জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি সম্মত হয়েছে। সমুদ্রপথে এই ত্রাণ পৌঁছে দেবার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী জেটির কাজ সম্পন্ন করলেই তারা কাজ শুরু করবে।

ইসরায়েলের বাধার কারণে স্থলপথে গাজায় খাদ্য এবং অন্যান্য অতি প্রয়োজনীয় পণ্যসমূহের ত্রাণ বিতরণে বিভিন্ন সাহায্যগোষ্ঠীর অসহযোগিতা সৃষ্টি হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের এই সংস্থাটির সম্পৃক্ততা যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনায় সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলেই আশা করা হচ্ছে।

১ এপ্রিল ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের সাতজন ত্রাণকর্মী ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহত হলে আন্তর্জাতিক সমালোচনা তীব্রতর হয়। মানবিক সহায়তা কর্মীদের নিরাপত্তা প্রদানে ব্যর্থতা ও স্থল সীমান্তে পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণ অনুমোদন না করার জন্যও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়।

এদিকে হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসরায়েলকে সমর্থনে, গাজায় মানবিক সংকট নিয়ে সমালোচনার মুখে রয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী স্থলপথের বিকল্প হিসাবে অস্থায়ী জেটি এবং জাহাজ চলাচলের পথ নির্মাণ করবেন বলে ৮ মার্চ ঘোষনা দেন তিনি।

ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে নিশ্চিত করে যে, তারা সমুদ্র পথে গাজায় মানবিক সহায়তা সরবরাহে ডব্লিউএফপির সাথে অংশীদার হতে যাচ্ছে।

সংস্থাটি ফিলিস্তিনের বেসামরিক নাগরিকদের কাছে “স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও পক্ষপাতহীনভাবে” ত্রাণ পৌঁছানো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ডব্লিউএফপির কর্মকর্তারা কাজ করছেন বলে জানিয়েছে।

যদিও এ বিষয়ে ডব্লিউএফপির কাছ থেকে কোনো তাত্ক্ষণিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ওয়ার্ল্ড কিচেনের খাদ্য সরবরাহকারী ৭ জন ত্রাণকর্মী নিহত হওয়ার পর চাপের মুখে ইসরায়েল গাজায় আরও সীমান্ত ক্রসিং খুলে দেওয়ার এবং ত্রাণ সরবরাহ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের হামলায় প্রায় ১২০০ মানুষ নিহত হয়। আরও প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করা হয়। এর প্রতিউত্তরে, হামাসকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের হিসেবে, প্রায় ৩৩,৮০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হবার তথ্য পাওয়া যায়। ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের মধ্যে জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবিক সহায়তা কর্মীও রয়েছেন।

আন্তর্জাতিক কর্মকর্তারা বলছেন, গাজার উত্তরাঞ্চলে প্রায় দুর্ভিক্ষ আসন্ন । সেখানে প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ ভয়াবহ ক্ষুধার সম্মুখীন।

বেশ কয়েকটি সেনা জাহাজ এবং মিলিটারি সিলিফ্ট কমান্ড জাহাজ ইতোমধ্যে ভূমধ্যসাগরে রয়েছে এবং প্ল্যাটফর্ম ও জেটি প্রস্তুত ও নির্মাণের জন্য কাজ শুরু করছে। এই মিশনে প্রায় এক হাজারের মতো আমেরিকান সেনা অংশ নিলেও পেন্টাগনের প্রেস সেক্রেটারি মেজর জেনারেল প্যাট রাইডার চলতি সপ্তাহে সাংবাদিকদের বলেছেন, চলতি মাসের শেষে বা মে মাসের শুরুতে এই ত্রাণ সরবরাহের নতুন কর্মসুচী শুরু করতে যাচ্ছেন তারা। তবে হোয়াইট হাউস স্পষ্ট করে বলেছে, গাজার মাটিতে কোনও আমেরিকান সেনা অবস্থান করবে না। তাই তারা জেটির নির্মাণ করার সময় থাকলেও তীরে ত্রাণ পরিবহন করবে না।

যুক্ত্ররাষ্ট্রের নৌবাহিনীর জাহাজ ও সেনাবাহিনীর জাহাজ জেটি নির্মানকালীন তাদের সেনাদের নিরাপত্তা দেবে।