কাতারের আমির বাংলাদেশ সফরে আসছেন সোমবার

কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি।

কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানিকে স্বাগত জানাতে সব প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ। আগামী সোমবার (২২ এপ্রিল) দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে পৌঁছানোর কথা রয়েছে তার। সফরকালে, বাণিজ্য-বিনিয়োগসহ একাধিক ক্ষেত্রে সম্পর্ক জোরদারে, ডজন খানেক স্মারক ও চুক্তি সই হতে পারে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ সরকার এক গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে দুই দিনের বাংলাদেশ সফরে আসা কাতারের আমিরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা করেছে। সফর উপলক্ষে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতারের আমিরের ছবি দিয়ে ঢাকার কয়েকটি সড়ক সাজানো হয়েছে।

প্রায় ১৯ বছর পর, কাতার থেকে এমন উচ্চ পর্যায়ের সফর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর আগে, ২০০৫ সালের এপ্রিলে কাতারের তৎকালীন আমির শেখ হামাদ বিন খলিফা আল সানি বাংলাদেশ সফর করেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বন্দী বিনিময়, দ্বৈত কর পরিহার, জনশক্তি রপ্তানি, ধর্ম ও উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বিষয়ে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এই সফর দুই দেশের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব পূর্ণ সম্পর্ক আরো জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, দ্বিপক্ষীয় ক্ষেত্রে সহযোগিতা ছাড়াও, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকট ও বৈশ্বিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে। আলোচনায়, বাংলাদেশ তার অবস্থান তুলে ধরবে।

গত মাসে তুরস্কে আন্তালিয়া কূটনীতি ফোরামে অংশ নেয়ার সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ গাজায় চলমান গণহত্যা বন্ধে সম্মিলিত প্রচেষ্টার ওপর জোর দিয়েছিলেন। মানবতাবিরোধী অপরাধ ও জাতিগত নির্মূলের জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেন তিনি। সেই ফোরামে তিনি বলেছিলেন, “বাংলাদেশ শান্তির পক্ষে, যুদ্ধের পক্ষে নয়।”

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রপতি মো, সাহাবুদ্দিন কাতারের আমিরকে অভ্যর্থনা জানাবেন। সোমবার বিকালে একটি বিশেষ ফ্লাইটে আমিরের ঢাকা পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানিকে তার কার্যালয়ে অভ্যর্থনা জানাবেন। সেখানে তাদের মধ্যে বৈঠক হবে; এরপর আরো একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে।

দুই নেতা সহযোগিতার দলিল সই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন এবং যৌথ সংবাদ সম্মেলনে যোগ দেবেন।সেখানে পরিদর্শন বইয়ে সই শেষে, কাতারের আমির মঙ্গলবার বিকালে বঙ্গভবনে যাবেন এবং রাষ্ট্রপতি তাকে অভ্যর্থনা জানাবেন।

রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বঙ্গভবনের দরবার হলে কাতারের আমিরের সম্মানে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করবেন।পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ কাতারের আমিরের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।

কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি’র নামে রাজধানীর একটি সড়ক ও একটি পার্কের নামকরণ করা হবে। ওই দিন বিকেলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আওতাধীন মিরপুরের কালশী এলাকায় পার্ক এবং মিরপুর ইসিবি চত্বর থেকে কালশী ফ্লাইওভার পর্যন্ত সড়ক উদ্বোধন করবেন তিনি।

এছাড়া, বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের সদস্যদের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করবেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় একটি বিশেষ ফ্লাইটে তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করবেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানাবেন।

গত বছরের মার্চে, কাতারের রাজধানী দোহায় স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জাতিসংঘ সম্মেলনের (এলডিসি-৫) ফাঁকে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি’র সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

উল্লেখ্য, ১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনের পর, সেই বছরের ৪ মার্চ কাতার বাংলাদেশকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৭৫ সালের ২৫ জুন দোহায় বাংলাদেশ তার কূটনৈতিক মিশন চালু করে। ১৯৮২ সালে ঢাকায় কূটনৈতিক মিশন প্রতিষ্ঠা করে কাতার।